অনেকের মাঝেই ধারণা ছিল, গ্রীষ্মে খরতাপে করোনা ভাইরাস নির্মূল হতে পারে। এর মধ্যে অনেকেই না বুঝে বিভিন্ন পরিসংখ্যান হাজির করে দেখাতে চাইছিলেন সূর্যতাপে করোনা ভাইরাস নির্মূল হতে পারে। যেগুলো সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষেত্রে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ও পরিসংখ্যান এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন হতে বাধা দিয়েছে। যদিও এসব তথ্যের কোনটাই বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ ছিল না। এরই মাঝে করোনা ভাইরাস কি সত্যি উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হয় কিনা তা নিয়ে নিরলস গবেষণা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এক দল গবেষক জানিয়েছেন, উত্তর গোলার্ধে উচ্চ তামপাত্রা নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ বা কমাতে পারবে না। সোমবার (১৮ মে) সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গত কয়েক মাসে ভাইরাসটির সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক বিচার করে বেশকিছু গবেষণা হয়েছে। অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গতি ধীর হয়ে যায়।
তবে এ সবগুলো গবেষণারই প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন করোনাভাইরাসের সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক প্রকৃত অর্থে যে কী তা এখনও শতভাগ নিশ্চিত নন কোনো বিজ্ঞানী। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা গবেষণা সে সম্পর্ক একেবারে বাতিল করে দিচ্ছে না। তবে তারা বলেছেন, সে সম্পর্ক একেবারেই ‘সামান্য’। তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আর্দ্র আবহাওয়াতেও ব্যাপকহারে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এমনকি গ্রীষ্মের উত্তপ্ত আবহাওয়া মহামারি রুখতে সক্ষম নয়।
আবহাওয়া, বিশেষ করে শীতকাল ফ্লু বা করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভূমিকা রাখে। তবে গবেষকরা লিখেছেন, এই সংক্রমণ কতটা মারাত্মক হবে তা নির্ভর করে একটি জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর।
প্রিন্সটন এনভায়রনমেন্টাল ইনস্টিটিউটের গবেষক র্যাশেল বাকের বলেন, ব্রাজিল, ইকুয়েডর বা অস্ট্রেলিয়ার এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গরম আবহাওয়া করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে পারেনি। শক্ত পদক্ষেপ বা টিকা ছাড়া নতুন করোনাভাইরাস রোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে। গবেষণা পত্রটির সহ-লেখক অধ্যাপক ব্রায়ান গ্রেনফেল বলেছেন, আপাতত যা মনে হচ্ছে তাতে ঋতুভিত্তিক (সিজনাল) ভাইরাসের সঙ্গে নতুন করোনাভাইরাসের মিল রয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে এটি স্থায়ী শীতকালীন ভাইরাসে পরিণত হতে যাচ্ছে।