বরিশালের বাকেরগঞ্জে মাদ্রাসার জমি ও কমিটি নিয়ে বিরোধের জ্বের ধরে সুপারকে প্রকাশ্যে মারধর ও মাথায় মল ঢেলে লাঞ্চিত করার ঘটনার সাথে জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। রোববার (১৩ মে) দিবাগত রাতে মিনজু ও বাদল নামে ওই ২ জনকে বাকেরগঞ্জ থেকেই গ্রেফতার করা হয়। বাকীদের গ্রেফতারে রাতভর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মিনজু (৪৫) বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১২ নং রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামের মৃত মোঃ হাসেম মুসল্লীর ছেলে এবং দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামী।
অপরদিকে বেল্লাল (২৫) বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নূর মোহাম্মদের ছেলে, তাকে ফেইজবুকে প্রকাশিত লাঞ্চিত করার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়। এরআগে শুক্রবার (১১ মে) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে কাঠালিয়া গ্রামের কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সুপার মাওঃ মোঃ আবু হানিফকে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করা হয় এবং লাঞ্চনার ভিডিও ধারন করা হয়। ঘটনার পর লাঞ্চনার শিকার মাদ্রাসার সুপার ও তার পরিবার লোকলজ্জায় বিষয়টি গোপন রাখতে চায়। তবে রোববার (১৩ মে) লাঞ্চনার ঘটনার একটি ভিডিও ধারনকারীদের মাধ্যমে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পরলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।
এরপরপরই মাদ্রাসা সুপার মাওঃ মোঃ আবু হানিফ বাদী হয়ে নিজের ছোটভাই জাকারিয়া হোসেন জাকিরসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী বলেন, কাঠালিয়া গ্রামে দারুল উলুম দীনিয়া আরাবিয়া কমপ্লেক্স ও এতিমখানা নির্মানের জন্য ২০০৯ সালে জায়গা ক্রয় করা হয়। জামায়াতপন্থী (লাঞ্চিতকারী) কিছু ব্যক্তি ওই জায়গা দখল করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার পায়তারা করলে ২০১৪ সালে একটি মামলা হয়। অপরদিকে কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসায় কমিটির সভাপতি হিসেবে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভোকেটি এইচএম মজিবুর রহমান নির্বাচিত হন।
কিন্তু লাঞ্চনাকারীদের মধ্যে থাকা খন্দকার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। মামলার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এসব কারনে লাঞ্চনাকারীরা জোটবদ্ধ হয়ে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন সময়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে আসছে। চাঁদা দিতে অসীকৃতি জানাতে তারা আমাকে নানান ধরনের হুমকি ও মাদ্রাসা থেকে বিতারিত করার চেষ্টা করে। বাদী বলেন, ঘটনার দিন ১১ মে সকাল ৭ টায় হাটতে বের হই। বাড়ির ৫ শত গজ দূরে হাটতে গেলে মামলার নামধারী আসামী ও অজ্ঞাতনামাসহ ১৪/১৫ জন আমার পথরোধ করে চাঁদার ৫ লাখ টাকা দাবী করে এবং দিতে অসীকৃতি জানালে মারধর করে। একপর্যায়ে মাটির হাড়ির ভেতরে থাকা মানুষের পরিত্যক্ত মাল মাথায় ও গায়ে ঢেলে দেয়। তিনি বলেন, মেল ঢেলে দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বারাবারি না করার জন্য হুমকি দিলে লজ্জায় কোনভাবে বাড়িতে চলে যাই।
ভিকটিমের ছেলে মহিবুল্লাহ জানান, লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে বিষয়টি যাতে কেউ না জানে সেজন্য স্থানীয় ২/১ জন গন্যমান্য ব্যক্তিতে জানিয়ে চুপ থাকি। কিন্তু যারা বাবাকে লাঞ্চিত করেছে তাদের মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে গেলে সবাই তা দেখে ফোন দিতে থাকে। এরপরই মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেই আমরা। মামলা দায়েরের পর পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় মিনজু ও বাদল নামে ২ জনকে গ্রেফতার করে বলে জানিয়েছেন বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আঃ হক। তিনি জানান, মাদ্রাসার সুপারের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। জমি ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে বিরোধের জ্বের ধরে শরীরে মল ঢেলে দেয়ার মতো কর্মকান্ড চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে। ফেইসবুকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে ও প্রাথমিক তদন্তে সুপারকে লাঞ্চনা করার প্রমান পাওয়া গেছে। পাশাপাশি চাঁদাদাবী ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঘটনার পর ২ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারমধ্যে একজন এজাহারনামীয় এবং অপরজনেক ফেইসবুকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষুব্দ রয়েছেন। খবর পেয়ে রোববার সারাদিন আলেম সমাজসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ সুপারের কাছে গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয়রাই দোষীদের ধরিয়ে দিতে পুলিশকে সহায়তা করছে। রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ বশির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যারা এ কান্ড ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে জামায়াতপন্থী লোকজন রয়েছে। যাদেরকে সবাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। আমরা চাই পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক।