ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা (MOKHA)’। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিন্মচাপ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ঘূর্ণাবর্তের রূপ নেবে। তারপর ৬ মে-র পর শক্তি সঞ্চয় করে সেটি বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকুলে আছড়ে পড়বে। গত মঙ্গলবার (২ মে) এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
ভারতের বিশেষায়িত আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র (AviGmGgwm) জানিয়েছে, আগামী ৬ মের দিকে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। এটি ঘণীভ‚ত হয়ে ৯ মের দিকে নিন্মচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আন্দামান দ্বীপের কাছে ১০ মের দিকে গভীর নিন্মচাপ এবং ১১মের দিকে রূপ নিতে পারে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে।
নিন্মচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে নাম হবে ‘মোখা (MOKHA)’। নামটি দিয়েছে ইয়েমেন। এক সময় মোখা ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর ছিল। এই স্থানটি কফির জন্য বিখ্যাত। কালক্রমে এখানকার কফির নাম হয়েছে মোখা কফি। ইংরেজিতে শব্দটি Mocha লেখা হলেও এর উচ্চারণ হচ্ছে Mokha।
এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জানিয়েছে, দেশে মে মাসে সাগরে দুইটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে আগামী সপ্তাহেই একটি ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা রয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মে মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে ১-৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি,তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং ৩-৫ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা, মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। পাশাপাশি চলতি মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ক্কসে.) এবং দেশের অন্যত্র ১-২টি মৃদু (৩৬-৩৮ক্ক সে.), মাঝারি (৩৮-৪০ক্ক সে.) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে এ মাসে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যা পরবর্তী সময়ে ঘনীভ‚ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়মিত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে এখনই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আশঙ্কায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে উপকুলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ও বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’মোকাবিলায় ভোলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী জানান, জেলার চরাঞ্চলের মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে সরবরাহের জন্য শুকনো খাবার রেখেছে জেলা প্রশাসন। হাসপাতালগুলোকে অ্যাম্বুলেন্স ও ওষুধ প্রস্তুত রাখাতে বলা হয়েছে।
দৌলতখানে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় ৮৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবনগুলোও প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদি পশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিসিপি) কর্মীরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মানুষের জানমাল রক্ষায় কাজ করবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কসংকেত পেলে চরাঞ্চলের বসবাসকারীদের সরিয়ে আনা হবে। তবে একটি চরে সাইক্লোন শেল্টার আছে। উপজেলার সব-কটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার কাজ চলছে। এছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় মাঠে থাকবে তারা। উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের কয়েকটি দল গঠন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ করবে।
অপরদিকে কলাপাড়া উপজেলার ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘুর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলার জন্য নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির কর্মকর্তাদের সম্বনয়ে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সহ স্থাণীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, পরপর তিন বছর ৩টি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী থেকেছে উপকুল। ২০১৯ সালের ২ মে উপক‚লে আছড়ে পড়েছিল সাইক্লোন ‘ফণী’। সেই রেশ কাটতে না কাটতে ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ এবং ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ে উপক‚লে।