নভেল করোনাভাইরাসের উত্থানের ফলে মানুষ একরকম বন্দি জীবন যাপন করছে। যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের স্পর্শও হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ এমন ভয়ংকর সংকটকালে আপনজনের একটু স্পর্শই মানুষকে দিতে পারত অপার শক্তি ও স্বস্তি।
মনোবিদ স্টিভ কোলের মতে, যৌথতার সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা সংকেত হচ্ছে স্পর্শ। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ৩৫ মিলিয়ন মানুষ একাকী বাস করে। সেখানে সামাজিক দূরত্বের বিধির কারণে একজন মানুষকে অন্য একজনের সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। যে কারণে শারীরিক স্পর্শের বদলে ভার্চুয়াল যোগাযোগগুলোর ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে অনেকে।
বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে কী হতে পারে, তা উল্লেখ করে কোল বলেন, যখন আমরা একাকী ও বিচ্ছিন্ন থাকি তখন আমাদের মস্তিষ্ক আকস্মিকভাবে নিজেদের অনিরাপদ বলয়ের ভেতর আবিষ্কার করে। হঠাৎ করেই আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সামাজিক দুনিয়ায় এমন অনেক কিছু আছে যা আমাদের পরিচালিত করে এটা হিসাব করতে আমরা নিরাপদ নাকি অনিরাপদ। আপনি শারীরিক স্পর্শ ও স্নেহময় স্পর্শকে বিবেচনা করতে পারেন মৌলিক নিদর্শন হিসেবে, যা বলবে কেউ একজন আছে যে আপনাকে নিয়ে চিন্তিত।
করোনাভাইরাসের এ মহামারীকালে মানুষের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা শরীরের বিভিন্ন হরমোনকেও বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন কর্টিসল ও অ্যাড্রিনালিন উদ্বিগ্নতার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। সময়ের সঙ্গে এ স্ট্রেস হরমোনগুলো জমে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগজনিত সমস্যা এবং উদ্বিগ্নতার মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।
নিরাপত্তাবোধের অনুভূতি আসতে পারে হাত ধরা কিংবা জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে। স্পর্শের ফলে শারীরিক ও জৈবরাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা কিনা মানুষের উদ্বেগকে প্রতিহত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞ টিফানি ফিল্ডের মতে, স্নেহময় স্পর্শের প্রতিক্রিয়া স্নায়ু কোষ নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিম প্রকাশ করে, কর্টিসল কমে যায় । এছাড়া ভালোবাসাময় স্পর্শ আপনাকে ভালো ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে এবং ভালো ঘুম আপনার শরীরের নিউরোট্রান্সমিটার উপাদান পির নির্গমনকে হ্রাস করে। একাধিক রিপোর্ট বলছে, কোনো উদ্বেগজনক কাজের আগে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরলে কর্টিসল কমে যায় এবং অক্সিটোসিন বেড়ে যায়। যা কিনা মানুষকে অনেক বেশি উষ্ণ ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
কীভাবে ত্বক স্পর্শ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। হালকা স্পর্শ বা ধাক্কা আপনাকে উত্তেজিত করতে পারে এবং হার্ট রেট বাড়িয়ে দেয়। সামান্য জোরের সঙ্গে স্নেহময় স্পর্শ উদ্বিগ্নতাকে হ্রাস করতে পারে। তবে এ ধরনের স্পর্শ অন্যদের কাছ থেকে আসতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এটি নিজে নিজে করা সম্ভব। যা কিনা যোগব্যায়াম ও শরীরচর্চার মাধ্যমে করা সম্ভব।
কিন্তু শরীরচর্চা সবসময় উদ্বিগ্নতা প্রশমিত নাও করতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী বলেন, সামাজিকতা আমাদের জিনেই উপস্থিত থাকে। স্পর্শও তার অংশ। যার মাধ্যমে ভালোবাসা, যত্ন নেয়ার বিষয়গুলো মূলব্যান হয়ে ওঠে। মানুষের স্পর্শ স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত।