এপ্রিল ২১, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আদালতপাড়া জাতীয় ঢাকা প্রচ্ছদ

খালেদার মামলায় আদালতে হট্টগোল, উত্তেজনা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। মামলার শুনানিতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোল ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং তীর্যক পার্শ্ব মন্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সাবমিশনে (বক্তব্য) সাময়িক ছেদ পড়ে।

তবে আদালতের তাগিদ ও বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আপনার সমর্থকদের নিবৃত্ত করুন। খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে গতকাল এ ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের অবস্থান ও এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, দুদকের মামলায় আইনে অ্যাটর্নি জেনারেলের জড়ানোর সুযোগ নেই। অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবী খালেদার জামিনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের শুনানি চলছে। অসমাপ্ত অবস্থায় শুনানি আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ মামলা উপলক্ষে আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষ আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ভিড়ে ছিল জনাকীর্ণ। আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সাধারণ আইনজীবীদের চেয়ে আদালতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের আধিক্য ছিল। শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাছির হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির সহস াধিক নেতা-কর্মী আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।

আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার মামলাটি ৯ নম্বর ক্রমিকে ছিল। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। খালেদা জিয়াকে হাই কোর্ট যে চারটি যুক্তিতে জামিন দিয়েছিল, তিনি সেগুলো আদালতে পড়ে শোনান। তিনি এসব যুক্তি খণ্ডন করেন। তিনি হাই কোর্টের আদেশের নির্বাচিত অংশ আদালতে পড়ে শোনান। দুদকের আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়া সাজার পরে কারাগারে রয়েছেন। এই মামলায় এখন বিচারিক আদালতে বিচার চলছে না। বিচারিক আদালতে সাজার পরে তিনি জেলে আছেন। সাজা হওয়ার পরে আসামির বয়স ৭৩ বছর কোনো ফ্যাক্টর নয়। তাই এই পর্যায়ে এটি কোনো যুক্তি হতে পারে না। বিচারিক আদালতে বিচার চলাকালে এটি যুক্তি হতে পারে। কিন্তু সাজার পরে বয়স কোনো যুক্তি হতে পারে না। বিচারিক আদালতের বিচারক সাজা দেওয়ার সময় আসামির বয়সের বিষয়টি কিন্তু বিবেচনা করেছেন।

দুদকের আইনজীবী বলেন, হাই কোর্ট আসামির সংক্ষিপ্ত সময়ের সাজা দেখে জামিন দিয়েছে। কিন্তু আসামি কতদিন জেল খেটেছেন, তা হাই কোর্ট বিবেচনায় নেয়নি। পাঁচ বছরের সাজার ক্ষেত্রে আড়াই বছর জেলে থাকলেও একটা কথা ছিল। তিনি বলেন, আসামির শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টিও এখানে বিবেচনায় আসবে না। কারণ জেলকোড অনুযায়ী তার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ পর্যায়ে বিচারপতি মো. ইমান আলী বলেন, তাহলে সংক্ষিপ্ত সময়ের সাজা কি হাই কোর্ট বিবেচনা করতে পারবে না? দুদকের আইনজীবী বলেন, পারবে। তবে সেক্ষেত্রে শর্ট কাস্টডিও বিচেনায় নিতে হবে। বেলা ১১টা পর্যন্ত দুদকের আইনজীবী শুনানি করেন। এরপর আদালত বিরতিতে যায়।

১১টা ৪০ এ আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ১১টা ৫০ মিনিটে এই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আবার শুনানি করেন। তিনি বলেন, যেসব ওষুধের তালিকা এখানে দেওয়া হয়েছে, আমার মনে হয় সেগুলো (রোগ) অতটা সিরিয়াস নয়। তারা কিছু পেপার কাটিং জমা দিয়েছেন। এতে চিকিৎসকের মতামত এসেছে। এই পর্যায়ে বেলা ১২টা ১ মিনিটে দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য শেষ হয়। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি শুরু করেন। তিনি জানান, হাই কোর্টে এ মামলার আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। যে কোনো সময় এ মামলার শুনানি হতে পারে। অ্যাটর্নি জেনারেল নিম্ন আদালতের নথির বিভিন্ন অংশ আদালতে পড়ে শোনান।

এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, তিনি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। এই মামলায় তিনি এসব (অপ্রাসঙ্গিক) কি বলছেন? আমরা এখানে জামিন শুনানির জন্য এসেছি। এ সময় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সমস্বরে ‘ইয়েস, ইয়েস’ বলে তাকে সমর্থন জানান। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য উপস্থাপন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। তবে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পরে তিনি আবার মামলার নথি থেকে পড়ে শোনান। এ সময় খালেদা জিয়া নিম্ন আদালতে কতদিন উপস্থিত ছিলেন, কতদিন ছিলেন না, কতবার সময়ের আবেদন করেছেন; তিনি সে বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের মামলায় পৃথিবীতে কেউ জামিন পায়নি। দুর্নীতির মামলায় ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলাকে ৭২ বছর বয়সে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক এক রাষ্ট্রপ্রধানকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আইনের ক্ষেত্রে সবাই সমান। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ। তার বিশ্রাম দরকার। তিনি কারাগারে বিশ্রামে আছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের এ বক্তব্যে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, খালেদার এই মামলা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফেয়ার ট্রায়ালগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ সময় আইনজীবীদের মধ্যে হাস্যরোলের সৃষ্টি হয়। জয়নুল আবেদীন দাঁড়িয়ে বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হয়ে তিনি এসব কথা বলতে পারেন না। এ পর্যায়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ‘শেম, শেম’ বলে চিৎকার করেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই মামলায় বিচারিক আদালতে পাঁচজন আইনজীবী শুনানি করেছেন, যুক্তিতর্ক করেছেন। আর কোনো ক্রিমিনাল মামলায় এমন হয়নি। এ সময় খন্দকার মাহবুব দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা জামিনের শুনানির জন্য এসেছি। এসব কি? আইনজীবীরা সমস্বরে চিৎকারে তাকে সমর্থন দেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বলতে দিন। আপনারাও সুযোগ পাবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জেলকোডে জেলখানায় সেবক রাখার বিধান নেই। কিন্তু খালেদা জিয়াকে সেবক দেওয়া হয়েছে। এই পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষ হয়। তখন বেলা একটা। পরে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি করেন। তিনি এই মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

দুদক আইনের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ উদ্দেশ্যে শুনানি দীর্ঘায়িত করেছেন। এ সময় আইনজীবীরা তাকে সমস্বরে সমর্থন জানান।

বিচারপতি মো. ইমান আলী বলেন, আপনি শুনানি করছেন, আপনার সমর্থকদের নিবৃত্ত করুন। প্রধান বিচারপতিও অনুরূপ কথা বলেন। এ সময় এ জে মোহাম্মদ আলী ও খন্দকার মাহবুব আইনজীবীদের নিবৃত্ত করেন। আইনজীবীরা বলেন, আমরা সমর্থক নই, আইনজীবী। এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাই কোর্ট জামিন দিয়েছে, আপিল বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করেছে এমন একটি মামলাও নেই। ডিএলআরে আসেনি এমন একটি মামলা ‘দুদক বনাম মশিউর রহমান’ এর রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, এই মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিনের আদেশ আপিল বিভাগ প্রথম দিনই বহাল রেখেছিল। হাই কোর্ট জামিন দিলে তাতে হস্তক্ষেপের ঘটনা ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও নেই।

উল্লেখ করা যায়, ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিনের আদেশ ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে। ১২ মার্চ খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি নিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তাকে ৪ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় হাই কোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। শুনানি করে ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগ। ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়। সেদিন থেকে তিনি কারাগারে।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official