দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের ৯ জেলায় পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ঢাকা, ঝিনাইদহ, শেরপুর, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরায় এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে।
ঢাকা
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার বিজি প্রেস হাইস্কুল মাঠ এলাকায় বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কামরুল ইসলামনামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
র্যাবের দাবি, নিহত কামরুল তেজগাঁও রেল লাইন বস্তি এবং মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে বিভিন্ন থানায় ১৫টির বেশি মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র মামলা রয়েছে।
র্যাব আরও জানায়, ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র-গুলি ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া দুই পক্ষের গুলি বিনিময়কালে র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার (এসআই) মো. মিজানুর রহমান জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কামরুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে রাত পৌনে ২টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার
জেলার রামুতে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বেয়াই আকতার কামাল (৪১) নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও পুলিশের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।
শুক্রবার ভোরে উপজেলার খুনিয়াপালংয়ের দুই নম্বর ব্রিজ এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী সিকদার।
নিহত কামাল এমপি বদির বড় বোন শামসুনাহারের দেবর এবং টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
ওসি আরও জানান, ভোরে ইয়াবার লেনদেনকে কেন্দ্র করে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কামালের মরদেহ খুঁজে পায়। ঘটনাস্থল থেকে তিন হাজার পিস ইয়াবা, দেশীয় তৈরি এলজি ও চার রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, পুলিশ মহেশখালী থানা জানায়, জেলার মহেশখালীতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে মোস্তাক আহামদ (৩৭) নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহত মোস্তাক আহামদ ওই ইউনিয়নের মুন্সিরড়েইল গ্রামের আনোয়ার পাশার ছেলে। তার বিরুদ্ধে তিনটি মাদকের মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে উপজেলার বড়মহেশখালী ইউনিয়নের দেবেঙ্গাপাড়া পাড়াতলী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’গ্রুপের গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী মোস্তাকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় চারটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, সাত রাউন্ড গুলি ও ৩০ রাউন্ড গুলি খোসার উদ্ধার করা হয়েছে।
কুমিল্লা
জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মহিষমারা এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে কামাল হোসেন প্রকাশ ফেন্সি কামাল (৫১) নামের একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত কামাল তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী।
বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও ৫০ কেজি গাঁজা। নিহত ওই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বুড়িচং ও কোতয়ালী মডেল থানায় ১২টির অধিক মাদকের মামলা রয়েছে।
ময়মনসিংহ
সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাজন নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন দুই পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থলে থেকে ৪শ’ পিস ইয়াবা, একটি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের দাবি, নিহত রাজন এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় আট থেকে নয়টি মাদকদ্রব্য মামলা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নগরীর পুরোহিত পাড়া রেলওয়ে কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান বন্দুকযুদ্ধে আহত ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান।
সাতক্ষীরা
জেলার কলারোয়া উপজেলায় বন্দুকযুদ্ধে ইউনুস আলী দালাল নামের একজন নিহত হয়েছেন।বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইউনুস উপজেলার দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আব্দুল্লাহ দালালের ছেলে।
পুলিশ জানায়, রাতে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি সীমান্তে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে ইউনুস নিহত হয়। বাহিনীর দাবি, সে একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শ্যুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে বলেও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নেত্রকোনা
সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং গ্রামে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত এবং তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে মনাং গ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় দুই মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন।
অভিযানে আধা কেজি হেরোইন, ৩ হাজারের অধিক ইয়াবা ও দু’টি পাইপগান উদ্ধার করা হয়। তবে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
ঝিনাইদহ
জেলার কালীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শামীম হোসেন নামের একজন মাদকব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় চার পুলিশ আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে কালীগঞ্জের সুগার মিল এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ৫০০ পিস ইয়াবা ও ১৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ীর নিহত হওয়ার কথা জানান।
গাইবান্ধা
জেলার ফুলছড়ি উপজেলার পুলবন্দি ফলিয়া ব্রিজ এলাকায় শুক্রবার ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জুয়েল মিয়া (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। জুয়েল মিয়া সদর উপজেলার ব্রিজ রোড মিস্ত্রি পাড়া এলাকার মৃত নছিম উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ জানান, জুয়েল মিয়া একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
শেরপুর
শুক্রবার ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালু ডাকাত নামের একজন নিহত হয়েছেন। এসময় উপ-পরিদর্শকসহ (এসআই) পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত কালু ডাকাত মাদক ব্যবসার পাশাপাশি শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন।