ডেস্ক রিপোর্ট :
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরুর পর অনেক মাদক ব্যবসায়ী এলাকা ছাড়ছে। বিশেষ করে নগরীর মাদক জোনখ্যাত রসূলপুর, কেডিসি বস্তি, আমানতগঞ্জ, গোড়াচাঁদ দাস রোড ও বগুড়া রোডের মুন্সির গ্যারেজ, মরকখোলার পুল, নতুনবাজার, বৈদ্যপাড়া, কাজীপাড়া, বিসিক, ভাটিখানা, সিএন্ডবি ১নং পুল, হিরণনগর, রুপাতলী, ফিসারি রোড, মথুরানাথ পাবলিক স্কুল সড়ক, সাগরদী বাজার, শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেন, ফকিরবাড়ি রোড ও নথুল্লাবাদের জিয়া সড়কের অনেককেই আগের মতো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে গোপনে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বরিশাল থেকে দূরের জেলাগুলোয়।
পাঁচ দিনে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই পলাতক, দেখা মিলছে না। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ঘরে এখন ‘ক্রসফায়ার আতঙ্ক’।
স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে, শায়েস্তাবাদ এলাকায় ডাকাত সরদার আবুল কাশেম ওরফে ডাকাত কাশেম কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর এলাকা ছাড়তে শুরু করে চিহ্নিতরা।
একই সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীরা নগরীতে থাকলেও নিয়ন্ত্রিত গতিবিধিতে রয়েছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, প্রথম রমজান থেকে পরিকল্পিতভাবেই মাদক নির্মূলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে পুলিশ প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে ৫ দিনে পুলিশের বিশেষ অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী, দেহজীবী ও খদ্দেরসহ গ্রেফতার হয়েছে ৬৫ জন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ৪০৯ পিস ইয়াবা, ১ কেজি ৪০০ গ্রাম গাঁজা, ১টি পাইপগান, ১টি চাপাতি, ১টি রামদা ও ৮ রাউন্ড খালি কার্তুজ। মঙ্গলবার রাতে নগরীর কেডিসি এবং ঈদগাহ বস্তিসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালায় মেট্রোপলিটনের ৪ থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ। ঈদ উপলক্ষে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও অপতৎপরতা রোধেও এ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল মহানগরে মাদক ব্যবসা পরিচালনাকারী ২৬৭ জনের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশালে খুচরা ও পাইকারি মাদক ব্যবসায়ী মিলিয়ে এর সংখ্যা ৩৫০। এদের মধ্যে অনেকেই নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। যত অভিযানই হোক না কেন, তাদের পুলিশ বা র্যাব কেউই গ্রেফতার করে না।
তবে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, মাদকের বিষয়ে কারও সঙ্গেই আপস নয়। বরিশাল নগরীতে ২৬৭ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা হয়েছে। তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীসহ মাদকে সম্পৃক্ত পুলিশ এবং বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক ও নৌরুটে বরিশালে মাদক প্রবেশ করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে নৌপথ। চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর হয়ে নৌরুটে আসে বরিশালের ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রাথমিক অবস্থায় নৌপথের মাদক এসে রসূলপুর, কেডিসি বস্তি, নতুনবাজার বস্তি, হিরণনগর ও মোহাম্মদপুরে রাখা হয়। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন কৌশলে নগরীর খুচরা বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছানো হয়। এসব মাদকদ্রব্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রয় হয়ে থাকে ইয়াবা।
এছাড়াও বরিশালের আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদীতে নদীপথে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে বরিশাল নগরীতে সুরক্ষা পথ দিয়ে চালান প্রবেশ করে। আর এই নগরীর চিহ্নিত বিভিন্ন পয়েন্ট থেকেই পাইকারি বা খুচরা দরে এসব মাদক বিক্রি হয়ে থাকে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, কবে নাগাদ এই অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে তার নির্ধারিত তারিখ নেই। তবে বরিশাল নগরী থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের মূল উৎপাটন পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, নগরীতে মাদকের প্রবেশ রুট ও বিস্তার নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করেই একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সে অনুসারে এগোচ্ছি আমরা। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, নগরীর পুরনো মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নতুন কিছু ব্যবসায়ী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সবকিছুই তারা নজরদারিতে রাখছেন।