28 C
Dhaka
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
প্রচ্ছদ বরিশাল রাজণীতি

মোটরসাইকেল চালক থেকে কোটিপতি ছাত্রলীগ নেতা মান্না

বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সদ্যবিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক রইচ আহমেদ মান্নার গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে তার অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি। এতদিন নগরবাসী তার ভয়ে মুখ না খুললেও এখন একে একে সবাই তুলে ধরছেন মান্নার দুর্নীতির আমলনামা।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে নগর ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পদ পেয়ে মান্না গড়ে তুলেছেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। কিন্তু নৌকার মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী কর্মীদের পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর ও কুপিয়ে জখমের মামলায় গ্রেফতারের একদিনের মাথায় ধস নামে মান্নার স্বর্গরাজ্যে।

গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সোমবার (১৫ মে) রাত সোয়া ১০টায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে, মান্না গ্রেফতারের পর থেকেই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তার অনিয়ম-দুর্নীতির নানান তথ্য। গত ১০ বছরে জিরো থেকে কোটিপতি বনে গেছেন মান্না। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর একনিষ্ঠ কর্মী হওয়ার সুবাদে বরিশাল নগরীতে সর্বস্তরে একক আধিপত্য ছিল তার। বর্তমানে তিনি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তবে তার আয়ের প্রধান উৎসই ছিল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি ও বিরোধপূর্ণ জমি দখল।
আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর নগরীতে সাদিকের অনুসারী অন্যরা ধীরে ধীরে চুপসে গেলেও মান্না ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। গত কয়েকদিনে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর একাধিক হামলা হয় মান্নার নেতৃত্বে।

দলীয় সূত্র জানায়, ১০ বছর আগেও মান্না শুধু ছাত্রলীগের একজন সাধারণ কর্মী ছিলেন। মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ানের মোটরসাইকেল চালক হিসেবেই তাকে চিনতেন সবাই। ২০১৪ সালে সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে অসীম দেওয়ানের বিরোধ শুরু হয়। এরপর অসীমকে দমনে সাদিকের হাতিয়ার হয়ে ওঠেন মান্না। বাড়িতে একের পর এক হামলা-গুলিবর্ষণসহ নানামুখী প্রতিরোধের মুখে ওই বছরের শেষ দিকে অসীম বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আশ্রয় নেন। এরপর থেকেই সাদিকের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মান্না।

মান্নার নির্যাতন নিপীড়নের শিকার বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর আগে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর (৪ জানুয়ারি) দিন নগরীর নুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সাদিকবিরোধীরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সন্ধ্যার পর মান্না বিশাল মোটরসাইকেলবহর নিয়ে গুলিবর্ষণ ও বোমা মেরে অনুষ্ঠান পণ্ড করে। এছাড়াও সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ তার মালিকানাধীন প্লানেট ওয়ার্ল্ড শিশুপার্কে কর্মিসভা করার সময় মান্না সীমানা প্রাচীরের বাইরে থেকে বোমা নিক্ষেপ করে।

মান্নার নিপীড়নের শিকার মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান বলেন, মান্নার নেতৃত্বে কয়েকবার তার বাসায় হামলা-ভাঙচুর ও গুলি করা হয়েছে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে প্রাণভয়ে বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমাই। খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশালে ফিরেছি।

এছাড়া ২০২১ সালের আগস্টে মান্নার নেতৃত্বে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলা, একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিসিক শিল্পনগরীতে জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুনে দফায় দফায় হামলা এবং ঘটনার জেরে কাউনিয়া থানা ঘেরাওয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। এসব মামলায় আসামি করা হয় তাকে।

এতকিছুর পরও এসব ঘটনার পুরস্কার হিসেবে দুই স্ত্রী ও তিন সন্তানের জনক মান্নাকে ২০২২ সালের জুলাইয়ে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়কের পদ পাইয়ে দেন সাদিক আবদুল্লাহ। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর একনিষ্ঠ কর্মী হওয়ার সুবাদে ২০১৮ সাল থেকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণসহ ‘আহমেদ পরিবহন’ নামে তিনটি বাসের মালিক মান্না।

টার্মিনালে চাঁদাবাজি ও অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সদর উপজেলায় মেরিন একাডেমির পাশে ১০ শতাংশ জমির ওপর বিশাল পাঁচতলা ভবনের মালিকসহ বিত্তশালীতে পরিণত হন তিনি। একসময় অন্যের মোটরসাইকেল চালালেও এখন চলাচল করেন নিজের নোহা গাড়িতে।

জানা যায়, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের মেয়াদে তার অনুসারী যুবদল নেতা মো. শাহিন সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে বাস টার্মিনালসংলগ্ন সড়ক ও জনপথের (সওজ) জমিতে দোতলা ভবন নির্মাণ করেন। সেখানে রয়েছে ১২০০ স্কয়ার ফুটের ‘নিউ বাঙ্গালী’ নামের খাবার হোটেল। হোটেলের পেছনে সওজের জমি দখল করে দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ১৩টি স্টল ও দোতলায় আবাসিক হোটেল করেছিলেন তখনকার পরিবহন শ্রমিক নেতা নুরে আলম। মান্না টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সব দখল করে নেন। আবাসিক হোটেল বন্ধ করে সেখানে তার ব্যক্তিগত কার্যালয় বানান। নিজেই পরিচালনা করেন ‘বাঙ্গালী হোটেল’।

এছাড়া অন্যের বিরোধপূর্ণ জমি একপক্ষের থেকে অল্প মূল্যে বায়না করে দখল করাই ছিল মান্নার কাজ।

নগরীর কেএমসি হাসপাতালের পরিচালক এস এম কাওছার হোসেন জানান, কাউনিয়ায় মান্নার বাসার অদূরে ৩৯ শতক জমি নিয়ে স্থানীয় জাহাঙ্গীরদের সঙ্গে মামলা চলছিল। নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত রায় পেয়েছিলাম। তবে মান্না সেই জমির ৮ শতক জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ৫৬ লাখ টাকায় বায়না করেন। গত ১৬ ডিসেম্বর দলবল নিয়ে মান্না জমি দখলে নেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মান্নাকে দেখে নীরবে চলে যায়। পরে কাউনিয়া থানা পুলিশ মামলাও নেয়নি।

রোববার (১৪ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর বাশেরহাট খোলা এলাকা থেকে নৌকা মার্কার প্রধান কার্যালয়ে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের তিন সমর্থকের পথরোধ করেন ছাত্রলীগ নেতা মান্না ও তার অনুসারীরা। এ সময় মান্না তাদের ওপর পিস্তল ঠেকান বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেন।

এ সময় হামলায় আহত হন নৌকার কর্মী হালিম, মনা ও জাহিদুল। পরে স্থানীয়রা আহতদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় আহত মনা ওই রাতেই বাদী হয়ে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইচ আহমেদ মান্নাসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০ জনকে আসামি করে কাউনিয়া থানায় মামলা করেন। মামলার পরপরই কাউনিয়া থানা পুলিশ গভীর রাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মান্নাসহ ১৩ জনকে আটক করে কারাগারে পাঠায়।

সম্পর্কিত পোস্ট

বরিশাল বিমানবন্দর থানার মঙ্গল হাটা গ্রামে মৎস্য খামারের মালিক কে মিথ্যে চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে মৎস্য খামার দখল

banglarmukh official

বরিশালে আদালতের তলবে ক্ষমা চেয়ে রেহাই পেলেন ওসি, শোকজের মুখে তদন্ত কর্মকর্তা

banglarmukh official

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানালেন রিজভী

banglarmukh official

পূর্বাচলে হাসিনা পরিবারের প্লট নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

banglarmukh official

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন

banglarmukh official

বিএনপিতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের যোগদান প্রসঙ্গে যা বললেন মির্জা ফখরুল

banglarmukh official