এপ্রিল ২৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

রোজা রাখার নির্দেশ ও উপকারিতা

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম চতুর্থটি হলো রোজা। হিজরি সনের প্রত্যেক রমজান মাসজুড়ে রোজা পালন মহান আল্লাহর নির্দেশ। প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নারী-পুরুষের ওপর ফরজ ইবাদত এটি।

মুসলিম উম্মাহকে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের আগের লোকদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া, পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যাতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েত। এ হেদায়েত সত্য মিথ্যা সুস্পষ্ট পার্থকারী। সুতরাং যারা এ মাসের সাক্ষাৎ পাবে তারা যেন রোজা পালন করে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

রমজান মাসে রোজা পালন আল্লাহর তাআলা হুকুম। বিশেষ অক্ষমতা কিংবা অপারগতা ব্যতিত রোজা ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

‘বিশেষ কোনো ওজর ছাড়া যে ব্যক্তি রমজানের একটি রোজাও ভেঙে ফেলে, সে সারা জীবনও যদি রোজা রাখে তবুও রমজানের ওই রোজার হক আদায় হবে না। সে আল্লাহর সামনে এমনভাবে হাজির হবে যে, আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করবেন বা শাস্তি দেবেন।’ (তাবারানি)

অন্য হাদিসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একদিন রোজা ভাঙে, সারা বছরেও তার কাজা হবে না হবে না, যদিও সে পুরো বছর রোজা পালন করে।’ (হাদিসটি বুখারির টিকা উল্লেখ করা হয়েছে, আবু দাউদ, তিরিমজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)

রোজার উপকারিতা
রমজানের রোজা পালনে রয়েছে অনেক উপকারিতা। হাদিসের নির্দেশনা এমন যে, ‘রোজা রাখুন, সুস্থ থাকুন।’

রোজাদার ব্যক্তির জন্য দিনের বেলায় পানাহার, যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকতে হয়। যারা আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সাওয়াব ও প্রতিদানের ঘোষণা-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দার সব নেক আমলের সওয়াব দানের জন্য একটি নিয়ম থাকে। নেক আমল অনুযায়ী সাওয়াব দেয়া হয়। তা দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু রোজার বিষয়টি সাধারণ নিয়মের উর্ধ্বে। বান্দা আমার জন্যই পানাহার ত্যাগ করেছে, যৌন ক্রিয়া থেকে বিরত থেকেছে। সুতরাং আমি নিজে তাকে বিশেষ প্রতিদান ও সাওয়াব দেব।’ (মুসলিম)

রোজা রাখলে আগের জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়ার সুসংবাদ দিয়েছে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও বিশ্বসের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলঅ তার আগের (জীবনের) সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি)

হাদিসে রোজাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দুর্গ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘রোযা হলো জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার শক্ত ঢাল এবং সুরক্ষিত বিশেষ দুর্গ।’ (তিরমিজি)

এ রোজাই কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য শাফায়াতকারী হবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য এ বান্দা পানাহার ত্যাগ ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করেনি। সুতরাং এ বান্দাকে ক্ষমা করে দাও হে প্রভু! তখন আল্লাহ তাআলা রোজাদারের সুপারিশ গ্রহণ করে নেবেন।

রোজা মানুষের জন্য পশুত্বের স্বভাব থেকে বিরত থাকার অন্যতম প্রশিক্ষণ। কেননা পশুর বৈশিষ্ট্য হলো, যখন ইচ্ছে খায়, ইচ্ছে হলেই পান করে কিংবা যৌণ কাজে জড়িয়ে পড়ে।

আর ফেরেশতারা এসব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাদের না আছে পানাহারের চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা আর না আছে যৌন ক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা।

আর মানুষ রোজা রাখার মাধ্যমে পশুত্বের সে স্বভাব থেকে ফিরে থেকে ফেরেশতাদের স্বভাবের অনুসরণ করার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও পরিমিতবোধ তৈরি করে থাকে।

রোজার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, তাকওয়া তথা মহান আল্লাহ তাআলা ভয় অর্জন করে। নিজেদের চরিত্রকে নিষ্কলুষ করে গড়ে তোলে। আল্লাহর হুকুম পালনে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।

শুধু তাই নয়, রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ কম খাওয়া, কম ঘুমানো ও কম কথা বলার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। আর তাতে মানুষের আত্মার অনেক উন্নতি হয় ও সৌন্দর্য বেড়ে যায়।

রোজা রেখে সতর্ক থাকতেও পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বনবি। অন্য কারো মন্দ কথার জবাব না দিয়ে নিজেকে রোজাদার হিসেবে পরিচয় দেয়ার মাধ্যমে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার নসিহত পেশ করেছেন-
‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখবে, তখন দিনের বেলা সে যেন মুখে কোনো অশ্লীল কথা না বলে, হৈ চৈ না করে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসে কিংবা গালিগালাজ করে; তাহলে সে যেন শুধু এটুকু বলে চুপ থাকে যে, ‘আমি রোজাদার’, আমি রোজাদার।’ (বুখারি)

কেননা রোজা রেখে মন্দ কথা ও মিথ্যা পরিহার না করতে পারলে এ রোজা মানুষের কোনো উপকারেই আসবে না। প্রিয় নবি বলেন-
‘রোজা রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা, মন্দকথা ও কুকর্ম ত্যাগ করে না, তার এই উপবাসে আল্লাহর কাছে কোনো কাজে আসে না।’ (বুখারি)
অন্য হাদিসে এসেছে-
অনেক রোজাদার এমন আছে যে, মন্দ কাজ থেকে বিরত না থাকার কারণে তাদের রোজা থেকে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট ছাড়া কিছুই অর্জিত হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ)

যেহেতু রোজা আল্লাহর নির্দেশ ও ফরজ ইবাদত। সুতরাং তা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সক্ষম মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য পালন করা আবশ্যক। আর যখন মানুষ রোজার বিধান পালন করে ছোট বড় সব গোনাহ থেকে বিরত থাকবে, তখনই রোজা সব সুফলগুলো লাভ করা যাবে।

বিশেষ করে-
পানাহার, স্ত্রী সহবাসসহ মিথ্যা, পরনিন্দা, গালিগালাজ, অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারলেই রোজার পরিপূর্ণ উপকারিতা লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে। ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য গুণ অর্জন করতে সক্ষম হবে মানুষ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার বিধান যথাযথ পালনের মাধ্যমে রোজা উপকারিতা লাভ ও তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন।

আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official