তানজিম হোসাইন রাকিব: প্রাণ কেড়ে নিতে সময়ের অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাস আতঙ্ক থেকেও অধিকতর চিন্তা-ভাবনা দেখা দিয়েছিলো ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। ধেয়ে আসছে, এই খবরে বরিশালের চারিদিকে চরম আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় একরাত পার হলো গতকাল বুধবার ২০মে ঘনঘোর আঁধারে এক পরিবেশ। বরিশালের শুধু প্রশাসন নয়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহল পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং ক্ষয়ক্ষতি রোধে দিনের শুরু থেকে সর্বাত্মক চেষ্টায় ও কর্মপ্রয়াসে ফুটে উঠেছে কতটা মানুষের জন্য নিবেদিত। বিশেষ করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কাটিয়েছেন নির্ঘুম এক রাত।
সবাই যখন ঘুমে বিভোর তখন জেগে থাকা একজন ক্ষমতাসীন দলের নেতা প্রকৃতির ভয়ঙ্কর গতিবিধির সর্বশেষ তথ্য জানতে তার চোখ ছিলো অতন্দ্র প্রহরীদের ন্যায়।
বরিশাল নগর আ.লীগের সাধারণ সস্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন , স্ব্চ্ছোসেবকের ভ’মিকায়। ইতিপূর্বে এধরনের দুর্যোগে এই নেতা নিজেই স্পীডবোটযোগে নৌপথে নেমে হ্যান্ডমাইকে মানুষকে সতর্কতায় ভ’মিকা রাখতে দেখা গেলেও এবার করোনায় নিরাপত্তাজনিত কারনে ঘর থেকেই বরিশালে প্রস্তুতির সার্বিক চিত্র মনিটরিং করছিলেন। একপর্যায়ে রাতে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন, এমনটি জানালেন তার ঘনিষ্টজনরা।
এই নেতাও সকাল থেকে উদ্বিগ্ন ছিলেন ঝড়ের গতিবেগ বরিশালকে ছোঁয়া দেয় কিনা এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে। বিশেষ করে নদীতীরবর্তী এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন নয়া এই দূর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সহায়তা বা নির্দেশনা মানতে। তিনিও প্রস্তুত ছিলেন, আম্ফান যদি বরিশালকে আহত করে ক্ষয়ক্ষতির ধ্বংসস্ত’পে রূপ দেয় তাহলে পরবর্তী করণীয়সমূহ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণে।
জানা যায়, সন্ধ্যার পরই শুরু হয় অম্ফানের তান্ডব। সুন্দরবনে আঘাত হানার পর ঝাপটা আসতে থাকে দক্ষিণাঞ্চলে। প্রথমে যেভাবে বাতাসের গতিবেগ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে আশঙ্কা তৈরী হয়েছিলো বরিশাল জেলায় আম্ফান প্রকৃতির বৈরীতায় বিবর্ণ করে তুলতে যাচ্ছে। ভাগ্যসহায়, ধীরে ধীরে বাতাসের গতিবেগ কমে আসলেও গুমট ভাব মানুষের ভিতরকার আতঙ্ক আরও ভর করে।
ধারনা করা হচ্ছে, প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের সম্মিলিত পূর্বপ্রস্তুতিতে এঅঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অতোটা বেশী নয়। তবে মর্মদায়ক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে কলাপাড়া থেকে। সেখানে সতর্কীকরণ প্রচারণা চালাতে গিয়ে নদীতে নৌকা ডুবে শাহ আলম মীর (৫৫) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক নিখোঁজ রয়েছেন। হিজলায় গভীর রাতে মেঘনায় দুই ট্রলারের সংঘর্ষে নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা পর ট্রলার মাঝি রাসেল হাওলাদারের মৃতদেহ উদ্ধার করতে স্থানীয়রা সক্ষম হয়েছেন। ভোলার চরফ্যাসনের কচ্চপিয়ায় ঝড়ে গাছের নিচ চাপা পড়ে সিদ্দিক ফকির নামের ৭০ বছরের একজন মারা গেছেন।
এই ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় আম্ফানের যে গতিবেগের কথা প্রচার পেয়েছিলো এবং সন্ধ্যার পর তার আলামত শুরু হওয়ায় ভীতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি অস্বাভাবিক ছিলোনা। কিন্তু বরিশাল জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন মহল প্রকৃতির এই বৈরীতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনায় ভয়ঙ্করতা থেকে। উদ্বিগ্ন মানুষ রাতের গভীরতায় ক্লান্তিতে যখন ঘুমে আচ্ছন্ন তখন মেট্রোপুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান ও মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ চিন্তামগ্নে নির্ঘুম রাতটিতে ছিলেন সরব । পাশাপাশি জেলা প্রশাসক মোঃ অজিউর রহমান ও পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি রাতভর খোঁজখবর নিতে থাকেন, দিতে থাকেন সকল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা।
এদিক থেকে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ভুমিকা তাদের থেকেও ছাড়িয়ে যায় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সম্ভাব্য আঘাত কি করে সামাল দেয়া যায়, সে নিয়ে দিনভর ব্যাস্ততা, রাতে উভয়ের চিন্তা আরও প্রবলতর হয়ে ওঠে। অন্তত বিভাগীয় এই শহরে আম্ফানের প্রবেশ করলেও মোকাবিলায় দৃঢ়তার সাথে জনতার পাশে থাকতে মাঠে থাকা দলীয় কর্মীদের সাথে সার্বক্ষীণক যোগাযোগ রাখেন সেহরীর পূর্বমূহূর্ত পর্যন্ত। রাতভর ব্যস্ত সময় পার করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে। যদিও সম্ভাব্য ইতিহাসের বড় ঝড়ের ছোবল আশঙ্কায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছিলেন কিন্তু মানসিকভাবে ছিলেন দৃঢ়চেতা। করোনার দুর্যোগের মাঝে আবার নতুন ঝামেলার উপসর্গ আম্ফান মোকাবিলায় তার কর্মপ্রয়াসে ফুটে উঠেছে তারা কতটা মানুষের জন্য নিবেদিত।