বিশ্বকাপ ফাইনাল মানেই শিরোপা জয়ের লড়াই। এই লড়াইয়ে দেশকে আরাধ্য সাফল্য এনে দিতে সব খেলোয়াড়ই মরিয়া থাকেন। এতে রেফারিকেও বেশ ব্যস্ত থাকতে হয়। হাওয়ার্ড ওয়েব তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে। স্পেন-নেদারল্যান্ডস ফাইনালে শশব্যস্ত সময় কেটেছে এই ইংলিশ রেফারির। তাঁকে স্রেফ কার্ডের পসরা সাজিয়ে বসতে হয়েছিল।
স্পেনের খেলোয়াড়েরা দেখেছেন ৫টি হলুদ কার্ড। আর ডাচরা ৯টি—এর মধ্যে লাল কার্ড একটি। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন ডাচ সেন্টার ব্যাক জন হেইটিঙ্গা। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো ফাইনালে সর্বোচ্চ ১৪টি কার্ড দেখার রেকর্ড গড়েছে ২০১০ ফাইনাল।
‘ডার বম্বার’কে মনে আছে? চিনতে না পারলে জার্ড মুলার নামটাই যথেষ্ট। তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির জার্সিতে তাঁর ক্যারিয়ার মাত্র ৮ বছরের। কিন্তু এই স্বল্প সময়েই মুলার নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন জার্মানি তো বটেই, ফুটবল বিশ্বেরই অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে। সেটা বিশ্বকাপে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য। ’৭০ মেক্সিকো টুর্নামেন্ট দিয়ে মুলারের অভিষেক বিশ্বকাপে। পশ্চিম জার্মানি জিততে না পারলেও মুলার জিতেছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতার (১০) পুরস্কার।
১৯৭৪ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হলেও মুলার আগের টুর্নামেন্টের মতো ভালো করতে পারেননি। ৪ গোল করেছিলেন। এতে একটি রেকর্ড হয়ে যায় মুলারের—বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোনালদো এই রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার তিন দশকেরও বেশি সময় টিকে ছিল মুলারের সেই ১৪ গোলের মাইলফলক।
রোনালদোর সেই রেকর্ড ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানিতে ফিরিয়ে আনেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। বিশ্বকাপে জার্মানির সাবেক এই স্ট্রাইকারের গোলসংখ্যা ১৬। ক্লোসার আরও একটি রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি। ২০০২ থেকে ২০১৪—এই চার বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটাও ক্লোসার। ১৪ ম্যাচ।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত মোট আটটি দেশ শিরোপা জিতেছে। তবে ব্রাজিলের মতো গোল পার্থক্য নিয়ে কোনো দলই শিরোপা জিততে পারেনি। ২০০২ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ৩ ম্যাচে ১১ গোল করেছিল ব্রাজিল। হজম করেছিল ৩ গোল অর্থাৎ ৮ গোল পার্থক্য। এরপর নকআউট পর্বে ৪ ম্যাচে ৭ গোল করার বিপরীতে হজম করেছে ১ গোল। অর্থাৎ নকআউট পর্বে ব্রাজিলের গোল–পার্থক্য ছিল ৬। সব মিলিয়ে ১৪ গোল পার্থক্য নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ‘বিগ ফিল’ লুই ফেলিপে স্কলারির দল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর কোনো দলই এত বেশি গোল–পার্থক্য নিয়ে শিরোপা জিততে পারেনি।
১৯৫৪ বিশ্বকাপে ফেরেঙ্ক পুসকাস-স্যান্ডর ককসিস-ন্যান্দর হিদেকুটিদের হাঙ্গেরিকে মনে রেখেছে সবাই। সেবার বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে রেকর্ড ২৭ গোল করেছিল হাঙ্গেরি। শিরোপা জয়ের আশায় ফাইনালে তাঁরা মুখোমুখি হয়েছিল পশ্চিম জার্মানির। কিন্তু হাঙ্গেরিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ‘মিরাকল অব বার্ন’-এর জন্ম দিয়েছিলেন ফ্রিৎজ ওয়াল্টার-ওটমার ওয়াল্টাররা।
মজার ব্যাপার হলো, ফাইনালেও হারলেও পুসকাসদের সেই হাঙ্গেরিকে পশ্চিম জার্মানির তুলনায় সবাই বেশি মনে রেখেছ। তার অন্যতম কারণ বোধ হয় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড—বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সর্বোচ্চ গোল হজমের রেকর্ডটা সেবারই গড়েছিল ফ্রিৎজ ওয়াল্টারদের পশ্চিম জার্মানি। তাঁরা হজম করেছিল ১৪ গোল। আবার এই পরিমাণ গোল করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডও আছে। ১৯৬২ গারিঞ্চার ব্রাজিল কিংবা ১৯৮৬ ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা—এই দুই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে দুটি দলই ১৪ গোল করেছিল।