23 C
Dhaka
নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
Business Finance Politics অর্থনীতি জাতীয় প্রচ্ছদ রাজণীতি সরকার

একটি শেখের বেটি এবং একটি যাদুর সেতু

তানজিম হোসাইন রাকিবঃ গোটা বাংলাদেশকে আমূল বদলে দেওয়া পদ্মা সেতু মাথা তুলে দাড়িয়ে শুভ উদ্ভোদন হয়েছে আজ।একটি পদ্মাসেতু গোটা দেশ ও জাতির জন্য যে কত বড় আশীর্বাদ তা বাঙালি জাতি ছাড়া অনুমান করা অসম্ভব। তবে এই যাদুময় সেতু উপহার দেওয়া যে কত বড় চ্যালেঞ্জিং ছিল সেটা শেখের বেটি হাসিনা ছাড়া আর কারো পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়। তাই একটি শেখের বেটি এবং একটি যাদুর পদ্মা সেতু দুটোই বাংলাদেশের সব থেকে বড় সম্পদ।

এ সেতুকে যাদুর সেতু বলার পিছনে কারন রয়েছে অহর অহর। পদ্মা সেতুর বদৌলতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ কাড়বে, গড়ে উঠবে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা। এ সেতু দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারবে এশিয়ান হাইওয়েতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের ২১টি জেলার সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। ২১ টি জেলাগুলো হলো- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে আছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে আছে একটি একক রেলপথ। এছাড়াও রয়েছে এই যাদুর সেতুর অসংখ্য সুযোগ সুবিদা।

এ হলো পদ্মা সেতুর সুযোগ সুবিধার কথা। তবে পদ্মা সেতু কেন এতটা চ্যালেঞ্জিং? কি আছে এমন যার জন্য এত ব্যায় এই সেতুতে? কেন এই সেতু তৈরীতে এত বেগ পোহাতে হয়ছে এই হাসিনা সরকারকে? চলুন এক নজরে একটু দেখে আসার চেষ্টা করি।

২০০৬-০৭ সালে প্রকল্প প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কিছু লোকের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক তার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্যান্য দাতারা সেটি অনুসরণ করে। এই ঘটনায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ও সচিব মোশারেফ হোসেন ভূঁইয়াকে জেলেও যেতে হয়েছিল। পরবর্তীতে এমন কোনো অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডিয়ান আদালত মামলাটি বাতিল করে দেয়। দুর্নীতির অভিযোগ পরবর্তীতে আদালতে খণ্ডিত হয়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে আছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে আছে একটি একক রেলপথ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, সেতুটি এমন এক নদীর ওপর হয়েছে, যা পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদী। পদ্মা এমন এক নদী, যেটি একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। ফলে নদী শাসন করে পদ্মা সেতু করতে গিয়ে মানের বেলায় কোনো ধরনের আপস করা হয়নি। পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে মূলত দেশীয় উপকরণ দিয়ে। সেতু তৈরিতে সবচেয়ে বেশি লাগে দু’টি উপকরণ। একটি হলো স্টিল, অন্যটি সিমেন্ট। আমাদের দেশে যথেষ্ট ভালো মানের সিমেন্ট ও স্টিল তৈরি হয়। শুধু স্টিল আর সিমেন্টই নয়, রড, বালু, পাথরসহ অন্য যেসব উপকরণ পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত হয়েছে, সব উপকরণই ছিল সর্বোচ্চ মানের। যারা এসব উপকরণ সরবরাহ করেছে, তারা সবাই ছিল সতর্ক। তাই পদ্মা সেতুতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কোনো সুযোগই ছিল না।

পদ্মা সেতুর পাইল বা মাটির গভীরে বসানো ভিত্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বে গভীরতম। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত গেছে সেতুর অবকাঠামো। ১০ই ডিসেম্বর বহুল কাক্সিক্ষত এ সেতুর সর্বশেষ স্টিলের কাঠামো (স্প্যান বসানো হয়। ৪১তম স্প্যান বসানোর পর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান হয়। ২০১৭ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমানতা শুরু হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে তিন বছর দুই মাস লাগে।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর সম্পূর্ণ নকশা এইসিওএম’র নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল তৈরি করে। বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু প্রকল্প যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ প্যানেল সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করেন।

পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে মূলত কয়েকটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে যথা- (ক) মূল সেতু, (খ) নদী শাসন, (গ) জাজিরা সংযোগকারী সড়ক, (ঘ) টোল প্লাজা ইত্যাদি। মাওয়া সংযোগকারী সড়ক, টোল প্লাজা ইত্যাদি এবং মাওয়া ও জাজিরা সার্ভিস এলাকা। প্রকল্পে নিয়োজিত নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল-এইকম’ ভৌত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রাক-যোগ্যতা দরের নথি প্রস্তুত, টেন্ডার আহ্বানের পর টেন্ডার নথি মূল্যায়ন, টেন্ডার কমিটিকে সহায়তাসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারক করতো। ভৌত কাজের বিভিন্ন প্যাকেজের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি।

সর্বোপরি পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু আসলেই দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে বাস্তবে ধরা দিয়েছে।জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণের জন্যই যেন মহান আল্লাহ্তায়ালা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যা চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচিয়ে রেখেছেন। শেখ হাসিনা আমাদের আশার বাতিঘর বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যোগাযোগ ও সামাজিক অবস্থান সর্বক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনা সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

কুরআনের আয়াত পোস্টের সঙ্গে ২ ছবি শেয়ার, কী বার্তা দিলেন আসিফ নজরুল

banglarmukh official

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্মান জানানোয় গোটা জাতি আনন্দিত

banglarmukh official

অবরুদ্ধ পেট্রোবাংলা, ভেতরে আটকা শত শত কর্মকর্তা

banglarmukh official

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা বলল যুক্তরাজ্য

banglarmukh official

ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম মাওলানা ভাসানী: তারেক রহমান

banglarmukh official

গরুর মাংসের দাম এখনও নাগালের বাইরে: ফরিদা আখতার

banglarmukh official