অনলাইন ডেস্ক:
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি ধান কেনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে তিনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কমমূল্যে ধান কিনে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
জানা যায়, এক হাজার চল্লিশ টাকা মন দরে গত ২১ মে থেকে নলছিটিতে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রথম দফায় ১৫১ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। কৃষকদের কাছ থেকে চিটা ও ময়লামুক্ত ১৪ ভাগ আদ্রতার ধান সংগ্রহ করে সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সেচ্ছাচারিতায় তা মানা হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন খাদ্য গুদামে প্রভাবশালী চক্রকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি যাতে কৃষক ধান বিক্রি করতে পারে সে বিষয় তৎপর থাকলেও গুদাম কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট সব উদ্যোগ নষ্ট করে দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ধান কেনা অভিযান শুরু হলে কৃষকরা ধান দেওয়ার জন্য নমুনা নিয়ে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের কাছে আর্দ্রতা পরীক্ষা করাতে যান। ধানের মান ভালো না, এমন অজুহাতে প্রান্তিক কৃষকের ধান ফিরিয়ে দিয়েছেন গুদাম কর্মকর্তা । অথচ সেই ধানই কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা গুদামে সরবরাহ করেছেন সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা। ফলে কৃষকরা সরাসরি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে না পেরে ন্যায মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে খাদ্যগুদাম ঘুরে দেখা যায়, দালাল ফড়িয়াদের মাধ্যমে সরবরাহকৃত ধান যাচাই-বাছাই না করে তাৎক্ষণিকভাবে গুদামজাত করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের পক্ষ থেকে ধান নিয়ে আসা হলে ওই ধান নিয়ে নানা রকম জটিলতা ও তালবাহানা করে কৃষকদের ধান পুনরায় রোদে শুকিয়ে নিয়ে আসার কথা বলে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। অথচ ওই ধানই ধার্যকৃত মুল্যর কম দামে গুদাম সিন্ডিকেট ক্রয় করে কর্মকর্তার মাধ্যমে গুদামজাত করছেন।
গৌড়িপাাশা গ্রামের কৃষক ও স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর জামাল হোসেন খান বলেন, তিন বার রোদে শুকিয়ে ফ্যানের বাতাসে ধান ও চিটা পৃথক করে প্রায় এক টন ধান নিয়ে এসেছি খাদ্যগুদামে বিক্রির জন্য। আমাকে ওই ধান নিয়ে পুরো একদিন অপেক্ষার পর গুদাম কর্মকর্তার সহযোগীদের মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে গুমাদজাত করতে হয়েছে। যারা গুদাম কর্মকর্তার সেচ্ছাচারিতা উপেক্ষা করে গুদামে ধান দিতে পেরেছেন তাদের মধ্যে চেক বিতরণেও সময়ক্ষেপন করার অভিযোগ রয়েছে। গুদামের তাঁর অনুসারীরা ধান বিক্রি কার কৃষকদের দ্রুত চেক পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থনৈতিক লেনদেন করার প্রমান পাওয়া গেছে। এতে কৃষকদের ভোগান্তির নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
এব্যাপারে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মো. আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সরবারহকৃত কৃষকদের তালিকা মোতাবেক ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৮০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। গুদামে কোন সিন্ডিকেট নেই, এখানে সরকারি বিধিমোতাবেক প্রকৃত কৃষকরা ধান বিক্রি করে চেক নিয়ে যাচ্ছেন।
ঝালকাঠি জেলা এলএসডি মাহাজারুল আনোয়ার (সংরক্ষণ ও চলাচল) বলেন, নলছিটি খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার নামে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, মাপে বেশি নেওয়া কিংবা কোন আর্থিক সুবিধা নিয়ে ধান ক্রয় করার প্রমান পাওয়া গেলে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।