মন্ত্রিসভা গঠনের সময়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, মন্ত্রীদের জন্য কোনও ছাড় নেই, নজরদারিতে আছেন সবাই। এবার সে তালিকায় যোগ হলেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এ উদ্দেশ্যে এরইমধ্যে তিনি সকল সংসদ সদস্যদের জন্য দিয়েছেন ১০টি নিষেধাজ্ঞা।
জানা গেছে, একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিদের সততা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাদের জন্য ১০টি বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এসব নির্দেশ না মানলে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞাগুলো হলো-
(১) নিয়োগ বাণিজ্য: পূর্বেকার এমপিদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে বহুবার। নতুন সরকারের আমলে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। নিয়োগের ব্যাপারে এমপিদের পক্ষ থেকে কোন ডিও লেটার দেয়া যাবে না। যদি কেউ দেয় তাহলে সেই প্রার্থীকেই অযোগ্য বিবেচনা করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
(২) উন্নয়ন প্রকল্পে হস্তক্ষেপ: অভিযোগ আছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রায় সময়ই অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন স্থানীয় এমপিরা। একনেকের সভায় এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গুটিকয়েক নেতার সুবিধার জন্য কোন উন্নয়ন পরিকল্পনার মাস্টারপ্ল্যানে পরিবর্তন করা হবে না।
(৩) থানায় খবরদারি: দেখা যায়, এমপিরা নিজ এলাকায় থানার উপর খবরদারি করেন এবং বিভিন্ন মামলার আসামি ও জামিনে হস্তক্ষেপ করেন। এতে হয়রানির শিকার হন অনেকেই। এবার এ ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।
(৪) বিভিন্ন ভাতার অর্থ: বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন রকম সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অর্থ ও সহায়তা অনেক সময় এমপিদের হস্তক্ষেপের কারণে সঠিক লোকের কাছে যায় না। প্রকৃত দরিদ্র, বিধবা বা বয়স্ককে না দিয়ে টাকা এমপিদের পছন্দের লোকদের দেয়া হয়। এর ফলে এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের বদনাম হয় এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এসব যেন না হয় সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পক্ষপাতহীনভাবে বিষয়টি তদারকি নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।
(৫) টেন্ডারে হস্তক্ষেপ: স্থানীয় পর্যায়ে টেন্ডার বা সরকারী কোনো কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এমপিরা। কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(৬) স্বজনপ্রীতি ও দলীয় কোন্দল: দেখা গেছে, এমপিরা যখনই নির্বাচিত হন, তখনই নিজেদের একটি বলয় তৈরি করার চেষ্টা করেন এবং স্বজনপ্রীতি দেখাতে শুরু করেন। এর ফলে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নজর রাখছেন। অভিযোগের প্রমাণ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
(৭) প্রশাসনে রদবদলে সুপারিশ: গত ১০ বছরে দেখা গেছে, এমপিরা তাদের পছন্দমতো স্থানীয় প্রশাসন ঢেলে সাজান এবং এর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দপ্তরে তদবিরও করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসপি বা ওসি পদে এমপিরা সবসময় তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের বসাতে চান। এবার এটি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় প্রশাসনে নিয়োগ হবে কেন্দ্রীয়ভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।
(৮) মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক: চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা যে মূল লক্ষ্যগুলো স্থির করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। যেটা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ প্রান্তেই শুরু হয়েছিল। স্থানীয় কোন এমপি যেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কোন সম্পর্ক বা পৃষ্ঠপোষকতা না করেন সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
(৯) ভিন্ন দলের লোক ভেড়ানো: বিগত সময়ে বিশেষ করে ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন দল থেকে বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিজেদের দলের ভেড়ানোয় মেতে উঠেছিলেন এমপিরা। এবার নির্বাচনের আগেই এ বিষয়ে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার গঠনের পর সংসদীয় প্রথম বৈঠকেই তিনি এ ব্যাপারে এমপিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
(১০) ক্ষমতার জোরে ব্যবসা: অনেকে এমপি হওয়ার পর তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে নানা রকম ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ও সেগুলোর প্রসার ঘটান। ব্যবসায় বাণিজ্য করতে অসুবিধা নেই। কিন্তু এমন কিছু করা যাবে না যাতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। যে কাজের জন্য যোগ্য নয়, সে কাজ যেন কোন এমপি না পান, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।