ভোট পরবর্তী সহিংসতায় ফের উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার জগদ্দল থানার অন্তর্গত ভাটপাড়ায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ছয়জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাটপাড়া। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একে অপরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় বোমা ও গুলি বর্ষণ। এরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ বাহিনী। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় বোমা বর্ষণ। এরপর পুলিশও পাল্টা গুলি ও টিয়ার গ্যাসের সেল ছুঁড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই গোটা এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। রাস্তাঘাট, দোকান-বাজার মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে।
এরই মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় রামবাবু শাহু নামে এক যুবকের। তার মাথায় গুলি লাগে বলে জানা গেছে। আহতদের ব্যারাকপুর বিএনবোস মহুকুমা হাসপাতাল এবং কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরে বিকালে অ্যাপোলো হাসপাতালে ধরমবীর সাউ নামে আরও এক আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সন্তোষ সাউ নামে আরও এক ব্যক্তি।
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বিকালে ভাটপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখান এলাকার নারীরা।
একসময় উত্তেজিত হয়ে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুড় করে বলে অভিযোগ।
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে এদিন দুপুরেই ভাটপাড়া পুলিশ আউটপোস্টকে পূর্ণাঙ্গ থানায় উদ্বোধন করার কথা ছিল রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র’এর। কিন্তু সহিংসতার কারণে বাতিল করতে হয় সেই অনুষ্ঠান। মাঝ পথ থেকেই কলকাতায় ফিরে যেতে হয় ডিজিপি-কে। যদিও পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিকালে ভাটপাড়ায় যান তিনি।
এদিকে ভাটপাড়ার পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে নবান্নে মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে’এর নেতৃত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসে।
বৈঠক শেষে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘কিছু অপরাধী ও সমাজবিরোধী মানুষ ওই সমস্ত অঞ্চলে সক্রিয় হয়েছেন। বহিরাগত উপাদানকে স্থানীয় উপাদানের সাথে সংযুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে স্বাভাবিক জনজীবন ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যহত হচ্ছে। সমস্ত বিষয়টি রাজ্য সরকার কঠোর দৃষ্টিতে দেখছে।
এরপর বিকালেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ভাটপাড়া থানায় আসেন ডিজিপি বীরেন্দ্র। সেখানে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায় চৌধুরী, আইজি দক্ষিণ বঙ্গ সঞ্জয় সিং সহ পুলিশের অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
ঘটনার পরই ওই ভাটপাড়া জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে নামানো হয়েছে পুলিশ বাহিনী, র্যাফ (র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স) বাহিনীকেও। সেইসাথে দুর্বৃত্তদের ধরতে চলে অভিযান। এসময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় তাজা বোমা ও একটি রিভলবার।
ঘটনার পরই কঠোর বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পুলিশকে রং না দেখে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে শান্তি ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পরই তাদেরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনীতি। তৃণমূলের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেছেন ‘বিজেপি পরিকল্পনা করে এই জায়গায় সহিংসতা তৈরি করেছে। নতুন ও পুরোনো বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষেই তাদের দুইজন কর্মী নিহত হয়েছেন।
যদিও বিজেপির দাবি নিহত দুইজন তাদের সক্রিয় কর্মী। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এ সহিংসতায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই মমতা ব্যনার্জি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। রাজ্য জুড়েই অশান্তি তৈরি হয়েছে।
দলের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হবে বলেও জানান বিজয়বর্গীয়।