32 C
Dhaka
অক্টোবর ৩১, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ প্রচ্ছদ প্রশাসন

মিতু হত্যার অভিযোগপত্র জমার জন্য অপেক্ষা এখন জুতসই সময়ের

সম্প্রতি মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফ  বলেন, তাঁর মেয়ে খুন হওয়ার কয়েক দিন আগেই বাবুল আক্তার বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। তবে তিনি মাহমুদাকে জানিয়েছিলেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য তাঁরা আরও কিছুদিন চট্টগ্রামে থেকে যাবেন। তাঁরা চট্টগ্রামের যে ফ্ল্যাটে আছেন, সেটি বদলে ফেলবেন। বাবুল মাহমুদাকে নির্মাণাধীন একটি ভবনে ফ্ল্যাট দেখতে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তবে মাহমুদা রাজি হননি। তাঁর এখন মনে হচ্ছে, হয়তো সেদিনই মাহমুদাকে খুন করা হতো। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ওয়াসিম এবং আনোয়ারও জানিয়েছেন, তাঁরা হত্যাকাণ্ডের তিন-চার দিন আগে খুনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাঁরা বাবুলের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে ইঙ্গিত পান। স্ত্রী খুন হবেন বিষয়টি বাবুল জানতেন। অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার জন্য তাঁদের অপেক্ষা এখন জুতসই সময়ের।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে মাহমুদাকে দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে মাহমুদা একই সড়কে অবস্থিত তাঁদের বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। স্ত্রী খুন হওয়ার পর বাবুল এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যুক্ত থাকার কারণে তাঁর স্ত্রী খুন হয়ে থাকতে পারেন।

বাবুলের সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহের কারণ
হত্যার পর পুলিশ প্রথমে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজ ধরে তাঁরা হত্যাকারীদের চেহারাগুলো আলাদা করেন। ফুটেজে আসামিদের ধূমপান করতে দেখা যায়। মোটরসাইকেলের সামনে ছিলেন মুসা, এরপর আনোয়ার ও একদম পেছনে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম। তিনজনই পেশাদার সন্ত্রাসী। মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম মিতুকে গুলি করেন, আগে থেকে ওত পেতে থাকা নবী তাঁর বুকে, হাতে ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। পুরো সময়টা বাবুল আক্তারের ছেলেকে আটকে রেখেছিলেন মুসা।

তদন্তে যুক্ত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমিকা রাখায় বাবুলের স্ত্রী জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন, এমন ধারণা প্রচার পাওয়ায় পুলিশ চট্টগ্রাম কারাগারে আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। ভিডিও ফুটেজ দেখানো হলে তাঁরা এককথায় জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ নাকচ করে দেন। ফুটেজে আসামিদের ধূমপান করার দৃশ্য দেখে তাঁরা জানিয়ে দেন, হত্যাকারীরা জঙ্গি সংগঠনের সদস্য নন। তা ছাড়া তাঁদের হত্যার কায়দা আলাদা।

ফুটেজের একটি অংশে দেখা যায়, খুনিরা প্রথমে মাহমুদাকে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। তাঁকে খুনিরা কোপ দিচ্ছেন, আর মাহমুদার প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দলের একজন ছেলেটির হাত টেনে ধরে আছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ দুটি; বাবুলের মনোবল ভাঙতে হলে জঙ্গিদের টার্গেট হতো তাঁদের সন্তান। সেটা হয়নি। দ্বিতীয়ত, এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী এই ছেলে। পেশাদার খুনিরা খুনের সাক্ষী রাখেন না। তাহলে কি কেউ তাঁদের ছেলেটি অক্ষত রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন?

হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর পুলিশ খুনিদের মোটরসাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাঁচলাইশ থানার বাদুড়তলা এলাকা থেকে খুঁজে পায়। ইঞ্জিনের নম্বর মিলিয়ে তাঁরা মালিককে বের করেন। কয়েক দফা হাতবদলের পর মোটরসাইকেলটি ছিল সাইফুল ইসলাম ওরফে সাকুর কাছে। জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানান, ওই দিন মোটরসাইকেলটি নিয়ে মুসা বেরিয়েছিলেন। পুলিশ জানতে পারে এই মুসা হলেন বাবুলের সোর্স। হত্যাকাণ্ডের আগে মুসা ও বাবুল দুজনই নতুন দুটি নম্বর থেকে কথা বলেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আর ওই ফোন ব্যবহার করেননি।

পুলিশ সদর দপ্তর ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, বাবুল ও মাহমুদার দাম্পত্য সম্পর্কটা কোনো রকমে টিকে ছিল। তাঁরা মনে করেন, এ কারণেই খুন হয়েছিলেন মাহমুদা।

জঙ্গি হামলার ধুয়া তুলে বাঁচতে চেয়েছিলেন বাবুল?
২০১৬ সালে ধারাবাহিকভাবে বিদেশি নাগরিক, হিন্দু পুরোহিত ও খ্রিষ্টান যাজক হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই সব হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরাই ছিল মূল সন্দেহভাজন। মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফ বলেন, ‘বাবুল আমার মেয়েকে খুন করে জঙ্গি জঙ্গি খেলা খেলতে চেয়েছিল। আমার মেয়েকে খুন করার পর ছয় মাস আমারই বাসায় থেকে গেল।’ তিনি আরও বলেন, বাবুল তাঁর শ্বশুরের সঙ্গে সাধারণত যোগাযোগ করতেন না। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের আগে ঘন ঘন যোগাযোগ করেছেন। এখন তাঁদের মনে হয়, আস্থা অর্জনের জন্যই বাবুল হয়তো এমন আচরণ করেছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পরপর বাবুল আক্তারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মেয়ের সঙ্গে বাবুল আক্তারের বনিবনা ছিল না ২০১৩ সাল থেকে। কিন্তু সে জন্য বাবুল খুন করবেন, এমনটা তাঁরা ভাবতে পারেননি।

কেন বনিবনা হচ্ছিল না জানতে চাইলে শাহেদা বলেন, কক্সবাজারে কর্মরত থাকার সময় বাবুল একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নারী কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের যেসব খুদে বার্তা চালাচালি হয়, সেগুলো মাহমুদা একটি সাদা কাগজে তুলে রেখেছিলেন। বাবুলের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। ঘনিষ্ঠতার বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি রামুর বৌদ্ধমন্দিরে ১২ অক্টোবর দুজন একসঙ্গে প্রার্থনা করেছেন।

বাবুল চুপ, বিচার চায় পরিবার
বাবুল আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ চাওয়া হয়। তিনি জবাব দেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মিতু কেন টার্গেট, তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাঁকে সন্দেহ করছেন এ ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য কী, স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সে কারণে হত্যা বলে মাহমুদার পরিবারের দাবি ও ২০১৩ সাল থেকে সম্পর্কের অবনতি হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন পাঠানো হয়। তিনি প্রশ্নগুলো দেখেও কোনো জবাব দেননি।

মাহমুদার মা-বাবা মেয়ে হত্যার বিচার চান। তাঁরা বলেছেন, পুলিশের অভিযোগপত্রে সন্তুষ্ট হতে না পারলে তাঁরা পাল্টা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

কিন্তু অভিযোগপত্র কবে দেওয়া হবে, বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের বক্তব্য কী? জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্ডার ইনভেস্টিগেশন, মন্তব্য করব না।’

সম্পর্কিত পোস্ট

১৭ পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

banglarmukh official

এই সুযোগ নষ্ট হলে দেশ অনেক পিছিয়ে যাবে: ড. ইউনূস

banglarmukh official

রাষ্ট্রপতির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হলো উপদেষ্টা পরিষদে

banglarmukh official

পায়রা সমুদ্রবন্দরের দিকে এগিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’

banglarmukh official

সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক

banglarmukh official

রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

banglarmukh official