দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ৷ নিজের স্তন্যপান করিয়ে স্নেহছায়ায় বড় করে তোলা৷ নিজের সন্তানের কাছে মা সবসময় মমতাময়ী৷ সেই মা এতো নোংরা হতে পারে? নিজের মা এতো নৃশংস হতে পারে? মা এতো কুৎসিত হতে পারে? কখনও সম্ভব? ‘কুসন্তান যদি বা হয়, কুমাতা নয়’৷ সন্তান খারাপ হয়, মা কখনও খারাপ হয় না৷ সমাজ তাই জেনে এসেছে, জানিয়ে এসেছে৷ কিন্তু নানা বিকৃত ঘটনা জন্ম দেয়ার ধারাবাহিকতায় এবারও সেই ঘটনাস্থল ভারত।
দেশটির পুরুলিয়ার এক মায়ের নৃশংসতা, বর্বরতা সেই সব প্রবাদকে এক নিমেষে মুছে দিয়েছে৷ এক নৃশংস নোংরা মায়ের তার সাড়ে তিন বছরের বাচ্চার প্রতি লোম খাড়া করে দেবার ঘটনা নাড়া দিয়েছে গোটা বাংলাকে৷ লজ্জায়, ঘৃণায় মুখ ঢেকেছে গোটা সমাজ৷ গত মঙ্গলবার, পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় সাড়ে তিন বছরের এক কন্যা সন্তান৷
শিশুটি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে তারই নিজের মা৷ চিকিৎসা করতে গিয়ে শিশুটিকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান হাসপাতালের ডাক্তাররা৷ সরকারী হাসপাতাল, তাই দিনরাত আহত-মৃত শরীর নিয়ে থেকেও এই ফুলের মতো শিশুটিকে দেখে হতবাক হয়ে যান চিকিৎসকরা৷ সাড়ে তিন বছরের গোটা শরীরে কালসিটে৷ বুকে মোচড়ানোর দাগ৷ কামড়ানোর দাগ৷ গোটা শরীরে নখের আঁচড়৷ কান দিয়ে রক্ত পরছে৷ রক্তের ফোঁটা নেমে আসছে শিশুটির যৌনাঙ্গ দিয়ে৷ একনজরেই অভিজ্ঞ ডাক্তাররা বুঝে যান দুধের শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে৷ সম্ভবতঃ ধর্ষণও৷
সঙ্গেই সঙ্গেই পুলিশকে খবর দেন হাসপাতালের ডাক্তাররা৷ পুলিশের কাছে শিশুকন্যার উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তারা মৌখিক ভাবে৷ যদিও শিশুটির মা কিছু বলতে রাজী হননি গত ৩ দিন ধরে৷ পুলিশে কোন অভিযোগ করতেও রাজী হননি তিনি৷ ডাক্তারদের কাছ থেকে রিপোর্ট পেয়ে আসরে নামেন সংবাদকর্মীরা৷ সংবাদকর্মীরা রিপোর্ট দেন চাইল্ড লাইন ও জুভেনাইল বোর্ডকে৷ তারপর সাংবাদিকরাই জেরা করেন অত্যাচারিত শিশুটির মা’কে৷ তখনই জানা যায়, এক মায়ের চরম নোংরামির ঘটনা৷
ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার মফঃস্বল থানা এলাকার নদিয়াড়া গ্রামে৷ স্বামী পরিত্যক্ত ওই শিশুটির মা, সনাতন ঠাকুর নামে একজনের বাড়িতে পরিচালিকার কাজ করে৷ সেখানেই সে তার শিশুসন্তানকে নিয়ে থাকে গত ৪ মাস ধরে৷ ৬৫ বছরের বৃদ্ধ সনাতন ঠাকুর বিপত্নীক। তার ছেলে ও বৌমা থাকে দূরে। লোকটি আগে হোমগার্ডে চাকরি করত এখন সে এলাকায় কীর্তন করে বেড়ায়। এরপরই ওই মহিলা জানায় সেই চরম সত্য৷ লোকটির সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক চলতে থাকে৷ শুধু তাই নয়, গত একমাস ধরে লোকটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের সময় বাচ্চাটিকে উলঙ্গ করে তাদের পাশে শোয়ানো হতো।
যৌনতার সময় শিশুটিকেও ব্যবহার করতো দুই প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষ৷ অনেক সময় মা ইচ্ছে করেই শিশুটিকে রেখে বাইরে চলে যেত দরজা বন্ধ করে। ছোট্ট শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করত অভিযুক্ত সনাতন ঠাকুর৷ নৃশংস মা সব জেনে বুঝেও চুপ করে থাকতো৷ মঙ্গলবার শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয় বলেই স্বীকার করে নেয় শিশুটির মা৷ তারপরেই শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়৷ তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বাধ্য হয় মা৷
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মা জানায়, শিশুটির গোপনাঙ্গে কাঠি ঢুকিয়ে দিয়ে অত্যাচার করত সনাতন ঠাকুর৷ সাংবাদিকরা ও জুভেনাইল বোর্ডের প্রতিনিধিরা এবং চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা অভিযুক্তের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নদীয়াড়া গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় অভিযুক্তের বাড়ির দেওয়াল ভগবানের ছবির পাশাপাশি নগ্ন মহিলাদের ছবিতে ভর্তি। গ্রামের লোক জানায় লোকটি ভালো না, বাচ্চাটির মাও ভালো নয়।
ঘটনায় যথারীতি নীরব দর্শক এর রোলে পুলিশ৷ তাদের বক্তব্য, অভিযোগ জমা না পড়লে কিছুই করা সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। ডাক্তাররা সবটাই জানতে পারেন মায়ের প্রতি শিশুটির আচরণ দেখে৷ হাসপাতালেও ছোট্ট শিশুটির মা নিজের মেয়েকে কোলে নিতে যায়। দেখা যায়, মা কে দেখলেই বাচ্চাটি আঁতকে উঠছে, কাঁদছে, শিউরে উঠছে। মায়ের কোলে না গিয়ে শিশুটির আঁতকে ওঠা দেখে চিকিৎসকদেরই প্রথমে সন্দেহ হয় বাচ্চার যৌন নির্যাতনে মা এর হাত রয়েছে। এক মায়ের এই অবিশ্বাস্য নৃশংসতায় নির্বাক সংবাদমাধ্যম কর্মীরাও৷ বিস্ময়ে হতবাক চিকিৎসকরা৷ এক শিশুর প্রতি চরম নোংরামি দেখে ক্ষুব্ধ চাইল্ড লাইনের সদস্যরা৷ আঁতকে উঠেছেন জুভেনাইল বোর্ডের কর্তারাও৷
শুধু নিশ্চুপ পুলিশ৷ কেউ অভিযোগ করে নি যে৷ অভিযোগ না করলে পুলিশ কি করবে? রাজ্যের পুলিশ কি এতটাই নিরক্ষর? এই শব্দগুলো নিশ্চয় পুলিশ কর্তারা পড়েছেন৷ ‘Suo motu’ meaning “on its own motion”৷ অভিযোগ না হলেও পুলিশ যে কোন ক্ষেত্রে নিজে থেকে FIR করে কেস চালু করতে পারে৷
আসলে রাজনীতির চাপে, পুলিশ কর্তাদের এখন আর কোন সামাজিক বিষয়ই নাড়া দেয় না৷ পুরুলিয়ার শিশু নির্যাতনের ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ৷ শিশুটির মা শেষ পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করতে রাজী হয়েছে৷ অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবী উঠছে পুরুলিয়া জেলা জুড়ে৷ সেই সঙ্গে শিশুর মাকেও চরম শাস্তির দাবী উঠেছে৷
প্রশ্ন উঠছে এক মাকে নিয়ে৷ নিজের সন্তানের প্রতি এতটা নিষ্ঠুর কোন মা হতে পারে? শরীরের চাহিদা এত বেশি? যা নিজের বাচ্চার প্রতি ভালোবাসাও নষ্ট করে দেয়? এ কেমন মা? নিজের পেটের সাড়ে তিন বছরের ফুলের মতো শিশুকে এক ৬৫ বছরের বুড়োর শয্যাসঙ্গিনী হতেও বাধা দেয় না? নিজের সন্তানকে এক বিকৃতকামী বুড়োর কাছে যৌন নির্যাতন হওয়া কোন মা দেখতে পারে? অবিশ্বাস্য এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারোর কাছে৷ লজ্জায় মুখ ঢেকেছে ভারতের সমাজ৷ ওই ছোট্ট শিশুটিকে নয়, নষ্ট সমাজকেই যেন ফের ধর্ষণ করেছে এই সমাজেরই কিছু বিকৃতকামী মানুষরূপী পশু৷ আর সব দেখেও চুপ এই নষ্ট সমাজেরই শিরদাঁড়াহীন মানুষরা৷