ভারতীয় সিনেমার নতুন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জায়রা ওয়াসিম। আমির খানের সঙ্গে ‘দাঙ্গাল’-এর পর প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে ‘দ্য স্কাই ইন পিঙ্ক’ সিনেমায় অভিনয় করেন।
এত কম বয়সে তার অভিনয় দক্ষতা প্রশংসিত হয়। ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড-ন্যাশনাল চাইল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর একসেপশনাল অ্যাচিভমেন্ট পেয়েছেন জায়রা।
সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রামে অভিনয় থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেই পোস্ট নিজের টুইটার, ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও শেয়ার করেছেন জায়রা।
জানিয়েছেন, আল্লাহ’র আদেশে তিনি শান্তি খুজেঁ পেয়েছেন।
২০১৬ সালে আমির খানের সঙ্গে ‘দাঙ্গাল’ ছবিতে অভিনয় করেন জায়রা ওয়াসিম। এটাই ছিল শুরু। গত মার্চে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে তার সিনেমা ‘দ্য স্কাই ইন পিঙ্ক’-এর শুটিংও শেষ হয়েছে।
জায়রা তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, পাঁচ বছর আগে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা চিরকালের জন্য তার জীবন বদলে ফেলেছে। যে মুহূর্তে তিনি বলিউডে পা রেখেছিলেন, তার জন্য বিশাল জনপ্রিয়তার দরজা খুলে গিয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠছিলেন, সাফল্যের প্রতীক হিসাবে তাকে তুলে ধরা হয়েছিল এবং প্রায়ই তাকে তরুণদের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু, তিনি যা করতে চেয়েছিলেন বা হতে চেয়েছিলেন, তার কোনোটা এসব নয়, তার কাছে সাফল্য এবং ব্যর্থতার যা ধারণা, তিনি নতুন করে তা বুঝতে শুরু করেছেন।
জায়রা লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি আমি অনেক দিন ধরে অন্য একজন হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছি, যদিও আমি এখানে সুন্দরভাবে ফিট হতে পারব, কিন্তু আমি এর জন্য নই। এই জগত আমাকে অনেক ভালোবাসা, সমর্থন, প্রশংসা দিয়েছে, কিন্তু এই জগত আর যেটা করেছে তা হলো আমাকে ক্রমশ অবমাননার দিকে ঠেলে দিয়েছে, ক্রমশ অসচেতনভাবে আমি আমার ইমান (বিশ্বাস) থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ আমি এমন একটা পরিবেশে কাজ করতাম যা ক্রমাগত আমার ইমানের মাঝে এসে দাঁড়াত, ধর্মের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।’
জায়রা তার পোস্টে জানিয়েছেন, ক্রমাগত সেই বাধার সঙ্গে মানসিকভাবে লড়তে শুরু করেন তিনি। বারবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এমন একটা ফিল্ডে তার কাজের সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক এবং সেটা কখনও তার জীবনকে প্রভাবিত করবে না।
তবে ‘নিজের উপর থেকে সমস্ত বারাখা (আশীর্বাদ)’ হারিয়ে ফেলছিলেন বলে জানান জায়রা।
এরপর জায়রা লেখেন, ‘কোরানের বিশাল এবং ঐশ্বরিক জ্ঞানের মধ্যে আমি তৃপ্তি এবং শান্তি খুঁজে পেয়েছি। প্রকৃতপক্ষে হৃদয় তার সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান, তার গুণাবলী, তার করুণা এবং তার আদেশের জ্ঞান অর্জনে শান্তি পায়।’
নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বদলে আল্লাহ’র ওপরেই যে ভীষণভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন জায়রা, তার উল্লেখও রয়েছে পোস্টে।
এতদিন নিজের বিবেকের সঙ্গে প্রতারণা করে কীভাবে সৃষ্টিকর্তা দ্বারা সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে নিজের জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি, তারও উল্লেখ রেখেছেন ওই পোস্টে।
শেষে সবার প্রতি জায়রার উপদেশ, ‘সাফল্য, খ্যাতি, সম্পদ যে পর্যায়ে পৌঁছে যাক না কেন, তাতে যেন কখনো শান্তি এবং নিজের বিশ্বাস হারিয়ে না যায়’।
এর আগে ২০১৮ সালে নিজেকে ভীষণ অবসাদগ্রস্ত জানিয়ে পোস্ট করেছিলেন জায়রা।
সেই পোস্টে তিনি জানিয়েছিলেন, গত চার বছর ধরে দিনে পাঁচ বার করে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খেতে হয় তাকে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুম হয় না। এমনকি মানসিক অবসাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, কখনও কখনও তার আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন জায়রা।