26 C
Dhaka
এপ্রিল ৩০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
করোনা

কভিড-১৯-এর ক্ষত আজীবন থেকে যেতে পারে

সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৪০ বা ৫০-এর ঘরের মানুষ যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে তখন উদ্বেগ, দুশ্চিন্তার মতো সমস্যা তাদের পিছু ছাড়ছে না। ডাক্তাররা সতর্ক করে বলেছেন, কভিড-১৯-এর ক্ষত আজীবন থেকে যেতে পারে এবং স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।

গবেষণা জানাচ্ছে, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা প্রতি তিনজন রোগীর একজন আজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তার ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী অবসাদ ও নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধীরে ধীরে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি এমনকি আজীবনের জন্য ট্রমা তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে আছে মস্কিষ্কের বৈকল্য এবং অ্যালঝেইমারের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি।

ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেরে ওঠা ৩০ শতংশ রোগীর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে ৩৫ লাখ মানুষ কভিডে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে অন্তত ১০ লাখ মানুষ দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে।

এনএইচএসের কভিড রিকভারি সেন্টারের প্রধান দ্য টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, তিনি উদ্বিগ্ন কারণ করোনার প্রভাব কতটা দীর্ঘমেয়াদে রোগীকে আক্রান্ত করতে পারে, সে বিষয়ে তারা খুব সামান্যই জানেন।

এনএইচএসের সিকোল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল পরিচালক ডা. হিলারি ফ্লয়েড বলেছেন, তিনি এটা দেখে চিন্তিত যে ৪০ বা ৫০-এর কোটায় থাকা সুস্থ মানুষেরা আক্রান্ত হওয়ার পর এখন দীর্ঘমেয়াদে মানসিক অবসাদ ও বৈকল্যে ভুগছে। ‘তারা সবসময়ই এক রকমের দুর্বলতায় ভুগছে।’

ডা. হিলারি ফ্লয়েড আরো বলেন, ‘এরা স্বাধীন মানুষ ছিল, নিজের ব্যবসা চালাত, জিমে যেত, সাঁতার কাটত। সক্রিয় মানুষ ছিল কিন্তু এখন অনেকে বিছানা থেকেই উঠতে পারছে না।’

এনএইচএস জানাচ্ছে, কভিড-১৯-এর জন্য যাদের আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তাদের ১০ জনে একজনের হূদরোগের সমস্যা তৈরি হয়েছে। ডা. ফ্লয়েড জানাচ্ছেন, অনেকে অবসাদ ও শ্বাসকষ্টে এমনভাবে ভুগছে যে ১০ মিনিটের বেশি শারীরিক শ্রমমূলক কিছু করতে পারছে না।

অনেক কভিড রোগী তাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দুশ্চিন্তা তাদের গ্রাস করছে। ডা. ফ্লয়েড মনে করেন, এ সমস্যার সবচেয়ে ভয়ানক দিকটি হচ্ছে যে করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে খুব সামান্য কিছুই এখন পর্যন্ত জানা গেছে।

যুক্তরাজ্যের নিউ অ্যান্ড এমার্জিং রেসপিরেটরি ভাইরাস থ্রেটস অ্যাডভাইজরি গ্রুপের অধ্যাপক পিটার ওপেনশ বলেন, ‘কভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে তাদের সুস্থ হওয়ার পর ফলোআপ চিকিৎসা নেয়ার হার আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। যারা আগে অন্য রোগে আক্রান্ত ছিল তারা বেশ দীর্ঘমেয়াদে ভুগছে।’

অধ্যাপক পিটার ওপেনশ লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ইমিউনোলজিস্ট। তিনি বলছেন, কভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত প্রভাবের বিষয়টি সবেমাত্র পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তিনি মনে করেন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ১০ জন রোগীর একজন দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগবে।

এনএইচএস জানাচ্ছে, প্রতি তিনজন কভিড-১৯ সংক্রমিতের একজন দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগতে পারে। এ সমস্যা এর আগে দেখা দেয়া করোনাভাইরাসজনিত সমস্যাগুলোর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণেই সৃষ্ট সার্স ও মার্স আক্রমণে মানুষের মধ্যে মানস্তাত্ত্বিক ও ফুসফুসের সমস্যা দেখা গিয়েছিল।

আগামী মাস থেকে যুক্তরাজ্যে কভিড-১৯ আক্রান্ত সব রোগীর জন্য রিকভারি প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে। এতে সেরে ওঠার পরও বিভিন্ন লক্ষণে ভুগতে থাকাদের শনাক্ত ও চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এনএইচএস গাইডেন্স বলছে, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যারা আইসিইউতে চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের প্রতি সাতজনে একজন দীর্ঘমেয়াদে বা আজীবনের জন্য মস্তিষ্কের সমস্যায় ভুগতে পারে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগীর চিত্তবিভ্রম ঘটতে পারে।

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা কভিড আক্রান্তদের দীর্ঘমেয়াদে অবসাদে ভোগার সমস্যাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করেন এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা না করলে বড় ঝুঁকি থেকে যাবে।

পোস্ট-ভাইরাল সিকুইলি বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যানেট স্কট মনে করেন কভিড-১৯ আক্রান্তদের মূল সমস্যা শ্বাসযন্ত্রের। তাই একই রকম সমস্যায় ভোগা সাধারণ রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারব। শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে এমন রোগীদের যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের ৪০ শতাংশ পরবর্তী সময়ে দৈনন্দিন কাজকর্মে ফিরতে সমস্যায় পড়তে পারে। সার্সের ক্ষেত্রে সেরে ওঠার দুই বছর পরও অনেকের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা দেখা গেছে।

ডা. স্কট যোগ করেন, ‘অনেকে পোস্ট-ট্রমাটিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশনে ভুগতে পারেন।’ উত্তর লন্ডনে এমন অনেক রোগীর কথা জানা যাচ্ছে যারা কভিড থেকে সেরে ওঠার এক থেকে দেড় মাস পরও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে, যার মধ্যে আছে শ্বাসকষ্ট, কফযুক্ত কাশি ও অবসাদ।

সাফেকের বাসিন্দা লুইজি বার্নেস (৪৬) করোনা থেকে সেরে উঠেছেন তিন মাস আগে। কিন্তু এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখা, বমি বমি ভাব, বুক ভার হয়ে থাকার মতো সমস্যায় তিনি আতঙ্কিত। এসব শারীরিক সমস্যা তাকে একাকিত্বে ভোগাচ্ছে। তিনি অনলাইনে একটি সাপোর্ট গ্রুপও খুলেছেন, যাতে প্রায় এক হাজার সদস্য হয়ে গেছে, যারা সবাই লুইজির মতো সমস্যায় ভুগছে।

লন্ডনের স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক পিটার পিয়ট দুনিয়ার ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের অন্যতম। তিনিও কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন তিন মাস আগে। তাকে হাসপাতালে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। তিনি এখনো নানা সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ যারাই আইসিইউতে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করতে হতে পারে। তিনি বলেন, কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আসার পরও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়ে যাবে। আমার ক্ষেত্রে ফুসফুস অনেকটা স্থবির হয়ে গিয়েছিল এবং শ্বাস নিতে খুব সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যা কয়েক মাস ছিল। অনেকে কিডনির সমস্যায়ও ভুগতে পারে।

দ্য টেলিগ্রাফ

সম্পর্কিত পোস্ট

করোনা: বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে

banglarmukh official

বিশ্বে একদিনে করোনা শনাক্ত প্রায় ৫ লাখ, মৃত্যু ১১৫২

banglarmukh official

করোনায় মৃত্যুশূন্য দিনে শনাক্ত ২৯৯, হার ১৩.৬০ শতাংশ

banglarmukh official

করোনায় আরও ৪৫৪ মৃত্যু, শনাক্ত আড়াই লাখের নিচে

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় একদিনে ১১৮৯ মৃত্যু, শনাক্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় আরও ১১৭০ মৃত্যু, শনাক্ত সোয়া চার লাখ

banglarmukh official