অনিক রহমান ওরফে প্লেবয় অনিক চৌধুরী। দেখতে সুদর্শন যুবক। চাল চলনে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ছাপ। বরিশাল নগরী দাপিয়ে বেড়ান চাচা ডাঃ মজিবুর রহমান রিপন ওরফে এমআর চৌধুরী বিলাশবহুল গাড়ী নিয়ে। বসবাস করেন নগরীর চৌমাথা সিএন্ডবি রোড চাচার আলিশান বাড়ী চৌধুরী প্যালেসে। বখাটে ওই যুবক কোন চাকরি না করলেও নিজেকে একটি বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয় থেকে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার পাস করা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বরিশাল নগরীতে ঘুড়ে বেড়ায়। নিজের সুদর্শন চেহারা আর চাচার গাড়ী বাড়ী দেখিয়ে একের পর এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। এরপর মেয়েদের বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পরে মেয়ের পরিবারকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়ের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করে। মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করে সবকিছুই মোবাইল ফোন এবং গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতো।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৮ টার দিকে নগরীর লাইন রোডের মুখে সদর রোডে একটি মেয়েকে মারধর করে বখাটে অনিকসহ ৪/৫ যুবক। এ সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তাদের উপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। উপস্তিত জনতা বখাটে অনিককে গণধোলাই দেয়। পরে সংবাদকর্মীরা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে এবং বখাটে অনিককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এরপরই থানায় ছুটে আসে বখাটে অনিকের বাবা অনিচুর রহমান ওরফে বাবুল চৌধুরী ও ডাঃ মজিবুর রহমান রিপন ওরফে এমআর চৌধুরীসহ তাদের বন্ধু প্রভাবশালী এক পুলিশ কর্মকর্তা। তারা বখাটে অনিককে থানা হাজত থেকে ছাড়িয়ে নিতে জোর লবিং তদ্বির চালায়। হামলার শিকার ছাত্রীটি তার উপর হামরার ঘটনার বিচার চেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহ্ফুজুর রাহমানকে ফোন দিয়েছে বলে ভুক্তভুগী ওই ছাত্রী জানায়। এর পরই কঠোর অবস্থানে যায় পুলিশ। এরপর অনিকের বিরুদ্ধে থানায় নির্যাতনের এজাহার দাখিল করে ওই ছাত্রী। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ রাতেই ডাক্তার মজিবুর রহমান রিপন ওরফে এমআর চৌধুরীর সিএন্ডবি রোডের চৌধুরী প্যালেসে অভিযান চালিয়ে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করে।
পরে শুক্রবার দুপুরে আইটি বিষয়ে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার জিহদ রানাকে থানায় খবর দেয় কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) আসাদুজ্জামান। ইঞ্জিনিয়ার জিহাদ রানা জানান, বখাটে অনিকের গুগল ড্রাইভ ও গুগল ফটো ড্রাইভে প্রায় ৮/১০ টি মেয়ের ৪ হাজার অশ্লীল ছবি ছিল। এগুলো পুলিশের উপস্তিতিতে বখাটের অনিকের বাবা মা ও আত্মীয় স্বজন ও পুলিশের সামনে ডিলিট করে দেয়া হয়েছে। বিয়ের প্রলোভনে ছাত্রীদের সাথে মেলামেলা করে ঘনিষ্ট মূহুর্তে ছবি ও ভিডিও করে অর্থ আদায় করাই বখাটে অনিকের ব্যবসায়।
ভুক্তভুগী ছাত্রী অভিযোগ করেন-বখাটে অনিক তাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। এরই মধ্যে সে জানতে পারে বখাটে অনিক মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে এবং তাদের ছবি ও ভিডিও করে রেখে তাদের ব্লাক মেইলিং করে অর্থ আদায় করে। সে বখাটে অনিককে বুঝতে না দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ রাখে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় নগরীর কালীবাড়ীর মুখে সদর রোডে একটি মেয়ের হাত ধরে যাচ্ছে। মেয়েটি কে জিজ্ঞাসা করলে সে ওই ছাত্রীকে না চেনার অভিনয় করে। এ সময় বখাটে অনিকের হাত ধরে থাকা এইচএসসি পড়–য়া তাজ নামের ওই মেয়েটিকে হামলার শিকার ছাত্রী জানায় তাকে বিয়ের জন্য অনিক প্রতিদিন তার বাসার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কান্না করে। এ সময় বখাটে অনিক ছাত্রীটির উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
পরে বখাটে অনিকের বাবা ও চাচা এবং কয়েকজন প্রভাশালীর চাপের মুখে থানায় দাখিল করা এজাহার তুলে নেয়।
তবে পুলিশ সূত্র ও ভুক্তভুগী ছাত্রী জানিয়েছে বখাটের অনিক, তার বাবা আনিসুর রহমান ওরফে বাবুল চৌধুরী তার চাচা থানায় ৬শ টাকার স্টাম্পে অঙ্গীকার নামা দিয়েছে। অঙ্গীকার নামায় অনিক ও তার বাবা-চাচা উল্লেখ করেছে- অনিক বিয়ের প্রলোভনে কোন ছাত্রীর সাথে এ ধরণের সম্পর্ক তৈরি করে অশ্লীল ভিডিও ও ছবি তৈরি করে অর্থ আদায় করবে না। এরপর বখাটে অনিক ভুক্তভুগী ছাত্রীর পা ধরে কান্নাকাটি করে মাফ চায়।
এ ব্যাপারে কোতয়ালী থানার এসি শাহনাজ পারভীন সাংবাদিকদের জানান-অনিক একটি বখাটে ছেলে। ভুক্তভুগী ছাত্রীটি এজাহার তুলে নিয়েছে। এ কারণে বখাটে অনিককে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যায়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ওই কলেজছাত্রীর বরাত দিয়ে জানিয়েছেন- অনিক ভুক্তভুগী ওই ছাত্রীর পাশাপাশি আরও একটি ছাত্রীর সাথে প্রেম করত। এ দৃশ্য দেখে ফেলে ওই ছাত্রী। এ নিয়ে কথাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রীটিকে মারধর করে অনিক। ছাত্রী এজাহার তুলে নিয়েছে। অনিক ও তার পরিবার স্টাম্পে অঙ্গীকার করেছে এ ধরনের অপরাধ আর করা হবে না। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নগরীর কোতয়ালী থানার সামনেই একটি ছাত্রীকে মারধর করা বখাটে