বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে বরিশাল রাজনীতির মাঠ। বৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়াও নড়েচড়ে বসেছে উভয়জোটের শরিকদলগুলো।
ইতিমধ্যেই নির্বাচন কৌশল নির্ধারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকারও নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা।
আর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই বরিশালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলীয় প্রতীক প্রত্যাশী হলেও মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে প্রার্থীতা। তবে স্থানীয়ভাবে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ, সিপিবি-বাসদ প্রার্থীতা চূড়ান্ত বলে দাবি করছে। কিন্তু বিএনপি প্রায় চুপচাপই রয়েছে এখনও।
সেইসঙ্গে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। তাদের দাবি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হবে।
নির্বাচন কমিশন অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২৫ বর্গ কিলোমিটারের পৌর এলাকাকে নিয়ে ২০০২ সালের ২৪ জুলাই বিসিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে ২০০৩ সালে প্রথম মেয়র হন বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় পরিষদে মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক প্রয়াত অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরন। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে তাকে পরাজিত করে বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল নির্বাচিত হন।
চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ হবে বিসিসি মেয়রের কার্যকাল। গত ২৯ মে নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করে দিয়েছে কমিশন। আগামী ৩০ জুলাই হবে বিসিসি নির্বাচন।
নির্বাচনের বিষয়ে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় আমরা যেমন আনন্দিত, তেমনি বরিশাল মহানগরের মানুষ উৎফুল্ল। প্রায় দুই বছর আগ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে ইতিমধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রার্থীর বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রার্থী হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে মিটিং
করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে রোজার আগে থেকে আমরা ইউনিট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। বরিশালে ১০৪টি কেন্দ্র রয়েছে, সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
তিনি বলেন, নৌকার যখন বিজয় হয়, তখন মানুষ কিছু পায়। আর নৌকার যখন পরাজয় হয়, তখন মানুষ হতাশায় পরে যায়। আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বরিশালের জনগণ নৌকার পক্ষে আসন্ন ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে সমর্থন দেবে।
এদিকে, নির্বাচনী কৌশলগত কারণে অনেক কিছুই খোলাসা করে বলতে নারাজ বিএনপি। তবে সিটি নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে বিএনপি প্রস্তুত বলে দাবি করেছেন বিএনপি’র বরিশাল জেলা দক্ষিণের সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী এবায়েদুল হক চাঁন।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সেন্টার কমিটি গঠন করা শুরু করে দিয়েছি। আমাদের কিছু নির্বাচনী কৌশল রয়েছে, সবকিছু আমরা আগাম বলতে পারছি না। আমরা নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। তবে খুলনার দিকে যদি তাকাই তবে নির্বাচন ফেয়ার আশা করতে পারি না। বাইরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এই শহরে আসবে প্রচার-প্রচারণা চালাবে এটা হয় না। আমাদের দাবি ভোটারের বাইরে কোনো লোক এখানে আসতে পারবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী দিতে হবে।
বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টি ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের ভোটের কেন্দ্র কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়ার মধ্য দিয়ে এবার নির্বাচনী যুদ্ধে জাতীয় পার্টি থাকবে এবং আমরা জয়লাভ করব বলে বলেন তিনি।
জেলা নির্বাচন অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন খান বলেন, মাঠ পর্যায়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ভোটার তালিকা আমরা হাতে পেয়েছি। ভোট কেন্দ্রের খসরা আমরা প্রস্তুত করেছি। কমিশনের নির্দেশনা পেলে আমরা এটা প্রকাশ করব। শুনানি গ্রহণের মাধ্যমে যা চূড়ান্ত করা হবে। আশাকরি আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম হবো।
২০১৩ সালের বিসিসি নির্বাচনে বরিশালের ভোটার ছিলেন দুই লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন, আর বর্তমানে হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ৪১ হাজার ৯৫৯ জন। যা গতবারের চেয়ে ৩০ হাজার ৭০২ জন বেশি।