এপ্রিল ২২, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় রাজণীতি স্বাস্থ বার্তা

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ যায় কোথায়?

সারাদেশে দেড় লক্ষাধিক ফার্মেসিতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয়। নিয়ম অনুযায়ী ফার্মেসি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংগ্রহ করে এর একটি তালিকা তৈরি করা। এরপর নির্দিষ্ট দিনে তা ধ্বংস করে এই রিপোর্ট ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা দিতে হয়। কিন্তু উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা কখনই এ প্রতিবেদন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা দেন না।

অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আগুনে পুড়িয়ে ফেলা কিংবা এর কোনো তালিকা কখনই ওষুধ প্রশাসনে জমা পড়েনি বলে স্বীকার করেন।

সারাদেশে ওষুধ প্রশাসনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বৈধ ফার্মেসি সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। জনশ্রুতি রয়েছে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত বৈধ ফার্মেসি সংখ্যার চেয়ে অবৈধ ফার্মেসির সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে এসব ফার্মেসির মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ যায় কোথায়?

সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর শতকরা ৯৩ ভাগ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রয়েছে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও ভীতিজনক এ তথ্য প্রকাশিত হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আদালতে রিট হয়। আদালত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ তুলে ফেলার নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশের পর টনক নড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। বহুল আলোচিত এ বিষয়টি নিয়ে মহাখালী ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, আমদানিকারক ও কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত নেয়া না নেয়া নিয়ে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতাদের বাগবিতণ্ডা হয়। কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতারা জানান, ওষুধের মেয়াদ ফুরানোর আগেই ফার্মেসির মালিকরা কোম্পানির কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফিরিয়ে দিয়ে নতুন ওষুধ দেয়ার কথা সব সময় বলে আসছেন। কিন্তু ওষুধ ফিরিয়ে নেয়া কিংবা নতুন দেয়া কোনোটাই তারা করেন না।

অন্যদিকে উৎপাদনকারী ওষুধ প্রতিষ্ঠান ও ওষুধ আমদানিকারকরা বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা ও কমিশনের লোভে ফার্মেসিগুলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ মজুত করে। ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভরা বারবার নিষেধ করলেও তারা মানে না। এ কারণে ওষুধ ফিরিয়ে নেয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তবে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পৃথক স্থানে সরিয়ে ফেলা কিংবা ধ্বংস করে ফেলার পরামর্শ সব সময় দেন।

অভিযোগ রয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসিতে নতুনভাবে মেয়াদের তারিখ বসিয়ে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে কঠোরতা না থাকায় খুব সহজেই মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।

তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। ফার্মেসিতে ওষুধের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে সেগুলো পৃথকভাবে রেখে সেখানে বিক্রয়ের জন্য নয় লিখে রাখতে হবে। পরবর্তীতে তা কোম্পানিকে ফেরত দিতে হবে।

তিনি বলেন, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সব সময় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গত ছয় মাসে বিভিন্ন ফার্মেসিতে অভিযানকালে চারশ মামলা হয়েছে এবং ৮১ লাখের বেশি টাকা জরিমানা হয়েছে। এ সময় প্রায় ২৩ লাখ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ ও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে কোম্পানিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজার থেকে তুলে তা ধ্বংস করার কোনো তালিকা পর্যন্ত দেয়নি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official