এপ্রিল ২৯, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ শিক্ষাঙ্গন

যৌনপল্লীর বাচ্চারাও পড়াশোনা করবে, উদ্যোগ নিলেন সুমি দাস

কোচবিহার নিবাসী অরিন্দম দাস, সুমি হিসেবেই পরিচিত। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে প্রান্তিক লিঙ্গ এবং দলিত রূপান্তরকামী মানুষের অধিকার এবং জীবিকা নিয়ে কাজ করছেন। এই মুহূর্তে মৈত্রী সংযোগ সোসাইটি নামক একটি এনজিও’র প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন। স্টেশনে রাত কাটানো, যৌন পেশায় যুক্ত হওয়া থেকে আস্ত একটি এনজিও তৈরি করা- লড়াইটা খুব একটা সুখকর ছিল না। এবার সেই সুমি একটি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন।

গত একমাস ধরে যৌনপল্লীর ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের বিনা পয়সায় পড়াশোনা শেখাচ্ছেন তিনি। গত ৬ মে থেকে কাজটি শুরু করেছেন। মৈত্রী সংযোগ সোসাইটি থেকে কোচবিহারের যৌনপল্লীর প্রায় কুড়ি জন বাচ্চাকে ওখানেই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন বিকালে এই কাজটি করা হচ্ছে। বিকেলে সাধারণত বাচ্চাদের মায়েরা নিজেদের পেশার কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে সুমি দাসের টিম এমন উদ্যোগ নিয়েছে। বিকেল ৪টে থেকে সন্ধে ৭টা। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন সবার জন্য টিফিনের ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া শুধুমাত্র পড়াশোনাই নয়, নাচ-গান-ছবি আঁকা সবকিছুই যুক্ত রয়েছে সেখানে। সুমি দাস আমাদের জানান, “আমার মনে হয় ট্রান্সজেন্ডার মানুষের মতোই যৌনকর্মীদের বাচ্চারাও এই সমাজে বঞ্চিত। তাদের যদি একটু ভালোবাসা যায়, আপন করে নেওয়া যায়, তা আমাদের সমাজের জন্যই ভালো। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। আমি চাই না কোনো পরিস্থিতিতেই ওরা বঞ্চিত হয়ে থাকুক। আমাদের এই উদ্যোগে হাত মিলিয়েছে সংলাপ সংগঠন।”

সুমি (অরিন্দম) দাসের জন্ম কোচবিহারের দিনহাটা নামের একটি গ্রামে। এমন একটি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়, যেখানে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই অনেক বড়ো ব্যাপার। সেখানে বড়ো হয়ে উঠে নিজের সত্তাকে প্রকাশ করার কোনো জায়গা ছিল না। চৌদ্দ বছর বয়সে সুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তখন যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। প্রথম আশ্রয়স্থল হল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। স্টেশনেই বেশকিছু রাত কাটান। খাবারের জন্য তাঁকে যৌনকর্মীর পেশা বেছে নিতে হয়েছিল। তারপরেই সুমি যুক্ত হন একটি এনজিওর সঙ্গে। সুমি বলেন, “গ্রামের আবহাওয়াটাকে অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। বাইরের কারোর সঙ্গে মেশার কোনো সুযোগ ছিল না। আর মেয়েলি হওয়ার জন্য স্কুল-কলেজে সমস্যা তো হয়েই থাকে। আমার চোখটা কিন্তু খুলেছিল শিলিগুড়ি শহরে। তাই গ্রামের পরিবেশ খুব একটা ম্যাটার করেনি। নিজে যেখানে যৌনকর্মী হয়ে টাকা উপার্জন করতে শিখেছিলাম, সেখানে আমার উচিত তাদের বাচ্চাদের জন্যেও কিছু করা। সেই থেকেই এই ভাবনা।”

 

আসলে গ্রামের সমস্যাটা একটু অন্য ধরনের। শহরের একটা সুবিধা হল আমরা সায়েন্স সিটিতে কী করছি, সেটা বালিগঞ্জের লোকটা জানতে পারছে না। এমনকি আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের লোকটাও জানে না। কিন্তু গ্রাম যেহেতু একটা ছোট্ট পরিসর, সেখানে সবাই আমাদের খবর রাখছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষমতাটা খুব কম। সুমিদের মূল লক্ষ্য হল জীবিকা। একটা মানুষ তখনই স্বনির্ভর হতে পারে, যখন তার হাতে টাকা থাকে। একমাত্র অর্থই পারে সমস্ত অপবাদ ঢেকে দিতে। তাই তাঁরা মৈত্রী সংযোগ সোসাইটি থেকে বিভিন্নরকম হাতের কাজ করে থাকেন। এবছর থেকে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও করছেন। এনজিও’র সবাইকে তাই জীবিকার উপরেই জোর দিতে বলছেন তিনি। সুমিদের এমন একটি উদ্যোগকে কি সাধুবাদ না জানিয়ে থাকা যায়! ঘরে ঘরে হাজার হাজার সুমি জন্ম নিক আর এইভাবে মানুষের পাশে থাকুক তাঁরা। পৃথিবীটা যে আসলে অনেকটা বড়ো। সমাজটাও।

সম্পর্কিত পোস্ট

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

অটোরিকশায় ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভিডিও ভাইরাল

banglarmukh official

বগুড়ায় স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

banglarmukh official

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের

banglarmukh official

বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার শিশু, ভগ্নিপতি ও শ্বশুর আটক

banglarmukh official