কোচবিহার নিবাসী অরিন্দম দাস, সুমি হিসেবেই পরিচিত। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে প্রান্তিক লিঙ্গ এবং দলিত রূপান্তরকামী মানুষের অধিকার এবং জীবিকা নিয়ে কাজ করছেন। এই মুহূর্তে মৈত্রী সংযোগ সোসাইটি নামক একটি এনজিও’র প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন। স্টেশনে রাত কাটানো, যৌন পেশায় যুক্ত হওয়া থেকে আস্ত একটি এনজিও তৈরি করা- লড়াইটা খুব একটা সুখকর ছিল না। এবার সেই সুমি একটি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন।

সুমি (অরিন্দম) দাসের জন্ম কোচবিহারের দিনহাটা নামের একটি গ্রামে। এমন একটি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়, যেখানে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই অনেক বড়ো ব্যাপার। সেখানে বড়ো হয়ে উঠে নিজের সত্তাকে প্রকাশ করার কোনো জায়গা ছিল না। চৌদ্দ বছর বয়সে সুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তখন যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। প্রথম আশ্রয়স্থল হল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। স্টেশনেই বেশকিছু রাত কাটান। খাবারের জন্য তাঁকে যৌনকর্মীর পেশা বেছে নিতে হয়েছিল। তারপরেই সুমি যুক্ত হন একটি এনজিওর সঙ্গে। সুমি বলেন, “গ্রামের আবহাওয়াটাকে অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। বাইরের কারোর সঙ্গে মেশার কোনো সুযোগ ছিল না। আর মেয়েলি হওয়ার জন্য স্কুল-কলেজে সমস্যা তো হয়েই থাকে। আমার চোখটা কিন্তু খুলেছিল শিলিগুড়ি শহরে। তাই গ্রামের পরিবেশ খুব একটা ম্যাটার করেনি। নিজে যেখানে যৌনকর্মী হয়ে টাকা উপার্জন করতে শিখেছিলাম, সেখানে আমার উচিত তাদের বাচ্চাদের জন্যেও কিছু করা। সেই থেকেই এই ভাবনা।”
আসলে গ্রামের সমস্যাটা একটু অন্য ধরনের। শহরের একটা সুবিধা হল আমরা সায়েন্স সিটিতে কী করছি, সেটা বালিগঞ্জের লোকটা জানতে পারছে না। এমনকি আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের লোকটাও জানে না। কিন্তু গ্রাম যেহেতু একটা ছোট্ট পরিসর, সেখানে সবাই আমাদের খবর রাখছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষমতাটা খুব কম। সুমিদের মূল লক্ষ্য হল জীবিকা। একটা মানুষ তখনই স্বনির্ভর হতে পারে, যখন তার হাতে টাকা থাকে। একমাত্র অর্থই পারে সমস্ত অপবাদ ঢেকে দিতে। তাই তাঁরা মৈত্রী সংযোগ সোসাইটি থেকে বিভিন্নরকম হাতের কাজ করে থাকেন। এবছর থেকে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও করছেন। এনজিও’র সবাইকে তাই জীবিকার উপরেই জোর দিতে বলছেন তিনি। সুমিদের এমন একটি উদ্যোগকে কি সাধুবাদ না জানিয়ে থাকা যায়! ঘরে ঘরে হাজার হাজার সুমি জন্ম নিক আর এইভাবে মানুষের পাশে থাকুক তাঁরা। পৃথিবীটা যে আসলে অনেকটা বড়ো। সমাজটাও।