বাংলাদেশ সরকারের STEP (Skills and Training Enhancement Project ) প্রকল্পের আওতায় সরকারি এবং বেসরকারি মোট ৫৭টি পলিকেটনিক ইনষ্টিটিউটকে কয়েক কোটি টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। অনুদানের এই বিপুল অংকের টাকা দিয়ে এসব পলিটেকনিক দেশের কারিগরি শিক্ষার প্রচার, প্রসার ও উন্নয়নের জন্য কাজ করবে বলে অনুদান দেয়া হয়। এসকল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের মধ্যে ৩৭টি সরকারি ও ২০টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট। এসকল প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হবে বিভিন্ন কাজের জন্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ১৭ই মার্চ ২০১৯ তারিখে ৫ম, ৭ম ও ৮ম অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করে। বোর্ডের এই ফলাফল বিশ্লেষন করে অনুদান প্রাপ্ত সরকারি বেসরকারি পলিটেকনিকের ফলাফলের করুন চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক সরকারি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে পাশের হার ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ।
অন্যদিকে অধিকাংশ অনুদান প্রাপ্ত বেসরকারি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের ৫ম পর্বের ফলাফল ভয়াবহ রকমের খারাপ। অনুদান প্রাপ্ত বেসরকারি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের মধ্যে সব থেকে খারপ ফলাফল করেছে যশোর বিসিএমসি প্রযুক্তি ও প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়, এই পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে ২১৮ জন ৫ম পর্বে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মাত্র ১৯ জন পাশ করেছে, ১৪৪ জন অকৃতকার্য এবং ৫৫ জন ড্রপআউট হয়েছে। ফলাফলে খারাপে এরপরে রয়েছে খুলনার খানজাহানআলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়, স্টেপ প্রকল্পের শেষ মেয়াদে এই কলেজটি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের ৫ম পর্বের ফলাফলে দেখা যায় এই কলেজ থেকে ১৩৩ জন শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ৫ম পর্বের সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থী সকল বিষয়ে পাশ করেছে, অকৃতকার্য হয়েছে ৯৫ জন এবং ২৬জন শিক্ষর্থী ৪টি বা তার বেশি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে এক বছরের জন্য ড্রপআউট হয়েছে। গোপালগঞ্জ মডেল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে সরকারি অনুদান পেলেও এই প্রতিষ্ঠানে ৫ম পর্বে পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র ৩৭ জন শিক্ষার্থী। এত কম সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে কিভাবে অনুদান প্রাপ্ত হয় বা কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে তাদের ভূমিকা কি এটি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। গোপালগঞ্জ মডেল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে পাশের হার ১০.৮১% এখানে ৩৭ জনে মাত্র ৪ জন কৃতকার্য হয়েছে।


ষ্টেপ প্রকল্প থেকে প্রথম দিকে অনুদান পায় রাজশাহীর বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিউট, এই প্রতিষ্ঠানের এবারের ৫ম পর্বের ফলাফলে ২৪৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে মাত্র ৩৫ জন কৃতকার্য হয়েছে যার পাশের হার ১৪.১১%। ঢাকাস্থ ইনষ্টিটিউট অব সাইন্স ট্রেড এন্ড টেকনোলজির পাশের হার ১৫.৬৯%, যশোর মডেল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের পাশের হার ১৮.৮৪%, ঢাকা শ্যামলি আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনিষ্টিটিউটে পাশের হার ১৯.১০%, ফরিদপুর গ্রাসরুট কলেজ অব টেকনোলজির পাশের হার ২০%
পার্যাক্রমে অনুদান প্রাপ্ত অন্যান্য বেসরকারি পলিটেকনিকে পাশের হারঃ
সরকারি কয়েক কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার পরে চারটি প্রতিষ্ঠানে ৫ম পর্বে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই স্বল্প সংখ্যক। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ মডেল পলিটেকনিকে মাত্র ৩৭ জন, ঢাকা ওয়েষ্টার্ন আইডিয়াল ইনষ্টিটিউটে ৪২ জন, ঢাকা ইনষ্টিটিউট অব সাইন্স ট্রেড এন্ড টেকনোলজিতে ৫১ জন, মডেল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট যশোরে ৬৯ জন এবং ফরিদপুর গ্রাসরুট কলেজ অব টেকনোলজিতে ৮০ জন। দেশে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি অনুদান প্রাপ্ত হয়েও তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পারছে কি না সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।
অন্যদিকে ফলাফলে খারাপরে বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নতুন প্রবিধান ও কলেজের পরিচর্চা জনিত সমস্যার কারনে এরকম ফলাফল। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস ও শিক্ষকের ঘাটতি আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের ম্যানেজমেন্ট থেকে কেবলমাত্র ২০১৬ সালের নুতন প্রবিধানের কারনে ফলাফলের ধ্বস বলে জানানো হয়।