অনলাইন ডেস্ক :
স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন দুই কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান। দুইদিন ধরে চেষ্টার পর অবশেষে চতুর্দশ স্প্যান ‘৩সি’ বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ২১০০ মিটার (২.১ কিলোমিটার)।
ড্রেজিং করে পলি অপসারণ ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দুইদিন স্থগিত থাকার পর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের উপর বসানো হয়েছে স্প্যানটি।
একের পর এক স্প্যান বসিয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে চলছে পদ্মাসেতুর। গাড়ি ও ট্রেনে চড়ে পদ্মা পাড়ি এখন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নেওয়ার পথে। ত্রয়োদশ স্প্যান বসানোর এক মাস তিন দিনের মাথায় স্থায়ীভাবে বসলো এই চতুর্দশ স্প্যানটি।
রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ২৭টি স্প্যান বসলেই।
শনিবার (২৯ জুন) বিকেল ৪টায় স্প্যানটি মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের ওপর দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সফলভাবে বসেছে। তৃতীয় মডিউলের তিন নম্বর স্প্যান এটি। সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো ‘৩-বি’ স্প্যানের পাশেই বসেছে ‘৩সি স্প্যানটি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের আর ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করে নিয়ে আসে তিন হাজার ৬শ’ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন। এরপর অবস্থান নেয় ১৪ নম্বর পিলারের কাছে।
জানা যায়- দুই পিলারের মধ্যবর্তী সুবিধাজনক স্থানে এনে ভাসমান ক্রেনটিকে নোঙর করা হয়। এরপর পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিং এর ওপর। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রকৌশলীরা স্প্যানটি বসাতে সক্ষম হন।
পদ্মাসেতুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় বিকেল ৪টায় ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের উপর ‘৩সি’ স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়। চতুর্দশ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
পদ্মাসেতুর প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুর নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ২৯টি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের স্প্যানগুলোতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। চীন থেকে আরো দুইটি স্প্যান মাওয়ার পথে আসছে।
জাজিরা প্রান্তে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। দেড় মাস পর ১১ মার্চ এ ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। দু’মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। তারপর ছয় মাস ২৫ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। এর ২৮ দিনের মাথায় ২০ ফেব্রুয়ারি বসে সপ্তম স্প্যান। এর একমাস পরে ২২ মার্চ বসে অষ্টম স্প্যানটি। এরপর ১০ এপ্রিল বসে দশম স্প্যান। এর ১৩ দিনের মাথায় ২৩ এপ্রিল বসে একাদশ স্প্যান। এর ১২ দিনের মাথায় দ্বাদশ স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে বসে ৫ মে। আর মাওয়া প্রান্তে একটি মাত্র অস্থায়ী স্প্যান বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর।
পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।