22 C
Dhaka
নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
লেখার কিছু সাহিত্য পাতা

আমি একা

-পয় মাহমুদ :
আমার একটা মারত্বক দোষ আছে। অনেকদিনের পুরানো দোষ। বেশ কিছুক্ষন একা থাকলেই নিজের মনে-মনে কথা বলি বা হেসে উঠি। রাস্তায় একা একা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি গাছের সঙ্গে, পাশা খেলার রঙিন ছকের মতন বিস্তিুৃত শস্যক্ষেতের সঙ্গে, দিকচক্রবান পর্যন্ত বিস্তিৃত আকাশের সঙ্গে, যে কোন প্রানির সঙ্গে এবং নিজের সঙ্গে। এতে যথার্থ আনন্দ পাই, মনের মধ্যে তিরতির করে ভালোলাগার একটা অনুভুতি। সর্বদাই বেড়াতে বের হতাম একা একা। নিজের মনে খেলা করতে ভালোলাগে। লোকালয় আমার একটুও ভালো লাগে না, অসহ্য লাগে। আর এ জীবনে এমন কাউকে পাই নি, এমন কেউ ছিল না Ñ যার সঙ্গে প্রান খুলে কিছুক্ষন গল্প করা যায়। মাঝে মাঝে সর্তষ্ণভাবে তাকিয়েও থাকতাম আমার বয়েসী ছেলেদের আড্ডা দেখে। এক সময় মনে হয় আমার জীবনটা নেহাৎ অকিঞ্চিৎকরম উদ্দেশ্যহীন ব্যর্থ। তবুও লাজুক থাকার কারনে যেচে করো সঙ্গে কথা বলা বা আলাপ করা আমার স্বভাবে মোটেই াছল না। কী সাঙ্গাতিক অসহায় একাকিত্বে কাটছে আমার জীবন, কত বড় একা আমি, তা শুধু আমি জানি। তবে বেড়াতাম নিয়মিত। হোস্টেলে এসেও একাই হাঁটতাম। তবে বিকেল বেলা রাস্তায় হাটার সময় একটা বাড়ি দেখে আমার চোখ আটকে যেত। বাড়িটা ছিল বড় মোহময় রহস্যময়। মন বলছিল, এখানে বিশেষ কাউকে খুঁজে পাবে। মানুষের ইনস্টিংকট বোধ হয় কখনো কখনো ভবিষ্যৎ ঘটনারও আচ পায়। তখন এ কথা আমার মনে ঘুনাক্ষারেও জাগে নি। তবে প্রতিদিন দেখতে দেখতে তিব্র আকর্ষন হয়েছিল বাড়িটা ওপর। আমার খুব অদম্য ইচ্ছে হতো বাড়িটার ভিতরে কি আছে তা অন্তত একবার দেখার জন্য। সেই অবাক অবাক ভাবের দৃশ্যটা আমার বুকের মধ্যে আজও গেথে আছে। কারন আমি ভিরু ভিরু রহস্যময় জদৎ থেকে এই প্রথম কঠিন বাস্তব জগতে পা দিয়েছি। ভিন্ন জগতের পর্ব এখান থেকে শুরু হয়েছিল। প্রথম প্রথম নানা দিকে যেতাম। কখনো ঘুরতাম মাঠের মধ্যে একা আনমনে। কিন্তু ঐ বাড়িটা দেখার পরে আমার মন এমন কৌতুহল আকর্ষন করে নিল যে প্রতিদিন বিকালে ঐ রাস্তায় যেতাম। আর বাড়ির সামনে দিয়ে খুব আস্তে আস্তে যেতাম। হোস্টেলে অবস্থানকালে মনে হতো সব থেকে ঐ বাড়িটাই আমার একামাত্র আকর্ষণ। লেখাপড়ায় মন বসছে না। তাই বসেই রইলাম মাঠে। অস্পষ্ট জোৎ¯œা উঠছে সন্ধ্যা বেলাতেই। আকাশে অসংখ্য তারায় তারাময়। অল্প অল্প বাতাসে ভেসে আসছে নানা রকম ফুলের মিষ্টি মৌ মৌ গন্ধ। ভারি সুন্দও লাগছিল বলেই একাকিত্বেও কষ্টটা আরও মর্মস্পশী হয়ে উঠছিল। এ সময়ে হঠাৎ মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। মনে হল এ পৃথিবীতে আমার কোন বন্ধু নেই। কেউ আমাকে ভালোবাসেনা। আমার কথা কেউ ভাবে না। এ পৃথিবীতে আমি সম্পুর্ন একা। আমার আত্মীয়স্বজনের জগৎ ছাড়াও অন্য একটা আকাশ দরকার। একজনও বন্ধু না থাকলে কেউ বাচতে পারে নাকি! তখনই চোখে ভেষে উঠলো সে বাড়িটা। সে সময় বাড়িটা ঘুরে দেখার একটা দারুন দুর্দমনীয় বাসনা আমার মধ্যে জেগে উঠলো। মাথার মধ্যে ঝোকটা এমনভাবে চাপছে কিছুতেই আর মন থেকে তাড়াতে পারি নি। তন্ময় হয়ে ভাবি কি আছে সে বাড়ি। এত ভাবি অথচ ও বাড়িটা আমাকে কি দিচ্ছে! কিছুই না। তবে নিজে ভেবে ভেবে কেন কষ্ট পাচ্ছি! হঠাৎ প্রায় কান্না এসে গেল আমার। কোন বন্ধু নেই আমার। কেউ ভালোবাসে না আমাকে। দুই দিন পর ভাবলাম, হামিদদের বাড়িই তো ঐটা। তাই তো, কি বোকা আমি! ওর সাথে দেখা করতে যেতেই পারি।
কতদিন নিমন্ত্রন করেছে কিন্তু যাই নি। এখন গেলেও কেউ বাধা দেবে না;বরং যতœই করবে। বুকের মধ্যে দুপদুপি নিয়ে হাটছি সে বাড়ির দিকে। সৌভাগ্যবশত ইতিমধ্যে পথে দেখা হলো হামিদের সাথে। জোর করেই নিয়ে গেল ওদের বাড়ি। এক একটা কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় একই সঙ্গে আনন্দ হয় আবার ভয়ও হয়। যেমনি খুশি হয়েছিলাম মনে মনে, তেমনি ভয়ও করতে লাগল আবার। হামিদদের ঘরে যেতেই দেখতে পেলাম এক নারীকে। যার বসে থাকার ভঙ্গিতেও একটা অদ্ভুত বিশেষত্ব ছিল। আমাকে দেখে উঠে যাবে এমন সময় হামিদ বলল, বস। তোর সাথে যে ঘরকুনো হিমেলের বথা বলছিলাম সে ও। জোর করে নিয়ে আসছি। ওর ওকান বন্ধু নেই। বাড়ি ছেরে কিছু দিন পুর্বে এই প্রথম হোষ্টেলে উঠছে। শরীর থেকে জ্বর ছেড়ে যাবার মত আমার ভয় কেটে গেল; স¦াভাবিক হলাম। হামিদ মেয়েটির দিকে ইশারা করে বলল, ওকে চেন? আমি ঘার হেলিয়ে বললাম, হ্যাঁ। মাস তিনেক আগে ছবি বেরিয়ে ছিল। তাকে তো সবাই চেনে। লেখাপড়ায় এ বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে সেই আনিকাই তো! অনেক জায়গায় তার ছবি আমি দেখেছি। আনিকা বোধ হয় একটু লজ্জা পেল। তারপর কথা ঘোরাবার জন্য বলল, তুমি কেন একা একা থাক! বাড়ি ঘর ছেড়ে অপরিচিত স্থানে আনছ তাই! কিন্তু আমরা তো আছি। পুরো বিকালটা গল্প করার পর বললাম, আমি যাই। হামিদ আসতেই দেবে না তবে আনিকা বলল, আজকে তোমাকে আর আটকাবো না। তুমি সময় পেলেই এসো। আর কথা দিয়ে যেতে হবে কালকে বিকালে আসবে। আমি বললাম, হ্যাঁ, আসব। সেই রহস্যময় বাড়িটার দরজা আমার জন্য খলে গেল। আমে সেখানে আবারও প্রবেশ করার অধিকার পেলাম। এবং হামিদ ও বিশেষ নামকরা জলজ্যান্ত বিখ্যাত নারী আনিকা আমার সাথে বন্ধুর মতন হেসে কথা বলছে। সে সময় কেন যে এত ভালো লাগছিল আমার! কিছুই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছিল সমস্ত পৃথিবীই যেন আমাকে ভালোবাসে। এই তো সে দিনও মনে হচ্ছিল এই পৃথিবীতে আমি একা। কিন্তু এখন আমার বন্ধু আছে। আমার দিকে তাকিয় হাসে। আনন্দে চোখের ইশারায়ও কথা বলে। হাত পা নেড়ে কলকল করে কথা বলছে আমার সঙ্গে। আজ অনেকটা হালকা আর ফুরফুওে লাগছে মনটা। চলে এসেছি ঠিকই কিন্তু আমার ভেতরে ভেতরে ছটফটানি রয়েছে আর একটা কারনে। আনিকা ও হামিদ কালকের বিকালে গল্পের নেমন্তন্ন করছে। আলাদাই একটা আনন্দ লাগছে হৃদয়ে। আনিকার সাথে আলাপ হওয়ার কথা কেউ জানে না। কেউ জানে না এখন আমার ানজস্ব একটা গোপন জগৎ হয়েছে। যেখানে কারো কোন ভুমিকা নেই। কারো কাছে বলিও না বা জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে যাই। ঘুরে ফিরে বারবার মনে হয় কখন আনিকার সাথে গল্প করব।অন্য কেউ কি বিশ্বস করবে আনিকা স্বয়ং আবার নেমন্তন্ন করেছে এবং একসাথে খেয়েছি। যেন বিশ্বাস হতে চায় না। নিজেকে যতই শক্ত করার চেষ্ট করি ততই যেন ভেঙ্গে পড়ি। মনে চিন্ত-ভাবনার অদ্ভুত ভাঙা-গড়া চলতে থাকে। মনের মাঝে কত কল্পনা, কত পরিকল্পনা লুকোচুরি খেলে আনাগোনা করে, কিন্তু দ্বিধা-জড়তারও অবসান হয় না। এ কি মধুযন্ত্রনা! এ কি আশ্চর্য্িড়ম্বনা! কিছুই বুঝি না। বিকাল হতেই ঠিকঠাক হয়ে আস্তে আস্তে সে বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকলাম। দরজায় ধাক্কা দিলাম। দরজা খুলল আনিকা। তার মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে। এক গাল হেসে হামিদকে ডেকে বলল, আমাদের ঘরকুনো অতিথি এসে গেছে। এরপর জিজ্ঞাসা করল, খুব অনিচ্ছা হয় নি তো আসতে! আবার রক্তিম ওষ্ঠাধরে পরিষ্কার ছন্দে ফুরফুর করে হাসতে লাগল। সে হাসির মধ্যে কোথাও এক টুকরো কঠিন পদার্থ নেই। এই হাসি যেন তার সর্বাঙ্গ দিয়ে হাসি। হামিদ এসে বলল, আমরা ঠিক করেছি তুই আসলে এই তিন জনে পিকনিক করব। তোর যদি আপত্তি না থাকে তাহলেই আয়োজন শুরু করতে পারি। আর এত দেড়ি হল কেন! তোর জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষায় ছিলঅম এতক্ষন।
 বিকালে সব গুছায়ে রান্না শুরু করলাম রাতে। আনিকা হামিদের বড় বোন। তুই বলে সম্ভোধন করে। তবুও তাদের মধ্যে কোন রাগ নেই। যে কোন কথাতেই হাসির ধুম পড়ে যায়। রান্না করলাম তিন জনে মিলে। তারপর খেতে বসে তিনজনেই পরিবেশন করলাম। খাওয়া হল অনেক সময় নিয়ে মাটিতে পা ছড়িয়ে। হামিদ বারবার রান্নার প্রশংসা করল। আর আমি কিছু না বলে মুখ টিপে হাসতে লাগলাম। সে কি আনন্দ আনিকার।এমন হাসতে লাগলো যে কিছুতেই সে হাসি থামাতে চায় না। রাত্রে আর ফেরা হবে না। এখানে থাকতে এত ভালো লাগছে আমার। সমস্ত শরীরে আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে। আমি এখন আনিকার বন্ধু। আগে কখনো আমি এরকম নামী অনাত্মীয় মেয়ের সাথে এত মিশি নি। আমার গাটা কি রকম শিরশির করছে। মনে হচ্ছে আমি শুন্যও ওপর ভাসছি। মাঝে মাঝে আনিকার শরীরের সাথে লেগে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমার শরীর ঝনঝন করে উঠছে। পুর্বেও জীবন ভুলে যাচ্ছি; আরও ভুলে যাচ্ছি আমি একা। স্বর্গের সিরি পেয়ে গেলাম এই প্রথম। আনিকা বলল, আমাকে কেউ ভালোবাসে না। অথচ দেখা হলেই সবাই ভালোবাসার কথা বলতে চায়। তবে তোমার মতন বন্ধু আমি আগে একজনও পাই নি। তাই তোমাকে এত ভালোলাগছে আমার। যদি কখনো তুমি কোন ব্যাপারে খুব দুঃখ পাও, কিংবা খুব আনন্দের কিছু ঘটে আমাকে বলবে Ñ সেটা আমরা দু’জনে ভাগ করে নেব। আমিও বলব তোমার কাছে। কারন ঐ সব সময়ে মানুষ তার মনের ভাব আর কারোর সথে ভাগ করে নিতে না পারলে সহ্য করতে পারে না। একমাত্র তোমার সাথেই আমার কোন স্বার্থের সম্পর্ক থাকবে না। তুমি আমার বন্ধু। তোমার সাথে আমি সুখ-দুঃখের কথা বলবো। মানুষ তো চায় কারুর কাছে মন খুলে কথা বলতে। আমার সে রকম কেউই নেই। তুমি আমার সেই রকম বন্ধু হবে? আসি হকচকিয়ে গেলেও রহস্যময়ভাবে আনিকার দিকে চেয়ে হাসলাম। উদগ্রীবভাবে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, তুমি আমার বন্ধু এর বেশি তো আমি চাই না। এমন ভাগ্য সবার থাকে না। আনিকা আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে ভালোবাসবে! আমাকে সত্যিকারের কেউ ভালোবাসে না। আমার একটা বন্ধুও নেই। আমার কাধে হাত রেখে বলল, তোমার মতন এত সুন্দর ছেলে আমি আগে দেখে নি। তুমি আমার কাছে যা চাইবে তাই তোমাকে দিতে রাজি আছি। শুধু বন্ধু হয়ে পাশে থেক। আমি চুপ করে রইলাম। মুখে কথা জোগাল না। শুধু তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। আবার জিজ্ঞেস করলো, বলো কী চাও। এ পৃথিবীর যা চাও। আমি আস্তে আস্তে বললাম, আমি যা চাই সত্যি তুমি তাই দেবে? আমি আর কিছু চাই না। আমি শুধু দেখতে চাই তুমি আবার প্রথম হয়েছ লেখাপড়ায়। শুধু আমার জন্য প্রথম হবে আর করো জন্য না। আমি সারাজীবন মনে রাখবো। আর আমার একমাত্র বন্ধু থাকবে তুমি। আনিকা আমার কাধ থেকে হাত তুলে নিল। মধর গলায় বলল, আমি আবার প্রথম হবো শুধু তোমার জন্য। প্রথম হয়ে তোমার জন্য আলাধা করে সাজবো। এমনভাবে সাজবো যা কোন দিন সাজিনি। শুধু তোমার জন্য লেখাপড়া শুরু করব আগের চেয়েও ভালোভাবে। এমন করে তো আর কেউ চায় নি আমার কাছে। তুমি আমার একমাত্র বন্ধু। কত মানুষের সাথেই তো আন্তরিক হয়েছি কিন্তু কখনো এমনভাবে মন ভরে যায় নি। কত পিকনিক করেছি, আমার কখনো এত আনন্দ হয় নি। হোস্টেলে ফেরার পর কেউ আমাকে একটা কথাও জিজ্ঞেস করল না। তবে দেখেই বুঝতে পারলাম, সবাই কি যেন একটা সন্দেহ করছে। পাশের রুম থেকে হঠাৎ একটা ছেলে এসে বলল, রাত্রে কই ছিলি তুই? অম্লানবদনে আমি বললাম, হামিদদের বাড়ি। এখন মিথ্যে কথা বলতে বা মনের ভাব লুকাতে একটু অসুবিধে হচ্ছে না। এক রাত্রেই সব শিখে ফেলেছি। এখন অনায়াসেই মিথ্যা বলতে পারি। এগুলো অপনা-আপনি শিখে গেলাম। আমি এখন আর একা নই। আমি এখন বিখ্যাত আনিকার বন্ধু। এবং আনিকাই আমার একমাত্র গোপন সম্পদ। এসব কেউ কিচ্ছু জানে না। বললেও বিশ্বাস করবে না কেউ। যেই বাড়িটা সম্পর্কে আমার কৌতুহল জেগেছিল সেই বাড়ির আনিকাই এখন যেন সব। আমি যে কত আনন্দ পেযেছি জানি না। জীবনে এরকম পাইনি বোধ হয়। মাঝে মাঝে এমন হয় যে সব কিছুই আনন্দের হয়। সেই রকমই কাটছে দিনগুলো। যে যাই মনে করুক। বিকেল বেলা এক সাথে গল্প করতেই হবে। সারা পৃতিবীও যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলেও আমাকে যেতে হবে। কারো সন্দেহ কারো বাধা কিছুই আটকাতে পারবে না। আনিকা বেশি দিন বাড়িতে থাকবে না। তাই বিকাল হওয়ার পুর্বেই ছটফটানি শুরু হয়ে যায় যাওয়ার জন্য। এ পৃথিবীতে একমাত্র যার কাছে আমি আমার দুঃখের কথা বলতে পারি তাকে আমি পেয়ে গেছি। আমি এখন বাধা মানবো কেন! আরও দহরম মহরম সম্পর্ক তার সাথে।

সে দিন আনিকা সেজেছিল। কি সুন্দর যে দেখাচ্ছিল তাকে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। সত্যি মানুষ কখনো এত সুন্দর হয়। একটা স্বর্গীয় ধরনের সৌন্দর্য। সুন্দর জিনিসের সামনে দাঁড়ালে মনটাও কি রকম হালকা হয়ে যায়। সে মুহুর্তে সব ভুলে গেলাম আমি। আর আনিকার চোখে কিংবা ঠোটের হাসিতে কী রহস্য আছে জানি না। আমাকে সব কিছু ভুলিয়ে দেয়। কোনরকম অসভ্যতা নেই। ব্যপারগুলো বেশ মধুর। উৎসাহের অতিশয্যে আমি অন্য সব কিছু ভুলে গেলাম। সুখময় আনন্দে রাত্র কখন হয়েছে টের পাই নি। ভর্তি পিন কুশানের মত আকাশে গিসগিস করছে তারা। আমার মনে হলো আমি যেন হাওয়ায় ভাসছি। আমার মাথায় আর কোন চিন্তা নেই। চোখের সামনে বসা আনিকা ছাড়া এ পৃথিবীতে আর কিছু নেই। সমস্ত শরীর কাপছে। এত আনন্দ এত অপরুপ দৃশ্য এক সুন্দর যেন সহ্য করা যায় না। আমার চোখ ঘোর লেগে যেতে লাগলো। এমনই নিস্তব্ধতা যেন আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ বেচে নেই। আনিকার দিকে আমি মন্ত্রমুগ্ধেও মত চেয়ে রইলাম। পৃথিবীতে এত আনন্দ আছে! বিশ্বাস হয় না। আমি যেন আর মাটিতে পা রাখতে পারছি না। এখস চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। মনের মধ্যে আমার অসহ্য সুখ। আনিকা ঝট করে বলল, তুমি এবার হোস্টেলে ফিরে যাও। তোমার বন্ধুরা চিন্তা করবে। কালকে ওদের কাছে বলে আসবে যে রাত্রে আর ফিরবে না। ফেরার কথা মনে আসতেই মাথায় ছলাৎ ছলাৎ করছে। কিছু মনে করো না, তুমি অনেক লক্ষি ছেলে। আমরা তোমাকে ভালোবাসি। ভাইর মত কিংবা বন্ধুর মতই ভালোবাসি। রজকিনী প্রেম নিকষিত হেমÑকাম গন্ধ নাহি তায়। এরকম প্রেম আমার পেতে ইচ্ছে করে। যেটা তোমার কাছেই প্রত্যাশা করি। তোমাকে যেতে বলছি ঠিকই। কিন্তু তুমি জান! তুমি গেলেই আমার বুকের মধ্যে কিসের একটা যন্ত্রনায় যেন দারুন কষ্ট হয়। কিছুতেই যেতে দিতে ইচ্ছে করে না। তোমার হোস্টেলে দারুন ক্ষতি হবে, তুমি এখন যাও। কালকে বিকালে তো আবার আসতেছই! হামিদ আগায়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি জোর করেই আসতে দিলাম না। বুকে এতই সাহস ছিল যে মনে হল আমি আরও এক হাত লম্বা হয়ে গেছি। আমার গায়ে অসুরের শক্তি। আমি এখন এই পৃথিবীটা পায়ের তলায় রেখে দিতে পারি। আনিকা আমার বন্ধু। আনিকা তুমি বড্ড ভালো। চিরকাল এরকম থেকো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসব। বড় রাস্তায় উঠার সঙ্গে সঙ্গে দড়াম করে কলার ধরে ফেলল আমার। কারা ঠাওর করতে পারলাম না। শাশিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ঐ বাড়ি কি তোর! ভয়ের থেকে বেশি লজ্জাতেই আমার মাথা কেটে যেতে লাগলো। আমি তো এমন ভাবে চলি নি যে কেউ কলার ধরবে। তাই আমার মুখটা শান্ত কিন্তু কঠিন। লক্ষ্য করে দেখলাম, ওরা দলে ভারি। কঠিন ভাষায় বলল, আমরা তো বারন করছি আর কখনোই ওই বাড়ি যাবি না। তুই ঐ বাড়ি ঢুকছিস কোন সাহসে? আনিকা তোর কি হয়? বন্ধু বলতে না বলতেই বিরাট এক থাপ্পর মারল। আমার চোখে অন্ধকার হয়ে গেল এক-মুহুর্তের মধ্যে । আমি ঘুরে পরে যাচ্ছিলাম। তবুও সে মুহুর্তে দফ করে রাগ জ্বলে উঠলো আমার শরীরে। মাথায় ছলাৎ করে রক্ত এলো। বললাম, আমাকে মারলি ক্যা? আনিকার কথা মনে করতেই আমার সমস্ত ভয় উড়ে গেছে, গায়ে এসেছে অসীম ক্ষমতা। এর পুর্বে মারামারির কথা আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। কিন্তু সে সময় দেখতে পেলাম ইট পড়ে আছে পাশে। তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে ইটটা উঠায়ে মারতেই দৌড় দেওয়ার কারনে পিঠে পড়ল একটার। সরে পড়ল সবাই। অমনি দৌড়াতে শুরু করলাম হোস্টেলের দিকে। হঠাৎ আমাকে কে ঝাপটে ধরল। সাথে সাথে নাকের ওপর একটা প্রচন্ড আঘাত লাগলো। আমি অন্ধকার দেখলাম। যখন জ্ঞান হলো, দেখলাম আমি হাসপাতাল। রুমমেটরা বসে আছে পাশে। বুকের ভিতরটাও একেবারে ফাঁকা। নিঃশ্বাস নিতে পর্যন্ত বুক জ্বালা করছে। আকুপাকু করছে হৃদয়। আমি তো কোন দোষ করি নি। তবুও আমাকে এরকম অপমান কেন সইতে হলো? অকালের বাদলার কথা জানতে চাইলে বললাম, গুন্ডায় পেয়েছিল। সমস্ত শরীরে ।সহ্য ব্যাথা। মাথা ঝিমঝিম করছে। বাইরে সমস্ত পৃথিবী জ্যোৎ¯œায় ভেসে যাচ্ছে। কত রাত হয়েছে কে জানে। জ্যোৎ¯œায় এখন চারদিক ফটফট করছে। ইচ্ছে করছে আনিকাকে গিয়ে দেখাই আমার অবস্থা। জীবনে আমি প্রথম মার খেয়েছি তোমার জন্য। কিন্তু কিভাবে! পায়ে ভরই দিতে পারছি না। রুমমেটদের কি বলবো সত্য কথা! আনিকা আমার বন্ধু এবং আনিকার জন্যই মার খেয়েছি। কিন্তু নিজেরই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। আমার মত নগন্য সাধারন ছেলের সঙ্গে উজ্জল তারকা আনিকার বন্ধুত্ব! এতো ভানুমতির খেলা। এটা অসম্ভব হলেও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ওরা কি বিশ্বাস করবে! আমি ভালো হলেই, হাঁটতে পারলেই আবার আনিকার সাথে দেখা করতেই হবে। আমাকে মারুক ধরুক খুন করে ফেললেও। সে যে কী সাঙ্গাতিক আকর্ষন কেউ তা বুঝবেব না। কুল কাঠের আগুন দেখানো যায় না কাউকে। তিন দিন পর হাসপাতালে এলো হামিদ ও আনিকা। এটাও আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। এই তিন দিনের প্রতিটা মুহুর্ত মনে হচ্ছে এক-একটা ঘন্টা। যেন আমি অনন্তকাল ধরে অপেক্ষায় আছি। আনিকাকে কি রকম যেন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছে। চুলগলো এলোমেলো, মুখে হাসি নেই। মনের মধ্যে কি নিয়ে যেন তোলপার চলছে। তার মন খারাপ দেখে আমার এমন মন ভেঙে গেল যে একবার মনে হলো যে আমি আর কোন দিন দাঁড়াতে পারব না। শুয়ে শুয়ে কাটাতে হবে সারাজীবন। বিদায়ের সময় আনিকা ব্যকুল ভাবে বলল, আমি কালকেই চলে যাব, তোমার চাওয়া আমি পুরন করবই। আমি তোমর মত একজন বন্ধু পেয়েছি। আমার এত বড় ভাগ্য যেন বিশ্বাস হতে চায় না। আমাকে ভুলে যাবে না তো? আমার চোখে প্রায় অশ্রু এসে গেল। গোলক ধাঁধাঁ দু’চোখে বিষ্ময় নিয়ে বললাম। আমি তোমাকে কখনও ভুলতে পারি? আর কোন কথা হলো না। চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম অনেক কিছু, কিন্তু পারি নি। তারা চলে গেল। আর আমার মনে হচ্ছিল আমার বুকটা ভেঙে একেবারে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে। আর কোন দিন জোড়া লাগবে না। আমার কাছে পুরো ব্যাপাটাই স্বপ্নের মতো মনে হলো। কয়েকদিনের জন্য আনিকার সাথে দেখা। তাতেই আমার জীবনে একটা ওলোটÑপালোট হয়ে গেল। হয়তো জীবনে আর দেখাও হবে না কোনদিন। আমার এই একঘেয়ে জীবনে সেই কয়েকটা সুন্দও মুহুর্ত বাঁধিয়ে রাখার মত দিন। দেহের স্থুলতাকে অতিক্রম করে যে পবিত্র প্রেম আত্মার সমীপে সমর্পিত হয় তা মানুষকে যেমন চিন্তায় মহীয়ান করে, তেমনি চেতনায় বলিয়ান করে। আনিকার প্রতি আমার যে প্রেম বন্ধুত্ব তা আত্মিক প্রেম।

দেহের দুয়ারে নয়, আত্মার গভীরে এ প্রেম বন্ধুত্বের নিবেদন। কেউ জানলো না তোমার জন্য এই মার খাওয়া, এই অবমাননা। তোমার জন্যই সব হজম করছি নিশ্চুপে। এটাই যে আমার পরম তৃপ্তি। কিন্তু আনিকা নিশ্চয় জান কারা আমাকে মেরেছে, এবং কেন মেরেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

বাংলাদেশ

banglarmukh official

বরিশালে ৭ দিনব্যাপী আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা উদ্বোধন করেন, বিসিসি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

banglarmukh official

একুশে গ্রন্থমেলায় এবার বই বিক্রি বেড়েছে

banglarmukh official

অমর একুশে বইমেলার সময় বাড়ল দুই দিন

banglarmukh official

মুক্তিযুদ্ধের লেখক রবার্ট পেইন

banglarmukh official

জাপানী ভাষায় প্রকাশিত হল গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’

banglarmukh official