এপ্রিল ২৮, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

আল্লাহর ৬টি বার্তায় সমৃদ্ধ সূরা ইয়াসিন

সূরা ইয়াসিন সকল মানুষের প্রতিই পৃথিবীতে আল্লাহর দুটি মু’জিযার প্রতি লক্ষ্য করতে একটি সাধারণ আহবান জানায়। প্রথমটি কুরআন যা আল্লাহর বাণীর ধারক এবং দ্বিতীয়টি সৃষ্টিজগত যা আল্লাহর ক্ষমতার প্রমাণ। সূরা ইয়াসিনে মোট ছয়টি ভাগ রয়েছে:

১. ঐশী বাণী এবং অবহেলাকারীদের মনোভাব [১-১২]

সূরাটির সূচনা হয়েছে কুরআন নাযিল এবং তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে। আরবরা রাসূলের ধারণার সঙ্গে পরিচিত ছিল না। একারনে কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ

“যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্ব পুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল।” (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৬)

এছাড়া আল্লাহর বাণীর প্রতি অসতর্ক ও অবহেলাকারীদের প্রতিও সতর্কতা প্রদান করা হয়েছে। وَسَوَاء عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ

“আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন, তাদের পক্ষে দুই-ই সমান; তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।” (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ১০)

২. ইতিহাসের উদ্ধৃতি [১৩-৩০]

পরবর্তী ভাগে অতীত এক জাতির প্রতি তিন জন রাসূলের দাওয়াত এবং তাদের একজন সমর্থকের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে এই ঘটনাটি আকর্ষনীয়। প্রথমত কোন স্থান বা জাতির নিকট একত্রে তিনজন রাসূল পাঠানো খুবই বিরল। রাসূলদের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নি এবং তাদের বক্তব্যের বিস্তারিতও এখানে আলোচনা করা হয়নি, তথাপি তাদের একজন সমর্থকের বক্তব্যকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। إِذْ أَرْسَلْنَا إِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوا إِنَّا إِلَيْكُم مُّرْسَلُونَ

“আমি তাদের নিকট দুজন রসূল প্রেরণ করেছিলাম, অতঃপর ওরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের মাধ্যমে। তারা সবাই বলল, আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।” (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ১৪) وَجَاء مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ

“অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা রসূলগণের অনুসরণ কর। (সূরা ইয়াসিন আয়াত: ২০)

নিজের জাতির প্রতি তার এত ভালোবাসা ছিল যে, তার জাতি যখন তাকে শহীদ করলো এবং তিনি যখন জান্নাতে প্রবেশ করলেন, তখনও তিনি তার জাতির হেদায়েতের কথা চিন্তা করছিলেন।

৩. চতুর্পাশে দৃষ্টি দান ও আল্লাহর সৃষ্টি অবলোকন [৩১-৪৪]

এর পরের ভাগে সূরাটি তার পাঠক ও শ্রোতাদের কাছে দাবি করছে, তোমরা যদি ইতিহাস থেকে কোন শিক্ষাই নিতে না পারো, তবে আল্লাহর এই বিশাল সৃষ্টিজগতের দিকে লক্ষ্য কর। وَآيَةٌ لَّهُمُ الْأَرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَاهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ

তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৩) وَآيَةٌ لَّهُمْ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ

তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৭)

৪. একগুঁয়েমী ও অন্ধত্ব [৪৫-৪৭]

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহবানকে প্রত্যাখ্যানকারী এবং সৃষ্টিজগত নিয়ে ভাবতে ব্যর্থ মানুষকে আল্লাহ এরপরেও আহবান করছেন: وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّقُوا مَا بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَمَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ. وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ آيَةٍ مِّنْ آيَاتِ رَبِّهِمْ إِلَّا كَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা সামনের আযাব ও পেছনের আযাবকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তখন তারা তা অগ্রাহ্য করে। যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোন নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৪৫-৪৬)

৫. কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের অবস্থা [৪৮-৭০]

পরবর্তী ভাগে বলা হয়েছে ভবিষ্যতের কথা। কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের পরিণাম কি হবে, তা বর্ণনা করা হয়েছে এবং তার জন্য মানুষকে আগেই সতর্ক করা হয়েছে। هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ. اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ

এই সে জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো। তোমাদের কুফরের কারণে আজ এতে প্রবেশ কর। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৬৩-৬৪) وَلَوْ نَشَاء لَطَمَسْنَا عَلَى أَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَأَنَّى يُبْصِرُونَ

আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টি শক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম, তখন তারা পথের দিকে দৌড়াতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত! (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৬৬)

৬. সমাপ্তি: আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি অবাধ্যতার মনোভাব [৭১-৮৩]

সূরার প্রথম অংশে আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি অবিশ্বাসীদের অবহেলার দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। একইভাবে অন্তরের অপর একটি রোগ সম্পর্কে সূরার শেষ এই অংশে আলোচনা করা হয়েছে যা হল অহংকার ও অবাধ্যতা।

এটি মানুষকে অবিশ্বাসের দিকে ধাবিত করে এবং এর ফলে সে আল্লাহর কিতাব ও তার সৃষ্টির নিদর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। أَوَلَمْ يَرَ الْإِنسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ. وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَنَسِيَ خَلْقَهُ قَالَ مَنْ يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ. قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ

“মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী। সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে?

বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত।” (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৭৭-৭৯)

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official