আগুনে দগ্ধ সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন মারা গেছেন। আজ শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল শুক্রবার ভোররাত চারটার দিকে রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ ফ্ল্যাটে আগুনে পুড়ে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। ফ্ল্যাটটির একই কক্ষে গত ২ জানুয়ারিতেও আগুন লেগেছিল। তখন দগ্ধ হয়ে মারা যান মোয়াজ্জেমের একমাত্র ছেলে স্বপ্নিল আহমেদ পিয়াস। একই কক্ষে পুনরায় আগুনে মারা গেলেন বাবা।
মোয়াজ্জেম হোসেন জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
আফতাবনগরের বি ব্লকের তিন নম্বর সড়কের একটি দশতলা ফ্ল্যাট বাড়ির দশম তলাতে পরিবার নিয়ে থাকতেন মোয়াজ্জেম। আগেরবার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্ল্যাটের মেরামত শেষ হওয়ার পর গত ৩১ মে স্ত্রী শাহান হোসেন পল্লবী ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে আবার নিজের ফ্ল্যাটে ওঠেন মোয়াজ্জেম। ১ হাজার ৯১০ বর্গফুটের এই ফ্ল্যাট।
গতকাল বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে ভবনটির ব্যবস্থাপক মনসুর আলম জানান, রাত ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে পরপর তিনটি বিকট শব্দে তাঁর ঘুম ভাঙে। বাইরের রাস্তায় লোকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করছিল। তিনি ভবনের ফায়ার এলার্ম বাজান। ওপরে উঠে দেখেন মোয়াজ্জেমকে লোকজন ধরে নিচে নামাচ্ছে। তিনি তখন পানি দিয়ে আগুন নেভানোর শুরু করেন। আগুন কিছুক্ষণের মধ্যেই নিভে যায়। কক্ষটিতে একটি খাট, এসি, টেলিভিশন ও ছোট সোফা ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মোয়াজ্জেমের স্ত্রী শাহানা হোসেন পল্লবী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত দুইটায় অফিস থেকে ফিরে গোসল করে রাতের খাবার খান মোয়াজ্জেম। এরপর তাহাজ্জতের নামাজ পড়তে ওই কক্ষে গিয়েছিলে। তিনি ছিলেন পাশের কক্ষে। হঠাৎ বিকট শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখেন আগুন লেগেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখেন পিঠে আগুন নিয়ে মোয়াজ্জেম পাশের টয়লেটে ঢুকছেন।
শাহানা পল্লবী বলেন, তাঁদের ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেত। কয়েক দিন আগে মিস্ত্রিরা এসে লাইন পরীক্ষা করে বলেছিল বাথরুমের কমোড থেকে গ্যাস আসতে পারে। মোয়াজ্জেম মিস্ত্রিকে শুক্রবার এসে কমোড খুলে ঠিক করার কথাও বলেছিলেন। তার আগেই এই ঘটনা ঘটল।
তবে বাসার ব্যবস্থাপক মনসুর আলম বলেছেন, কারও ফ্ল্যাটে কোনো সমস্যা হলে এর দেখভাল সব সময় তিনিই করেন। মোয়াজ্জেমের ফ্ল্যাটের গ্যাসলাইনের রাইজারে একটি সমস্যা ছিল। গত ৩১ মে তাঁরা যখন বাসায় ওঠেন, তখনই রাইজারটি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। এরপর গ্যাসের কোনো সমস্যার কথা মোয়াজ্জেম বা তাঁর স্ত্রী তাঁকে জানাননি।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল তিনি পরিদর্শন করেছেন। আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন জানিয়েছেন, রাতে স্বামী-স্ত্রীর তুমুল ঝগড়ার শব্দ তাঁরা পেয়েছেন। এরপরই আগুনের ঘটনা ঘটেছে। পারভেজ ইসলাম বলেন, আগুনের উৎপত্তি কোথা থেকে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
মোয়াজ্জেমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর প্রতিবেশী আশিক টুটুল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মোয়াজ্জেমকে হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর চেতনা ছিল। তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেছেন স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু আগুন কীভাবে লেগেছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।