বরিশাল সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের জন্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্কে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার বিকেল ৫টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় বরিশাল সিটি নির্বাচনে অাওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নাম। বরিশাল সিটির মনোনয়ন চুড়ান্ত করতে আজ ২২ জুন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা আহবান করা হয়। আজ শুক্রবার বরিশাল সিটি মেয়র প্রার্থী হিসেবে সেরনিবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্ নাম ঘোষণা করা হয়।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে সম্প্রতি বরিশাল কয়েক দফা মাঠ জরিপ চালানো হয়। এসব জরিপ পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরিশাল সিটিতে অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন সেরনিবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্। জরিপ পর্যালোচনায় দলের হাইকমান্ড সাদিকের পক্ষে মত আগেই দিয়েছিল। প্রার্থী ঘোষণা করা ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বরিশাল সিটির মেয়র পদে সেরনিবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্ই মনোনয়ন দেওয়া উল্লেখ করে ওই নেতা জানান, বরিশাল আওয়ামীলীগ মনোনীত সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরন করেছেন। যার মৃত্যুরপর বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা এক প্রকার হতাশায় জর্জরিত হয়ে পরেছিলেন। তখন শওকত হোসেন হিরন বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সঠিক দিক নির্দেশনা বা সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখারমত তেমন কেউ ছিলনা। দলের সেই করুন অবস্থায় বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের হাল ধরেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
পরবর্তিতে তাকে ঘীরে সকল নেতা কর্মীরা পুনরায় উজ্জীবিত হয়। নেতা কর্মীদের সাথে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সার্বক্ষনিক যোগাযোগ এবং জনগনের সাথে তার নিবীড় সম্পৃক্ততা মানুষের মনে তাকে নিয়ে বরিশাল সিটির পরবর্তী নগরপিতা হিসাবে স্বপ্ন দেখায়। তিনি যখন দলের হাল ধরেছেন তখন বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিলনা। পরবর্তিতে কমিটি হলে তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।
কিন্তু দলীয় নেতা কর্মীরা তাকে দলের নীতি নির্ধারক হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা না হওয়ায় দলের তৃনমূলের সকল নেতা কর্মীরা এক বর্ধীত সভায় সকলের সিদ্ধান্ত মতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কে ২০১৮ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য জোর দাবী উপস্থাপন করেন।এসব বিষয় বিবেচনায় তাকেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনে দলীয় প্রার্থীদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, শুক্রবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাতকার শেষে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। দলীয় কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে তৃণমূলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে তাই ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ মাঠে নামবে। কারণ কোন্দলকারীরা দলে আর প্রশ্রয় পাবেন না, প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কবার্তা সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল।
বরিশাল সিটির প্রার্থী বাছাই নিয়ে বেশ অস্বস্তির মধ্যে ছিল ক্ষমতাসীন দল। বরিশাল নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রাথী হওয়র মূল লড়াইয়ে ছিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আআব্দুল্লাহ এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। তবে দলের শীর্ষপর্যায় থেকে বরিশাল সিটিতে সেরনিয়াবাত সাদিক আআব্দুল্লাহকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হলে কিছুটা নির্ভার হয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগামী ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে নির্বাচনী সময়সূচি অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ তিন সিটিতে আগামী ১৩ জুন থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ২৮ জুন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ ও ২ জুলাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জুলাই। আগামী ১০ জুলাই এ সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে নির্বাচনী প্রচার।