সততার অনেক অগ্নিপরীক্ষা আমাকে দিতে হয়েছে’- উল্লেখ করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৎপথে যারা উপার্জন করছে তাদের কোনো চিন্তা নাই, ভয় নাই। আল্লাহর রহমতে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না। তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই।
শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রীতি অনুযায়ী বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার কথা অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় এদিন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ‘শব্দ বিভ্রাটে’ কিছুটা বিরক্তও হন তিনি।
‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় যারা সৎ আছেন তারা হতাশ হবেন কি না’- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৎপথে থাকলে হতাশ হতে হয় না। সততার অনেক পরীক্ষা, অগ্নিপরীক্ষা আমাকে দিতে হয়েছে। আমি কখনও হতাশ হইনি।’
‘যারা সৎ থাকে তাদের যেকোনো অবস্থা মোকাবিলার শক্তি ও দৃঢ়তা থাকে। সে শক্তিটা আমার সব সময় ছিল এবং আছে। সুতরাং যারা সৎ, তাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নাই। এ বাজেট সৎ মানুষেরই কাজে লাগবে।’
‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব সরকারের আমলেই এটা ছিল। বরং আওয়ামী লীগ সরকার তা বন্ধ করেছিল। বর্তমানে বিনিয়োগ বাড়াতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়া হয়েছে যাতে অর্থপাচার না হয়। অপ্রদর্শিত টাকা অনেকে পাচার করতে চায়। সেই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কালো টাকার স্তূপ যেন না জমে, তা যেন কাজে আসতে পারে, সেজন্য এ সুযোগ। তবে এজন্য যারা সৎপথে উপার্জন করে তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই। যারা সৎ, তাদের যাতে সুবিধা হয়, তা আমরা দেখব।’
বাজেট সম্পর্কে যেসব গবেষণা সংস্থা নেতিবাচক মন্তব্য করেছে তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু লোকের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে, যারা কিছুই ভালো দেখে না। আমার কথা হচ্ছে সাধারণ মানুষ সুখি কি-না? তাদের উন্নতি হচ্ছে কি-না?’
‘কেউ ভালো কথা বললে গ্রহণ করব, মন্দ কথা বললে ধর্তব্যে নেব না। এককথায় এ বাজেট একটি জনকল্যাণমূলক বাজেট’- দাবি প্রধানমন্ত্রীর।
কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধান উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া হয় বলে কৃষকের খরচ কম। প্রায় সব খরচ সরকারই দেয়। কৃষকের দেখভাল আমরা করছি বলেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।’
‘কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেই এখন ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত জরুরি। পোশাক শিল্পে নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে বাজেটে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সরকার ফাইভ-জি চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া গবেষণা কাজে অর্থ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
গতকাল বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট।
দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভব না হওয়ায় স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।