বরিশালের গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার এবার নতুন মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এবার তার টার্গেট একটাই এক সাংবাদিককে ধরো এবং সায়েস্তা করো। যদিও সম্প্রতি ওসির নির্দেশে তার থানার এক এসআই ২ সাংবাদিককে আসামী করে ডিজিটাল আইনে একটি মামলা দায়ের করে। পরে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম/পিপিএম (বার) এর নিদের্শে সেই মামলা প্রত্যাহারের পর ফের নতুন করে সাংবাদিক নিধনে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিতর্কিত ওসি গোলাম ছরোয়ার এবং সে মতে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারের ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের সাংবাদ বরিশালের স্থানীয় দৈনিক আমাদের বরিশালে প্রকাশিত হলে গোটা দখিনা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে বেশ চাপের মুখে পড়ে গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার। নিজেকে ধোয়া তুলসি পাতা বানাতে সংবাদের প্রতিবেদক দৈনিক আমাদের বরিশালের গৌরনদী সংবাদদাতা ও একাত্তর টিভির প্রতিনিধি মোল্লা ফারুক হাসানকে সায়েস্তা করতে মিথ্যা মামলার মোকদ্দোমায় জড়ানোর চেষ্টা চালায়। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ অসত্য দাবী করে দৈনিক আমাদের বরিশাল পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এ্যাড. এস.এম রফিকুল ইসলাম ও গৌরনদী প্রতিনিধি মোল্লা ফারুক হাসানের বিরদ্ধে ডিজিটাল আইনে একটি মামলার দায়ের করেন।
পরে বিষয়টি বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলামের হস্তক্ষেপে ওসি গোলাম ছরোয়ার কর্তৃক সম্পাদক ও সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও তিনি মামলা প্রত্যাহারের পরে চুপচাপ থাকেনি। বরং থানায় মামলা করে ব্যর্থ হয়ে বরিশাল আদালতে আবার উক্ত ২ সাংবাদিকের নামে মামলা দায়ের করতে আসেন। সে দফাও ব্যর্থ হয় ওসি গোলাম ছরোয়ার। বরিশাল আদালত তার মামলাটি গ্রহন না করে সংশ্লিস্ট ডিজিটাল ট্রাইব্যুনালে যেতে নির্দেশ দেয়।
ওসি ছরোয়ার ট্রাইব্যুনালে না গিয়ে কয়েক দিন চুপচাপ থেকে গত ২৪ জুলাই ফের সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে একটি মাদক মামলায় জড়িয়ে আসামীর তালিকায় নাম দেখায়। এবার এক মাদক মামলায় জড়িয়ে ওসি নিজের রাগ কমাতে সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে গ্রেপ্তার করতে হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ওসি গোলাম ছরোয়ার। তার ঘনিষ্ঠ কয়েক ব্যাক্তির কাছে ওসি বলে বেড়াচ্ছে এবার তুই যাবি (মোল্লা ফারুক) কোথায়। ওসি বিভিন্ন স্থানে বুলি উড়িয়ে বলে বেড়াচ্ছে এবার ফারুককে ধরতে পারলে ওর বাপ দাদার নাম ভুলিয়ে দিব। পুলিশের বিরুদ্ধে কিভাবে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় তা বুঝিয়ে দিব। যেমনটা গতকাল তার প্রতিক্রিয়ায় বোঝা যায়।
সংবাদের প্রতিবেদক গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারকে ফোন দিলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মোল্লা ফারুককে আমি সাংবাদিক হিসাবে ধরি না। এছাড়া সাংবাদিক মোল্লা ফারুকের বিরুদ্ধে যেসব কথা এ প্রতিবেদককে ওসি বলেছেন তা এখানে প্রকাশ্যের যোগ্য নয়। মোট কথা ওসি গোলাম ছরোয়ারের টার্গেট একটাই সাংবাদিক মোল্লা ফারুককে ধরো এবং সায়েস্তা করো। কারন ওসির একাধিক ঘুষ বাণিজ্যই সংবাদ মোল্লা ফারুক হাসানই প্রথমই গণমাধ্যমের পাতায় তুলে আনেন। এতে বেজায় চটে গিয়ে সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে মাদক মামলার আসামী করে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করার মিশনে কোমার বেধে মাঠে নেমেছেন।
গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসান থানার ওসির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।
সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসান জানান, তার স্বনামে (ফারুক গত ৭ জুলাই দৈনিক আমাদের বরিশাল পত্রিকায়“ গৌরনদীর কটকস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ৪১ পিস ইয়াবা ও ৫ বোতল ফেন্সিডিল মেরে দিলেন গৌরনদী থানার ওসি গোলাম সরোয়ার” শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। এরপর ওসি গোলাম সরোয়ারের অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের ধারাবাহিক তিনটি সংবাদ ৭, ৯ ও ১০ জুলাই ওই পত্রিকায় ছাপা হয় তার (ফারুক) এর নামে। মোল্লা ফারুক অভিযোগ করে বলেন, প্রকাশিত সংবাদের জেরধরে ওসি গোলাম সরোয়ার আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৫ জুলাই দিবাগত গভীর রাতে আমাকে সহ (ফারুক) পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এ্যাড. এস.এম রফিকুল ইসলামকে আসামি করে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করে হয়রানির চেষ্টা করেছিলো। পরে বিষয়টি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে ১৪ ঘন্টা পর ওই মামলাটি জিডির মাধ্যমে প্রত্যাহার করে দেন।
ফারুক আরো অভিযোগ করে বলেন, আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের হয়রানির উদ্দেশ্যে থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গত ২৪ জুলাই বুধবার দুপুর ২টার দিকে সুন্দরদী গ্রামে আমার ও আমার বোনের বাড়িতে গিয়ে অমাকে খুঁজতে থাকে। আমাকে না পেয়ে সহোদর ভাই আরিফ হোসেন মোল্লা(২৫) ও তালই (বোনের শ্বশুর) সিরাজ সরদার (৬৫)কে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। রাতে আমাকেসহ আমার ভাই আরিফ হোসেন মোল্লা, বোন বেবী বেগম, ভগ্নিপতি লিটন সরদার ও তালই সিরাজ সরদারকে আসামি করে মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক ফারুক।
নতুন করে হয়রানীর উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গোপণ সংবাদের ভিত্তিতে গৌরনদী থানার এসআই আসাদুজ্জামান খান সঙ্গী ফোর্স নিয়ে গত বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে টরকী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৭পিস ইয়াবাসহ মাদক ক্রেতা উজিরপুর উপজেলার জল্লা-ওরাবাশবাড়ি এলাকার মৃত আশরাফ আলী সরদারের ছেলে শিফাত সরদার (২২)কে আটক করেন। আটককৃত শিফাতের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওসি গোলাম সরোয়ারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মাদক বিক্রেতা সুন্দরদী গ্রামের লিটন সরদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে লিটনের বাবা সিরাজ সরদারকে আটক করে।সিরাজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একই গ্রামের মোল্লা ফারুক হাসানের বাড়িতেও অভিযান চালায়। এ সময় ঘরের পিছনের বারান্দার খাটের নিচ থেকে আরিফ হোসেন মোল্লাকে ৬৮পিস ইয়াবাসহ আটক করেন। এঘটনায় থানার এসআই মোঃ আসাদুজ্জামান খান বাদি হয়ে শিফাত সরদার, আরিফ হোসেন মোল্লা, সিরাজ সরদার, লিটন সরদার, বেবী বেগম, মোল্লা ফারুক হাসানকে আসামি করে গত বুধবার রাতে গৌরনদী থানায় মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা করা হয়। আদালতের বিচারক তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়।
এবিষয়ে গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অসত্য। আমি কোন অন্যয়ের সাথে জড়িত না। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে পুলিশ হেট কোয়াটার্স তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে। এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাইনি বিতর্কিত এ ওসি গোলাম ছরোয়ার।