ভারতের নতুন সরকারের প্রথম কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেটে বাড়ানো হয়েছে স্বর্ণসহ দামি ধাতুর আমদানি কর। সেইসঙ্গে পেট্রোল-ডিজেলের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানো হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হচ্ছে ৭০ হাজার কোটি রুপি। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে গতি আনতে অনুদানের দিকেই গেলেন সীতারামন। তার মতে এর ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দানের ক্ষমতা বাড়বে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স উল্লেখ করেছে, এই ঘোষণার পরেই টাইটানসহ গহনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দর পড়ে যায় সর্বাধিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত। চীনের পরে ভারতই সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ আমদানি করে। সে হিসেবে দেশটিতে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। স্বর্ণ এবং অন্যান্য দামি ধাতুতে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মধ্যবিত্তের গৃহনির্মাণ খাতেও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় বাজেট পেশ করেন নির্মলা সীতারামন। বাজেট উপস্থাপনায় তিনি বলেন, অল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাঁধ থেকে সরকার গত পাঁচ বছর ধরে করের বোঝা হাল্কা করেছিল। এর ফলে যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রবীণ নাগরিকদের মতো স্বনির্ভররাও উপকৃত হতে পারেন, সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। এবারও সেই লক্ষ্যে সরকার অবিচল থাকতে চেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ রুপিই রাখা হয়েছে। অবশ্য ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ের ওপর যে ৫ শতাংশ কর আছে সেটি আগের নিয়মেই ফেরত নিতে পারবেন করদাতারা। রিটার্ন দাখিল আরো সহজ করা হয়েছে। অবশ্য ধনীদের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। ২ থেকে ৫ কোটি টাকা আয়ে সারচার্জ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ এবং ৭ কোটি টাকার ওপরে আয়ে ৭ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। মধ্যবিত্তদের গৃহঋণে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। যারা ৪৫ লাখ রুপির নিচে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনছেন তাদের নেওয়া ঋণের সুদে দেড় লাখ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাজেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য ব্যতিক্রমী কোনো ঘোষণা বা প্রস্তাব নেই। উলটো পেট্রোল-ডিজেলের ওপর চাপানো হলো কর। এর প্রভাব পড়বে সবক্ষেত্রে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর নিচের দিকেই রয়েছে। এ বছর জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধির পূর্বাভাসও নেই। সে দিক থেকে নতুন করে আবগারি শুল্ক এক রুপি ও পেট্রোল ব্যবহারের কর এক রুপি বৃদ্ধি করায় প্রতি লিটারে দর বাড়বে ২ রুপি। এর ফলে মূল্যবৃদ্ধির গতি আরো দ্রুততর হবে। তবে পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রিক মোটরগাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সড়কসহ যাবতীয় পরিকাঠামো উন্নয়নে আগামী পাঁচ বছরে ১০০ লাখ কোটি রুপি ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিমা ক্ষেত্রে খুলে দেওয়া হয়েছে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা। পরিবেশ সহায়ক বলে ব্যাটারিচালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন। এই প্রযুক্তির গাড়ি কিনলে দেড় লাখ রুপি পর্যন্ত কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া সৌরশক্তিচালিত পণ্যের ওপর বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা রয়েছে বাজেটে। বাজেট ঘাটতির আকার জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে।
সংবাদ মাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী শুল্ক বাড়ানোয় দাম বাড়বে সিসিটিভি ক্যামেরা, ডিজিটাল ও ভিডিও রেকর্ডার, মোটরের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ও সিন্থেটিক রাবারেরও। সকল প্রকার তামাকের কর বাড়ানো হয়েছে। পেট্রোল-ডিজেল ছাড়াও দেশটিতে দাম বাড়বে পিভিসি, ভিনাইল ফ্লোরিং, টাইলস, ধাতব বস্তু, আসবাবের কাঠামো, কাজু বাদাম, অটো পার্টস, মার্বেল স্ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার, ডিজিটাল ও নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার।
প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ২০২২ পর্যন্ত গ্রামীণ পরিবার পানি ও বিদ্যুতের সুবিধা লাভ করবে। সরকার নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে আসবে, যার ফলে স্কুল ও কলেজের প্রশিক্ষণে আসবে পরিবর্তন। ভারতে উচ্চশিক্ষাকে মজবুত করতে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হবে। আবাসন খাতকে মজবুত করতে আগামী দুই বছরের মধ্যে ১ কোটি ৯৫ লাখ বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা আছে। তিন কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অ্যাভিয়েশন ও মিডিয়াতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করবে সরকার। ভারতীয় রেলকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারি বেসরকারি খাত (পিপিপি) এর প্রস্তাব করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পুঁজিবাজারগুলো জনগণের ধরাছোঁয়ার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে জনসাধারণের শেয়ার ২৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।