31 C
Dhaka
অক্টোবর ৩০, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ প্রশাসন

বুলবুল হত্যার নেপথ্যে ‘ছিনতাই

নিউজ ডেস্কঃ ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদ। ছিনতাই কাজে জড়িত ছিল তিনজন। পুলিশ ওই তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের একজনের কাছ থেকে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত ছোরা ও বুলবুলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার বেলা ২টায় জালালাবাদ থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, শাবিপ্রবির পার্শ্ববর্তী টিলাগাঁওয়ের মো. গোলাব আহমদের ছেলে কামরুল আহমদ (২৯), একই গ্রামের মৃত তছির আলীর ছেলে মো. হাসান (১৯) ও আনিছ আলীর ছেলে আবুল হোসেন (১৯)। এর মধ্যে গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেট মহানগর হাকিম ২য় আদালতে তোলা হয় আবুল হোসেনকে। পরে আবুল আদালতের বিচারক সুমন ভূইয়ার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জনাববন্দি দেয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার এসআই দেবাশীষ দেব।

গ্রেফতারকৃত বাকি দুইজন থানা হেফাজতে রয়েছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাদেরকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।

উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথাটি স্বীকার করে।
এরপর তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয় কামরুল আহমদ ও মো. হাসানকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুইজনও স্বীকারোক্তি দেয়। পরে কামরুলের বাড়ি থেকে বুলবুলের ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তিনজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে আজবাহার আলী শেখ জানান, সোমবার শাবিপ্রবির পেছনে গাজীকালুর টিলায় আবুল হোসেনসহ চারজন অবস্থান করছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দু’জন চলে যায়।

সন্ধ্যার পর বাকি দুজনের সঙ্গে যোগ দেয় কামরুল। গাজীকালু এলাকায় সন্ধ্যার পর ঘুরতে যান শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ ও তার বান্ধবী মার্জিয়া উর্মি। ওই এলাকাটি নির্জন। তাদেরকে সেখানে পেয়ে আবুল হাসান, কামরুল আহমদ ও মো. হাসান মোবাইল ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
ছিনতাইকারীরা বুলবুলের মানিব্যাগ ও উর্মির মোবাইল, ব্যাগ কেন নেয়নি, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। জবাবে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘উর্মিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে বলেছে, ঘটনার সময় সে বুলবুলের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিল। বুলবুলের মানিব্যাগও খোয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতের পর রক্ত দেখে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। ’

ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে উর্মির চলে যাওয়া এবং কললিস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। ’

তিনি বলেন, ‘উর্মি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, সে জানতে পারে নিহত বুলবুলের জানাজা ক্যাম্পাসে হবে। জানাজায় শরিক হতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। তার চলে আসার পেছনে অপরাধমূলক কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা উর্মির মোবাইল ও কললিস্ট চেক করে দেখেছি। এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কারো সাথে উর্মির মোবাইল যোগাযোগ ছিল না। তার মোবাইলে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। ’

নিহত বুলবুলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৫০ লাখ টাকা দেয়ার দাবিতে বুধবার বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ বলেন, ‘আমাদের চারদফা দাবির দ্বিতীয়টির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুলবুলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা চাই বুলবুলের পরিবারকে এককালীন ৫০ লাখ টাকা ও প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হোক। ’

বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শোক র‌্যালি পালন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় কালোব্যাজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। শোক র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে এসে শেষ হয়।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গাজীকালুর টিলায় ছুরিকাঘাত করা হয় শাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী সদরের নন্দীপাড়া গ্রামে। তিনি শাবির শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় ওই রাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

ঝালকাঠিতে আমুর ছায়ায় কোটিপতি ডজনখানেক

banglarmukh official

অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষে ট্রেন বিকল

banglarmukh official

১৭ পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

banglarmukh official

ঘর থেকে তুলে নিয়ে মা-মেয়েকে গর্ণধর্ষণ, আটক ২

banglarmukh official

ডিএমপির ১৭৩১ মামলায় জরিমানা ৬৫ লাখ টাকা

banglarmukh official

আইনজীবীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, আদালত বর্জন করলেন ম্যাজিস্ট্রেটরা

banglarmukh official