পুরো বাসায় সামিয়া আফরিন সায়মার স্মৃতি আর স্মৃতি। স্কুল ব্যাগ, স্কুল ড্রেস, জুতা, বই, খাতা আর খেলনায় চোখ পড়তেই সায়মার মা-বাবা, ভাই-বোনদের চোখ ভিজে যাচ্ছে। সামিয়ার মা সানজিদা আক্তারের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে, তবে কিছুক্ষণ পরপর বুকচাপা আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। তিনি যেদিকে হাত দেন সেদিকেই সামিয়ার স্মৃতি দেখেন।
তিনি জানালেন, যে পুতুলটি মেয়ের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল সেটাও তো ঘরেই আছে। শুধু মেয়েটাই হারিয়ে গেল, ছবি হয়ে গেল।
গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর সায়মাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। আর ঘটনাটি ঘটে সামিয়াদের ভবনেরই একটি ফ্ল্যাটে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হারুন অর রশিদ ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার ওয়ারি এলাকায় বহুতল ভবনের সবচেয়ে উপর তলার একটি শূন্য ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে সায়মার রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
বাবা-মার সঙ্গে সায়মা ওই ফ্ল্যাটেরই ষষ্ঠ তলায় থাকতো। ওপর তলার একটি ফ্ল্যাটে প্রায় প্রতিদিনের মত ওই দিন বিকেলে খেলতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় সাত বছরের সায়মা। সন্ধ্যার পরও ঘরে না ফিরলে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে রাত আটটা নাগাদ শিশুটির রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
সায়মার বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই ভবনে ফ্ল্যাট কেনার পর তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে ওঠেন।
আজ বুধবার সায়মার মা সানজিদা আক্তার বলেন, মেয়েটিকে স্কুলে দিয়েও বসে থাকতাম। সেই দিন ও যখন আটতলায় খেলতে যেতে চায়, না করিনি। এর আগেও ওইখানে সে খেলতে গেছে। এখন মনে হয় ক্যান মেয়েটারে যেতে দিলাম। মেয়ে গেলেও তার পিছু পিছু কেন গেলাম না। ওকে যখন নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে মারা হলো, তখন আমি ক্যান কিছু বুঝলাম না?
সায়মা সিলভারডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুলে কেজিতে পড়ত। বাসার পাশেই স্কুল। স্কুলের নামফলক ঢেকে আছে সামিয়ার শোকবার্তা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তৈরি করা কালো ব্যানারে।
ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে সামিয়া আফরিন সায়মাকে অষ্টম তলার লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায় হারুন অর রশিদ। সেখানে নবনির্মিত ৯ তলার ফ্ল্যাটে সায়মাকে ধর্ষণ করে। এরপর নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে সায়মা। মৃত ভেবে সায়মার গলায় রশি দিয়ে টেনে রান্নাঘরের সিঙ্কের নিচে রেখে পালিয়ে যায় হারুন।
শিশু সায়মা হত্যার ঘটনায় গত রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।
শিশু সায়মার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ওয়ারী থানার এসআই হারুন অর রশিদ।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, শিশুটির মাথার বামপাশে সামান্য থেঁতলানো জখম রয়েছে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। গোপনাঙ্গ রক্তাক্ত ও থেঁতলানো।
পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে শিশুর বাবা আব্দুস সালাম বাদি হয়ে ওয়ারি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। পুলিশ তদন্ত করছে। ভবনের আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সন্দেহে কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপর ঘাতক হারুনুর রশীদকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার বিকালে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় শিশুটিকে।