এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জেলার সংবাদ নারী ও শিশু বরিশাল

আপত্তিকর ভিডিওটি মিন্নির নয়

আপত্তিকর একটি ভিডিও ক্লিপ। এ হাত ঘুরে ও হাতে। ছোট থেকে বড়, পরিবার থেকে পরিবারে, বন্ধু থেকে বন্ধুর কাছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিডিওটি মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রিফাত হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহের আরেকটি অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। খুনিচক্র ও তাদের দোসররা এই ভিডিও নিহত রিফাতের স্ত্রী ও হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির নামে চালানোর চেষ্টা করলেও তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ ইতিমধ্যে প্রমাণ মিলেছে, ভিডিওটিতে যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি মিন্নি নন। ভিডিওটির পুরুষ চরিত্র, যাকে নয়ন বন্ড হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে সেটাও অন্য কেউ।

এদিকে পুলিশ প্রশাসন থেকে গণমাধ্যমকে বলা হচ্ছে, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার নেপথ্যে ভিডিওটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আদালতে মিন্নির ১৬৪ ধারার জবানবন্দির আলোকে একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এই খুন। মিন্নির এমন কিছু আপত্তিকর তথ্য জনৈক হেলালের মোবাইল ফোনে ছিল, যেটি খুনের ঘটনার দুই দিন আগে রিফাত জোর করে হেলালের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।

কালের কণ্ঠ’র কাছে আসা ভিডিওটি নয়ন ও মিন্নির বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। ভিডিও থেকে স্থিরচিত্র তৈরি করে তা নয়নের পরিবারসহ অন্তত ১৫ জনকে দেখানো হয়েছে। তারা সবাই বলেছে যে ওই দুটি ছবির কেউই নয়ন কিংবা মিন্নি নয়।

আপত্তিকর এই ভিডিওটি ছড়িয়ে মিন্নির প্রতি বরগুনায় জনরোষের সৃষ্টি করা হয়েছে। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওটি দেখে মিন্নিকে যারা সাহসিকা বলেছিল, তাদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে আপত্তিকর ভিডিওটি পাঠিয়ে মিন্নির বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা চালানো হয়। ফলে মিন্নির প্রতি জনমত পাল্টে যেতে থাকে। মিন্নির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে মিডিয়ার কর্মীদের কাছেও সেটি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বরগুনার জনগণ যখন মিন্নির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নেতিবাচক ভাবছে, ঠিক সেই সময় রিফাত খুনের আরো একটি ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সেটি ভাইরাল হওয়ার পর খুনের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততা জনগণের মুখে মুখে প্রচার হতে থাকে। সেই অবস্থায় হঠাৎ করেই নয়ন বন্ডের মা খুনের জন্য মিন্নিকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। পরদিন রাতে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন।

স্থানীয় এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ খুনের ঘটনার পরই মিন্নিকে ইঙ্গিত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছিলেন, মিন্নিই ভিলেন। শুধু তাই নয়, মিন্নিকে ভিলেন বানাতে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। সুনাম দেবনাথ অনুসারীদের নিয়ে তাতে অংশ নিয়ে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের জন্য বক্তব্য দেন। এর পরপরই রিফাত খুনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের শনাক্তকরণের কথা বলে প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে পুলিশ বাসা থেকে নিয়ে যায়। পুলিশ লাইনসে টানা ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর মিন্নিকে তাঁর স্বামী হত্যার মামলায় আসামি করা হয়। পরদিন আদালতে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। তার পরও পুলিশ মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়।

এমনকি মিন্নি রিমান্ডে থাকা অবস্থায়ই পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মিন্নি তাঁর স্বামী হত্যার ঘটনায় পরিকল্পনাকারী। খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে মিন্নি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। সে কারণেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের পরদিন মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। অবশ্য নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে এমনটি দাবি করে মিন্নির সেই জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করার কথা তাঁর পরিবার জানিয়েছে।

বরগুনা শহরের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান এবং এমপিপুত্রের খুব কাছের লোক হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে গত ১৬ জুলাই এই প্রতিবেদকের মেসেঞ্জারে ভিডিওটি পাঠানো হয়। তাঁর বক্তব্য, ‘মিন্নি একটা বাজে মেয়ে। তার কারণেই দুটি পরিবার তাদের একমাত্র সম্বল হারিয়েছে। আরো অন্তত ১৫টি পরিবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সুতরাং মিন্নির মতো নষ্ট চরিত্রের মেয়ের পক্ষ নেওয়া সাংবাদিকদের ঠিক হয়নি। সুনাম দেবনাথ খুব ভালো ছেলে। তবে তার আশপাশে যারা রয়েছে তাদের কেউ কেউ মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণেই মিডিয়াগুলো তার পিছু নিয়েছে।’

এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল—ভিডিওটি কার হাত ঘুরে আপনি পেলেন। জবাবে বললেন, ‘এটা তো ছোট-বড় সবার কাছে রয়েছে।’ ওই ঘটনার ১১ দিন পর গত শনিবার এই প্রতিবেদককে তিনি আবার ফোন করেন। লজ্জিত কণ্ঠে বলেন, ‘ভিডিওটিতে যে দুজনকে দেখা যাচ্ছে তাদের কেউ নয়ন কিংবা মিন্নি নয়। বিষয়টি এখন অনেকেই জানে। শুধু মিন্নিকে ফাঁদে ফেলতে এই ভিডিওটি সুনামের আশপাশে থাকা বন্ধুরাই ছড়িয়েছে।’ কিভাবে ছড়ানো হয়েছে সে ব্যাপারে অবশ্য তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

নয়ন বন্ডের প্রতিবেশী একটি পরিবারের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, ওই ভিডিওতে যাকে নয়ন বলা হচ্ছে আসলে সে নয়ন নয়। মিন্নিকেও তাঁরা দেখেছেন। কিন্তু ভিডিওর ওই নারীর সঙ্গে মিন্নির চেহারার মিল নেই।

দুই মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি থেকে যাকে নয়ন বলা হচ্ছে, তার ছবি স্টিল করে ব্যাকগ্রাউন্ডসহ কেটে সেই স্থিরচিত্র নয়নের মা শাহিদা বেগমকে শনিবার রাতে দেখানো হয়। এক পলক দেখেই তিনি বলেন, এটি নয়নের ছবি নয়। এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকেশনও তিনি এর আগে দেখেননি। নয়নের মায়ের দাবি, নয়নের কক্ষে ওর বন্ধুরা নিয়মিত আড্ডা দিত। বিয়ের আগে মিন্নি প্রায়ই আসত। বিয়ের পর মাঝেমধ্যে আসত। তাঁর দাবি, মিন্নি ছাড়া তাঁর বাসায় নয়নের সঙ্গে অন্য কোনো নারী আসেনি। ওর কোনো বন্ধুও নারী নিয়ে তাঁর বাসায় আসেনি।

তার পরও পুলিশের একাধিক কর্তাব্যক্তি একটি জাতীয় দৈনিকে বলেছেন, নয়ন যে কক্ষে থাকত সেখানে গোপন ক্যামেরা লাগানো ছিল। নয়নের সঙ্গে তার কক্ষে ধারণকৃত অন্তত ১০টি মেয়ের আপত্তিকর ভিডিও তাঁরা উদ্ধার করেছেন। সেখানে মিন্নির সঙ্গে নয়নের আপত্তিকর ভিডিও রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ভিডিওটি সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

ওই গণমাধ্যমের এক কর্মী পুলিশের বরাত দিয়ে বলেন, ‘নয়ন মেয়েদের অজান্তেই আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করত। যারা নয়নের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করত তাদের ফাঁসানোর জন্য পরে সেই ভিডিও বাইরে ছেড়ে দিত। মিন্নির সঙ্গে নয়নের একটি ভিডিও অনেকের হাতে রয়েছে বলে তারা (পুলিশ) জানতে পেরেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official