অনলাইন ডেস্কঃ প্রায় এক যুগ পর আহ্বায়ক কমিটি পেয়ে খুশিতে ভাসছে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনার সাথে সাথেই বরিশাল নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে আনন্দ মিছিল করে তারা। এর পর থেকেই সর্ব স্থরের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা রাজ পথে থেকে একের পর এক সভা-সমাবেশের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ বছর ছন্নছাড়া থাকা এই ছত্রলীগ আজ একত্রিত হয়েছে আহ্বায়ক কমিটির বদৌলতে।
সদ্য ঘোষিত এই কমিটিতে কার নাম আছে আর কার নাম নেই সেটা মূল বিষয় না বলে জানান কামিটিতে নাম থাকা আর নাম না থাকা একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের সাফ কথা ১ যুগ পর কমিটি পেয়েছি এটাই আমাদের কাছে বড় বিষয়। কমিটিতে নাম থাকা আর না থাকাটা কোন বিষয় না। নতুন করে মহানগর ছাত্রলীগ আবারও রাজপথে নেমেছে এটাই বড় কথা। তাদের দাবি একের পর এক কর্মসূচী পালনে ভূমিকা রাখছে নব-গঠিত আহ্বায়ক কমিটি।
একাধিক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি- আহ্বায়ক কমিটিতো আর মূল কমিটি নয়। এ কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে মূল কমিটি প্রস্তুত করে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানোর। এক কথায় এ কমিটিকে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটিও বলা যায়। তাদের দাবি বরিশাল মহানগরে ছাত্রলীগে যাদের ত্যাগ রয়েছে তাদের সমন্বয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এতে করে ত্যাগী নেতা-কর্মীরাই কমিটিতে স্থান পাবে।
সূত্র জানায়- যে প্রক্রিয়ায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই প্রক্রিয়া মেনেই বরিশাল মহনগরের সকল ইউনিটের কমিটিগুলো গঠন করা হবে। ফলে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর পরই বরিশাল মহানগরীর সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া এক নেতা বলেন- দীর্ঘ ১ যুগ পর আমরা ছাত্রলীগের কমিটি পেয়েছি। কমিটি গঠনের পূর্বে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম মূখ থুবরে পরেছিল। চোখে পড়ার মতো তেমন কোন প্রোগ্রাম হতো না। কিন্তু নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে অল্প সময়ে আমরা বেশ কিছু প্রোগ্রাম সফল করতে পেরেছি। আমাদের অভিবাবক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র দিক নির্দেশনায় প্রতিনিয়তই নানান প্রোগ্রাম পালন করছি। মূল কথা হলো নব-গঠিত আহ্বায়ক কমিটি পাওয়ার পর থেকে মূখ থুবরে পরা ছাত্রলীগ আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এদিকে মূল কমিটিতে স্থান পেতে দীর্ঘ বছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকা নেতা-কর্মীরা রাজপথে ফিরছেন। ফলে আরও শক্তিশালী হয়ে উছঠে মহানগর ছাত্রলীগ।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১১ সালের দিকে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে জসীম উদ্দিনকে সভাপতি, অসীম দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক ও তৌসিক আহম্মেদকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এক বছর মেয়াদি ওই কমিটি মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি দীর্ঘ বছরেও। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৫ মে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজের অভিযোগে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর পর থেকে মহানগর ছাত্রলীগ চলছিল কোনো রকম কমিটি ছাড়াই।
জানা যায়, ওই বছরের ২০ এপ্রিল বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে বরিশাল বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। এই মামলার পর থেকে জসীম রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। এর আগে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় এক তরুণীকে অপহরণ ও অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পান। ঘটনার পর থেকে তাঁকে আর বরিশালে দেখা যায়নি বলে জানান দলের নেতা-কর্মীরা। ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তৌসিক আহম্মেদ ওরফে রাহাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টোর অফিসার পদে চাকরির সুবাদে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন অনেক আগে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায় ৩২ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে আগামী তিন মাসের জন্য। কমিটিতে রইজ আহমেদ মান্নাকে আহ্বায়ক, মো. মাইনুল ইসলাম ও আরিফুর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে ১ নম্বর সদস্য করা হয়েছে ফয়সাল বারি নয়নকে।
নতুন ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কিসমত শাহারিয়ার হাসান, হাছিবুর রহমান, মাহাবুর হাসান, ইয়াসিন আরাফাত, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আফজাল হোসেন, রাশেদুল ইসলাম, আকাশ শিকদার, মো. রোমান হাওলাদার, মো. সিরাজুল ইসলাম, আরিফুর রহমান, আহাম্মেদ রেদওয়ান, সাজ্জাদ আহাম্মেদ, মো. মিরাজুল ইসলাম, মো. আল-আমিন, মো. শাওন রাব্বি, জামাশেদ আল ফাতাহ, শেখ তৌহিদুল ইসলাম, সাগর দেবনাথ, রিয়াজ মল্লিক, তৌহিদুল ইসলাম, জয় মালি, রাফিজুল সান, হান্নান মল্লিক, পারভেজ সিকদার, মো. ইমন রহমান সিকদার, ফয়সাল বিন জাবেদ ও মাহাফুজুর রহমান।’’