অনলাইন ডেস্ক :
‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ গুজবকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটেই চলেছে। ছেলেধরা সন্দেহে নির্বিচার এই গণপিটুনিতে হতাহতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই । সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় সন্দেহের জেরে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কখনোই বিচার হয়নি। এ বিষয়ে এখনই সতর্ক না হলে তা মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। এমন ঘটনা প্রতিরোধে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সচেতনতার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এ পর্যন্ত ছেলেধরা সন্দেহে যতগুলো গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। এসবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে ছেলেধরা সন্দেহে অন্তত ২২টি গণপিটুনির ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন ও আহত হয়েছেন আরও ২৬ জন।
গত শনিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এসময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।
নাসির বলেন, শুধু সন্দেহের বশেই একজন মানুষকে মেরে ফেলা হলো? এ ঘটনায় আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
শনিবারই (২০ জুলাই) নারায়ণগঞ্জে মেয়েকে দেখতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন সিরাজ নামে বাকপ্রতিবন্ধী এক বাবা। ছাড়াছাড়ি হওয়া স্ত্রীর কাছে থাকা ছয় বছরের মেয়েকে দেখতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। মেয়ের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তার স্ত্রীর বর্তমান স্বামী তাকে দেখে ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার দিলে স্থানীয়দের গণপিটুনিতে সিরাজ নিহত হন।
রোববার (২১ জুলাই) ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত আরও এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে গণপিটুনির ঘটনায় জড়িতদের বিচার না হওয়ায় এ পদ্ধতিতে মানুষ হত্যা অব্যাহত রয়েছে। গুজব চড়িয়ে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে, এ সুযোগে যে কেউ নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে পারে।’
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে গুজব ছড়ানোকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে।
ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা ফৌজধারী অপরাধ, এ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গুজব ছড়ানো ও গুজবে কান দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিন।