এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ শিক্ষাঙ্গন

চাঁদপুরের অনিন্দ্য সুন্দর স্কুলটির কারিগর যিনি

চাঁদপুরের ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার পেছনের কারিগর লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ। তিনি একজন স্থাপত্য শিল্পী। বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘আর্কিগ্রাউন্ড’।

লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে। জানালেন বুয়েটে তিনি ছিলেন ব্যাচ-৯৮’র ছাত্র। পড়াশোনা শেষ করে তিন বন্ধুতে গড়ে তোলেন ‘আর্কিগ্রাউন্ড’।

তিন বন্ধুর বাকি দু’জন হলেন যুবায়ের হাসান ও নবী নেওয়াজ খান।

চাঁদপুরের ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’র স্থপতি লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ অপরূপ এ স্কুল ভবনটি নির্মাণের গল্প করলেন খোলামেলাভাবে। শিল্প তার নিজস্ব স্বভাবে প্রভাবিত করতে আশপাশকে, নির্মাণ করে সমাজকে, বদলে দেয় সমাজের মানসিকতা। গল্পে গল্প যেন সেসব মূর্ত হলো।

মজিদ রিয়াজ জানান, পাশ্চাত্য ঘরানায় নয়, শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল দেশীয় স্থাপত্য রীতিতে এখানে ভবন নির্মাণ করবেন।

স্থাপত্যশিল্পী মজিদ রিয়াজ গল্পে গল্পে দেশ রূপান্তরকে আরো বলেন, ‘এই যে স্লাইডিং জানালা, এটা তো এসেছে পশ্চিম থেকে। আমাদের এখানে তো সেটা ছিল না। এখানে ছিল সব খোলামেলা। আপনাকে মূল ঘরে প্রবেশের আগে একটা ছোট গেট পার হতে হয়। তারপর উঠান। উঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ঘর’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ট্রপিক্যাল ওয়েদার। আলো-বাতাসের যাওয়া-আসা আছে। এর সঙ্গে মিলিয়েই আমরা স্থাপনাগুলো গড়ে তুলতে চাই। আমাদের এখানে যে চালা ঘর তৈরি হয়- সেরকম। তবে নিশ্চয় আগের সময়ের মতো করে নয়। এর সঙ্গে আধুনিকতার একটা ফিউশন আমরা যুক্ত করার চেষ্টা করি সব সময়’।

শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের বিষয়ে এ প্রকৌশলী বলেন, ‘প্রথমে আমি ভেবেছি এ স্কুলটা হবে একটা গ্রামে, সবুজ পরিবেশের মধ্যে। কোনোভাবে যেন এ পরিবেশর যে হারমনি তা নষ্ট না হয়। আমি সাদা অথবা অন্য কোনো রঙের একটা ভবন তৈরি করতে পারতাম। কিন্তু তাতে সেটা বেমানান হতো।

‘আমি সে জন্য প্রকৃতির রংটাকে বেছে নিতে চেয়েছি। এমন রং চেয়েছি যা স্কুলের ছেলেমেয়েদের পরিচিত। আমি বেছে নিয়েছি গাছের পাতা। অঙ্কুরে একটি গাছের পাতার রং থাকে কচি সবুজ। সময়ে সে তার রং পাল্টায়। আমি প্রকৃতির রংটা ধরে রাখতে চেয়েছি। মাটির রঙে স্কুল ভবনটি রাঙিয়েছি’।

শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ দোতলা নির্মাণের ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রামের ছেলেমেয়েরা সাধারণত দোতলায় যাপনের সুযোগ পায় না। তারা থাকে একতলায়। আমি সে জন্য দোতলা ক্লাসরুম তৈরি করেছি। কিন্তু এমনভাবে করেছি যাতে তারা মনে করে একতলাতেই আছে। চারপাশ খোলা রেখেছি। চারদিকেই বারান্দা রেখেছি’।

লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ জানান, এ ভবনে আমি একটি সিঁড়ি রেখেছি, ছুটির সিঁড়ি। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন হুড়োহুড়ি করে ছুটির সময় বের হতাম, এত অনেকেই আহত হতাম। এ জন্য আমি প্রশস্ত সিঁড়ি রেখেছি। সিঁড়ি বাচ্চাদের খেলার উপাদানও। তারা সেখানে ওঠে-নামে, রেলিং ধরে খেলা করে। সে বিবেচনাও কিন্তু কাজ করেছে।

দেশীয় স্থাপত্য রীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে দেখবেন বারান্দাতেই বসার একটা জায়গা থাকে রেলিংয়ের ওপর। এখানেও সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিশুরা বারান্দায় বসবে, গল্প করবে। বা তাদের অভিভাবক যারা আসবেন তারাও বসবেন। ’

তিনি জানান, ভবনের ভেতরে আমি আবার খালি জায়গা রেখেছি যেন গাছ লাগানো যায়। শিশুরা যেন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়।

‘এ ভবনে ছাদ নেই। সবাই বলেছে কিন্তু ছাদ দিতে। কারণ তারা এতে অভ্যস্ত। আমি ছাদের বদলে বাংলাদেশি রীতির শেড দিয়েছি’।

স্কুলের পাশে নির্মিত হয়েছে মসজিদ। যা স্থাপত্যশিল্পের আরেক অভূতপূর্ব নজির। এর সামনে রয়েছে খোলা জায়গা। এই জায়গা ব্যবহার হবে সবার জন্য। বাচ্চারা সেখানে খেলবে। শুক্রবারে জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপস্থিতি বেশি হলে সেখানে তারা নামাজ পড়বেন-  মজিদ রিয়াজ জানালেন সে কথাও।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি তিনি জানালেন তা হলো- তিনি একটি কারাগার নয় খোলামেলা স্কুলই করতে চেয়েছিলেন। সাধারণত আমাদের স্কুলভবনগুলোর চারদিকে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়, তালা মেরে দওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যার পর প্রবেশ নিষেধ করা হয়। কিন্তু চাঁদপুরের এ স্কুলটি রাখা হয়েছে খোলামেলা।

তার মতে, ‘জনগণের প্রতিষ্ঠানকে জনগণের জন্য অবারিত রাখতে হবে। যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় তাহলে স্থানীয়রা তার ক্ষতি করার মনোভাব দেখান। যদি তার প্রবেশে কোনো বাধা না থাকে, সে যদি নিজের মনে করতে পারে, তাহলে তার ক্ষতি সে করবে না’।

জনবান্ধব ভবনের বিষয়ে মজিদ রিয়াজ আরো বলেন, ‘এটাকে আমি চেয়েছি একটা পার্ক বা বিনোদন যেন মানুষ পায় তার যেন চোখের একটা আরাম তৈরি হয় সেটা’।

তিনি জানান, সে জন্য আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেন সন্ধ্যা বা রাতের বেলায়ও কেউ সেখানে গিয়ে সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।

স্থানীয়দের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সে জন্য আমি স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিকদের কাজে লাগিয়েছি। কারণ এটা তাদের হক। তাদের এলাকার কাজে আমি ঢাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে যাওয়াটা হতো অন্যায়।

তবে এ নির্মাণ ছিল না বাধাহীন। মানুষের চিন্তা কাঠামোয় স্কুল বা প্রাতিষ্ঠানিক ভবন বলতে যে চেহারা ফুটে উঠে তা তার বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ হয়ত বলছিলেন দোতলায় কলাপসিবল গেট দেওয়ার কথা, কেউ দিচ্ছিলেন অন্য সব ভবনের মতো করে তৈরির প্রস্তাব। কিন্তু একজন শিল্পী তো ভাবছিলেন মনে মনে ভবিষ্যতের কথা, নতুন প্রণোদনার কথা, উত্তরণর পথ তার ভাবনায়। তিনি দাঁতে দাঁত চেপে সেসব ব্যথা সহ্য করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

অটোরিকশায় ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভিডিও ভাইরাল

banglarmukh official

বগুড়ায় স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

banglarmukh official

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের

banglarmukh official

বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার শিশু, ভগ্নিপতি ও শ্বশুর আটক

banglarmukh official