নিউজ ডেস্কঃ দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক অমিত হাবিব আর নেই। এক সপ্তাহ আগে কর্মস্থলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চলে গিয়েছিলেন লাইফ সাপোর্টে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে সেই অবস্থায়ই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী অমিত হাবিবের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তিন দশকের বেশি সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন অমিত হাবিব।
সম্পাদক হওয়ার আগে তিনি উপদেষ্টা সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিক হিসেবে অসাধারণ দক্ষতার জন্য গণমাধ্যমজগতে খ্যাতি ছিল তাঁর। অনেকেই তাঁকে ‘অমিতদা’ বলে ডাকতেন।
অমিত হাবিবের ছোট ভাই ফয়জুল হাবিব জানিয়েছেন, গত ২১ জুলাই বিকেলে কর্মস্থলে অমিত হাবিব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাঁকে বিআরবি হাসপাতালে নিয়ে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়। তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তাঁর হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়েছে। তাঁর রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে ব্রেনের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পরে ২৫ জুলাই তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত রাত সোয়া ১১টায় চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
দেশ রূপান্তরের প্রধান প্রতিবেদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় দেশ রূপান্তর কার্যালয়ে অমিত হাবিবের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। এরপর তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে নিয়ে যাওয়া হবে।
অমিত হাবিবের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৩ অক্টোবর ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাজির বেড় ইউনিয়নে। তাঁর বাবা মৃত ওয়াহেদুল হক, মা মৃত শামসুন নাহার বেগম। যশোর এমএম কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এর পরপরই তিনি লেখালেখিতে যুক্ত হন। সে সময় বিচিন্তা, পূর্বাভাস, প্রিয় প্রজন্ম পত্রিকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক, অনুষ্ঠানের সমালোচনা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখে বেশ জনপ্রিয়তা পান।
১৯৮৭ সালে দৈনিক খবরে সহসম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন অমিত হাবিব। ১৯৯১ সালে দৈনিক আজকের কাগজের নতুন যাত্রায় সঙ্গী হন তিনি। পরে আজকের কাগজ থেকে ভোরের কাগজে যান যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে। পরে এই পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক হন তিনি।
২০০৩ সালে যায়যায়দিনে প্রধান বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দিয়ে নতুন এই দৈনিকের কর্মী গোছানোর কাজে হাত দেন তিনি। প্রায় তিন বছর পর ২০০৬ সালে যায়যায়দিন প্রকাশিত হয়, এর মূল কাজটি তাঁকেই করতে হতো। ২০০৭ সালে তিনি চীনের আন্তর্জাতিক বেতারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন। সেখানে এক বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং দৈনিক সমকালে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
২০০৯ সালে কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর পত্রিকাটি প্রকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই রেকর্ড গড়ে প্রচারসংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যাওয়া এ পত্রিকায় ২০১৩ সাল থেকে উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি কালের কণ্ঠ ছেড়ে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক দেশ রূপান্তরে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের শোক
গত রাতে এক শোকবার্তায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা পেশার প্রতি অমিত হাবিবের নির্মোহ ভালোবাসা ও নিরলস পরিশ্রম একজন সংবাদকর্মী থেকে তাঁকে কালক্রমে একজন সফল সম্পাদকে পরিণত করেছে। সংবাদ চয়ন ও উপস্থাপনে তাঁর মুনশিয়ানা একই সঙ্গে পাঠক এবং নীতিনির্ধারকদের নজর কাড়ত। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর হাত দিয়ে একাধিক জনপ্রিয় দৈনিক আত্মপ্রকাশ করেছিল। এর সর্বশেষ ছিল দৈনিক দেশ রূপান্তর। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ’