১৪৪৩ হিজরি পবিত্র হজ আজ। দুই বছর বিরতির পর সারাবিশ্ব থেকে ১০ লাখ হজযাত্রী অবস্থান নিয়েছে ঐতিহাসিক আরাফায়। প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে হয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল-হাজ্জু আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। এ দিন মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন। ক্ষমার আশায় সারাবিশ্ব থেকে আগত হজযাত্রীর আরাফায় তাকবির, তালবিয়া, ক্ষমা প্রার্থনা ও কান্না-রোনাজারিতে ব্যস্ত। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্থল বা মিলনমেলা এ আরাফার ময়দান। আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের ভাষণ দেবেন শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা।
১৪৪৩ হিজরির হজের জন্য সৌদি সরকার ১০ লাখ বিদেশীর হজের অনুমোদন দিয়েছেন। যথাযথ ব্যবস্থাপনায় পবিত্র নগরী মক্কা থেকে বিশেষ যানবাহনে হজযাত্রীরা আরাফার ময়দানে উপস্থিত হচ্ছেন। ১০ লাখ হাজির কণ্ঠে লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত এবারের আরাফার ময়দান।
প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ১৪৪১ ও ১৪৪২ হিজরির হজে নির্ধারিত অল্পসংখ্যক স্থানীয় ও প্রবাসীরা হজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজ পালনকারীদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সেবার সর্বোচ্চ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছে হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ। আরাফাতের ময়দানে প্রচণ্ড গরম মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবক ও স্বাস্থ্য সেবকদল।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ হজে অংশগ্রহণকারী আল্লাহর মেহমানদের আরাফাতের ময়দানে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এবার হজে অংশগ্রহণকারী ১০ লাখ হাজি আজ জোহরের আগেই ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন । আরাফার ময়দানে উপস্থিত হাজিরা দুপুরে সৌদি উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য এবং রাবেতাতু আল-আলাম আল-ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসার কণ্ঠে শুনবেন হজের খুতবা ও দিকনির্দেশনা।
তাওবাহ-ইসতেগফার, তাকবির ও তালবিয়ায় মুখরিত থাকবে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান। হজে অংশগ্রহণকারীরা এক সামিয়ানায় সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
দুই বছর পর হাজিদের উপস্থিতিতে এবারের আরাফাতের ময়দান হবে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বিশেষ ব্যবস্থায় জাবালে রহমতের পাদদেশে হজ পালন করবেন হাজিরা। মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের ইতিহাসে এবারই প্রথম শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে খুতবা দেবেন।
বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহও আজ হজ পালনকারীদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে তাদের জন্য দোয়া কামনা করছে। যাতে হজে অংশগ্রহণকারীরা সুস্বাস্থ্য, সুস্থতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে সুন্দরভাবে হজ সম্পাদন করতে পারে।
আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত সব হাজির কাণ্ঠে একই সঙ্গীত-
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’।
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমত প্রাপ্তি ও নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফরিয়াদ জানাবে সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ১০ লাখ হাজির উপস্থিতিতে মহামারি করোনার এ সময়েও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যের অবতারণা হবে আজ আরাফাতের ময়দানে।
আজ ৯ জিলহজ (শুক্রবার) সূর্যোদয়ের পর থেকে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আরাফাতের ময়দান মুখী হজে অংশগ্রহণকারীরা। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা ও ইবাদত-বন্দেগি চলবে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত।
বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ কামনাসহ মহামারি করোনা থেকে মুক্তি চাইবে হজে অংশগ্রহণকারীরা। দিনভর কান্নাকাটি দোয়া-ইসতেগফারের পর সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে রওনা হবে মুজদালিফার দিকে। যেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাবে মুসলিম উম্মাহ। আর এর মাধ্যমেই পালিত হবে হজ।
উল্লেখ্য, মহামারি করোনার কারণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ১৪৪১ ও ১৪৪২ হিজরির হজে সৌদি আরবের বাইরে থেকে পবিত্র হজ পালনে কোনো লোক অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তবে ওই দুই বছর সৌদি বসবাসকারী বিশ্বের ১৬০ দেশের মানুষ অল্প সংখ্যায় হজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর এবার সারাবিশ্ব থেকে অংশগ্রহণ করেছেন ১০ লাখ মানুষ। যেখানে অন্যান্য বছর প্রায় ২৫ লাখ লোক হজে অংশগ্রহণ করতো।
মহামারি করোনার এ সময়ে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে যথাযথভাবে হজ সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। মুসলিম উম্মাহর গুনাহ মাফ করুন। হজে অংশগ্রহণকারীদের হজে মাবরূর দান করুন। সারা দুনিয়াকে মহামারি করোনাসহ যাবতীয় দুর্যোগ থেকে মুক্তি দিন। আমিন।