খান রুবেল: ঢাকার পাশাপাশি এবার বরিশালেও বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গতকাল মঙ্গলবার একদিনেই বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৬২ জন। এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯ জন।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়লেও এডিস মশা নিধন কার্যক্রমের তেমন কোনো কার্যক্রমই নেই বরিশালে। দেখা যাচ্ছে না ডেঙ্গু সচেতনতামূলক কার্যক্রমও। আর এ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে নগরবাসী।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, বরিশালে এডিস মশা নেই। আক্রান্তরা সবাই শহরের বাইরের। তার পরেও মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তারা। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জরিপ না হলেও আপাতত চিকিৎসাতেই চলছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম। তাছাড়া ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও বৃহত্তর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ব্যবস্থা হয়নি। সাধারণ রোগীদের সাথেই রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ‘গত জুন মাসের শুরু থেকেই এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকে। তবে জুন থেকে চলতি জুলাই মাস পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৩ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৪ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত। এসময় ২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।
তাছাড়া চলতি মাসের ৪ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে শেবাচিম হাসপাতালে। এর আগে জুন মাসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে ১৪৯ জন। গত ২৮ জুন শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে মে মাসে ১৬ জন আক্রান্ত এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এপ্রিল মাসে ৩, মার্চে ২, ফেব্রুয়ারিতে ১১ এবং জানুয়ারি মাসে ১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।
সোমবার দুপুরের দিকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার জাহিদুল ইসলাম (২২)। তার মা শাহনাজ বেগম জানান, ‘তাদের ছেলে ঈদের আগে একমাস ঢাকায় বাবুর্চির কাজ করেছে। ঈদের একদিন আগে গায়ে জ্বর আসে। সোমবার দুপুরে পরীক্ষা করে জানতে পারি জাহিদুল ডেঙ্গু আক্রান্ত।
পাশের বেডেই চিকিৎসাধীন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমির হোসেনের ছেলে আরিফ (১৯)। তার স্বজনরা জানিয়েছেন, ‘ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আগে কিছুদিন ঢাকায় ছিলো আরিফ। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পরে জ্বর হয়। প্রথমে স্থানীয়ভাবে জ্বরের ওষুধ সেবন করালেও কাজ হয়নি। পরে হাসপাতালে ভর্তি করে জানতে পারেন আরিফ ডেঙ্গু আক্রান্ত।
শুধু আরিফ এবং জাহিদুল নয়, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ১০ জন রোগী জানিয়েছেন, তারা সবাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আগে ঢাকায় ছিলেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের গত ছয় মাসে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৬৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৩০ জন। তবে ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর তথ্যে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় এবং শেবাচিম হাসপাতালের সঙ্গে মিল নেই। চলতি বছরে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি মৃত্যু হয়েছে একজনের। আর শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় একসঙ্গে এতজন রোগী আক্রান্তের বিষয়টি আমাদের জন্য হুমকি। এখনই আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ। বর্তমানে বর্ষা মৌসুম, যাতে ঘরে বা আশেপাশে কোথাও সামান্য পানিও জমে না থাকে সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
বরিশালে এডিস মশা আছে কিনা, সম্প্রতি সময়ে এ নিয়ে কোন সার্ভে (জরিপ) হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা সার্ভে করতে পারিনি। যখন দেখবো কোন এলাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে, তখন সেই এলাকায় সার্ভে করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
এদিকে, ‘বর্ষা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। তারা বলছেন, ‘অনেক দিন ধরেই সিটি করপোরেশন থেকে মশার স্প্রে করা হচ্ছে না। নিউ হাউজ রোড, বাংলা বাজার, বান্দরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার বেশ উপদ্রপ বেড়েছে অনেক দিন ধরে। তবে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা রেজাউল করীম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তার দাবি, ‘আমরা খোঁজ খবর নিয়ে যেনেছি এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে তারা কেউ সিটি করপোরেশনের না। আবার যারা সিটি এলাকার বাসিন্দা তারা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে বরিশালে এসেছেন। বরিশালে এডিস মশা নেই বলে দাবি সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এই কর্মকর্তার।