21 C
Dhaka
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অন্যান্য প্রচ্ছদ বরিশাল

বরিশালে নির্বাচনের নৌকা-ধানের শীষের জয় ‘নির্ধারণ করবে’ হাতপাখা

বরিশাল সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই মূল লড়াই হলেও আলোচনায় উঠে আসছেন আরেকজন প্রার্থী। তিনি হলেন হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের ওবায়দুর রহমান মাহবুব। তিনি কত ভোট পাবেন, তার ওপর নির্ভর করতে পারে জয় পরাজয়।

বরিশালে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়টি ছিল ২০০৩ সালে। তখন প্রায় ২৫ হাজার ভোটে জিতে বিএনপি। ২০০৮ সালে বিএনপির তিন জন প্রার্থীর ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার শরফুদ্দীন সাণ্টুর সঙ্গে শ চারেক ভোটে জিতেন।

২০১৩ সালে এখানে বিএনপির আহসান হাবিব কামালের কাছে হিরন হারেন ১৬ হাজার ভোটে। আর ভোটে পরাজয় হলেও হিরন পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২৩ হাজার ভেটি বেশি পান।

মেয়র কামালের নিস্প্রভ পাঁচ বছরের কারণে এমনিতেই বিএনপি এবার কিছুটা চাপে ও ভোটারদের প্রশ্নের মুখে। আর ওপর হাতপাখা প্রতীকে যদি রংপুর, খুলনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পড়ে, তাহলে সেটা বিএনপির জন্য বিপত্তির কারণ হতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে হাতপাখা প্রতীকের ভোটই নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে জয়ের ব্যবধান গড়ে দেবে।

গত ডিসেম্বরে রংপুর, মে তে খুলনা আর জুনে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের ভোট চমকে দিয়েছে রাজনীতিকে। গোপনে ধর্মভিত্তিক এই দলটি যে আলোচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তুলনায় একটি অবস্থান করে নিতে পেরেছে সেটি স্পষ্ট।

ইসলামী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র বরিশালেই অবস্থিত। সেটি অবশ্য মহানগরের বাইরে চরমোনাই উপজেলায়। তার পরেও বিভাগীয় শহরটিতে দলটির একটি প্রভাব থাকার দাবি করছেন নেতারা। ৩০ জুলাইয়ের ভোটে সেটির প্রমাণ দেয়ারও চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন তারা।

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাস বলে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির বরাবরই সুসম্পর্ক রয়েছে। আবার জন্মের পর মুসলিম লীগের একটি বড় অংশ বিএনপিতে বিলীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা এই মুসলিম লীগও দীর্ঘদিন ধর্মের বিষয়টি সামনে এনে রাজনীতি করেছে। ফলে এই বিশ্বাসীদের ভোট ভাগ হলে সেটি বিএনপিরই ক্ষতি হয়।

ইসলামী আন্দোলন এই নির্বাচনে প্রার্থী না দিলে নিশ্চিতভাবেই বিএনপির বাক্সে বেশি ভোট পড়ত।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রার্থী দিয়ে ইসলামী আন্দোলন প্রায় ৩০ হাজার ভোট পায় হাতপাখা প্রতীকে। আর ওই বছর বিজয়ী বিএনপি সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যবধান ছিল সাড়ে চার হাজার। আর যখন ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দেয়নি, তখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল আরও বেশি।

ইসলামী আন্দোলন দাবি করছে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, যেটি সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে দেখা যাচ্ছে। আর এবার তারা আরও বেশি ভোট পাওয়ার আশা করছেন।

ইসলামী আন্দোলনের সহযোগী সংগঠন ইসলামী কৃষক মজুর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রংপুর, কুমিল্লা এবং নারায়াণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন কারচুপির অভিযোগ ওঠেনি। এই তিন জায়গাতেই তৃতীয় অবস্থান আমাদের। অন্য জায়গাগুলোতেও একই অবস্থান ধরে রেখেছি আমরা। আর বরিশাল তো আমাদের ঘাঁটি। পীরসাহেব চরমোনাইয়ের দরবার শরিফ এখানে। বরিশাল সিটিতে আমাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোট রয়েছে।’

‘এছাড়া হেফাজতে ইসলাম ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তত ৩০ হাজার ভোট আছে এখানে। ফলে আমাদের ৫০ হাজারের সঙ্গে এই ভোট যোগ হলে আমাদের জয়ের সম্ভাবনাও আছে।’

‘ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি কে এম শরীয়তউল্লাহ বলেন, ‘বরিশাল সিটিতে ইসলামী আন্দোলন অর্থাৎ আমাদের কর্মী রয়েছে ৪১ হাজার। এই ভোট তো আমরা পাবই, সঙ্গে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও আমাদেরকে ভোট দেবে।’

ইসলামী আন্দোলনের কারণে ক্ষতি হতে পারে, এটা স্বীকার করছেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারও। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘হাতপাখা আমাদের কিছু ভোট নষ্ট করবে এটা ঠিক। তবে তাতে আমাদের জয়লাভে কোন বাধা সৃষ্টি হবে না। তাদের ভোট তাদের কাছে যাবে আর আমাদেরটা আমাদের কাছে। বরিশালের মানুষ বিএনপিকে পছন্দ করে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি এমনিতেই জয়লাভ করবে বরিশাল থেকে।’

হেফাজত নেই বিএনপির পাশে

২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে ব্যাপক উন্নয়ন করার পরও শওকত হোসেন হিরনকে যেসব কারণে হারতে হয়েছিল তার একটি ছিল ধর্মীয় আবেগ। ওই বছর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদেরকে উৎখাতে চালানো অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে ভোটে আবেগী প্রচার আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।

তবে পরে প্রমাণ হয়, সেসব প্রচার কেবলই বানোয়াট প্রচার ছিল আর এবারের সিটি নির্বাচনে এই ঘটনাটি কোনো প্রভাবই ফেলছে না। তার ওপর ২০১৬ সালের শুরুতে ২০ দলীয় জোট থেকে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোট সরে দাঁড়ানোয় ভোটের ময়দানে এই শক্তির সমর্থনও পাচ্ছে না বিএনপি।

এই ইসলামী ঐক্যজোটই মূলত হেফাজতে ইসলামীকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের ভোট নিয়ে মাথাব্যাথা না থাকলেও এর ভেতরে রাজনৈতিক কর্মীদের একটি বড় অংশের সমর্থন বরিশালে পাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন।

বরিশালে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব হেফাজতে ইসলামীর বরিশাল বিভাগীয় সম্বয়য়কারী। আবার তিনি ধর্মভিত্তিক আরেক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতেরও সভাপতি। ফলে কওমি বিশ্বাসীদের ভোটও ধানের শীষের বদলে হাতপাখায় পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

বরিশালে ধর্মভিত্তিক আরেক আলোচিত দল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামের তেমন প্রভাব নেই বললেই চলে। ফলে তাদের সমর্থন বিএনপির জন্য তেমন কোনো সুবিধা হওয়ার কারণ নেই।

বরিশাল মহানগর এমনিতে বিএনপির শক্তি পরীক্ষিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যতগুলো নির্বাচনে তারা অংশ নিয়েছে তার মধ্যে ২০০৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই কেবল হারতে হয়েছে তাদের। তবে সে সময় হারের কারণ ছিল দলের একাধিক নেতার ভোটে লড়া।

২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৯০ শতাংশ আসনে বিএনপির ভরাডুবি হলেও বরিশাল সদর আসন তারা ধরে রাখতে পারে। আর পাঁচ বছর মেয়র থাকাকালে শেখ শওকত হোসেন হীরন বরিশালে ব্যাপক উন্নয়ন করলেও ভোটে তার প্রভাব পড়েনি, জিতে যায় বিএনপি।

তবে এবার গত পাঁচ বছরে বিএনপির মেয়র আহসান হাবিব কামালের বলার মতো কিছু করে দেখাতে না পারা এমনিতেই বিএনপির জন্য নেতিবাচক প্রমাণ হওয়ার কারণ আছে। তার ওপর ইসলামী রাজনৈতিক বিশ্বাসীদের অনুসারীরা পাশে না থাকাটার প্রভাব সোমবার রাতে প্রকাশ হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

বরিশাল বিমানবন্দর থানার মঙ্গল হাটা গ্রামে মৎস্য খামারের মালিক কে মিথ্যে চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে মৎস্য খামার দখল

banglarmukh official

বরিশালে আদালতের তলবে ক্ষমা চেয়ে রেহাই পেলেন ওসি, শোকজের মুখে তদন্ত কর্মকর্তা

banglarmukh official

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন

banglarmukh official

সারা দেশে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি

banglarmukh official

জাহাজে ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় হত্যা করা হয় ৭ জনকে

banglarmukh official

আগামীকাল শুরু হচ্ছে অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য সংগ্রহ

banglarmukh official