কখনো প্রেস আবার কখনো পুলিশ নানা সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো বরিশাল জুড়ে।
বরিশাল নগরীর বিভিন্ন সড়কে দেখা যায় অলিতে গলিতে সাংবাদিক! এদের বিভিন্ন সময় অনলাইন কিছু পত্রিকার বা সরকারি কিছু দপ্তরের লোগোসহ স্টিকার মটরসাইকেলে ব্যবহার করে প্রতারণা করছে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষদের সাথে।
সরেজমিনে দেখাযায়, নগরীতে উদ্বেগজনকহারে ভুয়া সাংবাদিক ও নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলের ছড়াছড়ি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ভুয়া সাংবাদিক নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল দিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন।
তাছাড়া প্রেস, সাংবাদিক, পুলিশ, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, এলজিইডি,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, এম খান লিমিটেড, শেবাচিম হাসপাতাল, স্বাস্থ্য বিভাগ, আদালত,বিদুৎ বিভাগ, এডভোকেট,পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ একাধীক প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ও বিভিন্ন নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অনলাইন কালু টিভি, কাশেম টিভিসহ বিভিন্ন স্টিকার যুক্ত যানবাহন।
আবার অনেকে এসব সাংবাদিকের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে মুখ খুলতে নারাজ। নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকেরা চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে মূল ধারার সাংবাদিকেরা প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
অপর দিকে এসব ভূয়া সাংবাদিকদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি জেলা বা উপজেলার বাসিন্দারা। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলা রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো ‘সাংবাদিক’ ও ‘প্রেস’ লেখা গাড়ি, মোটরসাইকেলের মালিক বেশির ভাগই সাংবাদিক নন। সাংবাদিক লেখা মোটরসাইকেল দিয়ে অনেক সময় নগরীতে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড ও ঘটানো হচ্ছে।
এবিষয় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্টজন এস এম ইকবাল বরিশাল নিউজ২৪কে বলেন, একটা যে কোন পত্রিকার কার্ড বা গাড়ির সামনে স্টিকার লাগিয়ে সাংবাদিকতা পেশা থেকে হয়তো কিছু অর্থ বা সুযোগ নিচ্ছেন তারা। কারণ আগের মত সেই সাংবাদিকতা নেই। তার কারণেই এমনটা হচ্ছে। আমি মনে করি প্রশাসনের উচিত সাংবাদিক’ ও ‘প্রেস’ লেখা কাগজপত্রবিহীন অবৈধ মোটরসাইকেল আটক ও মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
নয়তো সাংবাদিকতা পেশার গ্রহণযোগ্যতা সমাজে মানুষের কাছে কমে আসবে।
এবিষয় বরিশাল রিপোর্টর্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহা বরিশাল নিউজ২৪কে বলেন, যারা বিভিন্ন যানবাহনের সামনে প্রেস লেখা স্টিকার ব্যবহার করে তারা কি আসলেই সাংবাদিক? এটা গুরুত্বের সাথে প্রশাসনের দেখা উচিত। কারণ বরিশালে দিন দিন বেড়েই চলছে অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংখ্যা। সরকারি ভাবে কোন নীতিমালা না থাকায় অনলাইন পোর্টালের দিকে ঝুঁকছে তারা। তবে বরিশাল প্রশাসনকে এবিষয় আরো কঠোর হতে হবে। তিনি আরো বলেন, গাড়ি প্রেস লেখা স্টিকার ব্যবহার করলে প্রশাসনের উচিত গাড়ির কাগজপত্র চেক করা। সে যেই হোক তাকে ছাড় না দেওয়া।
এ দিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, অনলাইন পোর্টালে কোনো নীতিমালা না থাকায় অসাংবাদিকেরা তৈরি করেছেন সংবাদ সংস্থা। এসব অনলাইনে প্রকাশক,সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে যুক্ত হচ্ছে বরিশালের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চোর,রাজনৈতিক নেতা, ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে মাদকসেবনকারী ও বিক্রেতা পর্যন্ত। মাত্র ২হাজার টাকায় একটি অনলাইন পত্রিকা খুলে কার্ড বিক্রির ও অভিযোগ রয়েছে।
এসব ছন্নছাড়া হাতুড়ি মার্কা সাংবাদিকরা বিভিন্ন মোটরসাইকেলের সামনে-পেছনে সাংবাদিক ও প্রেস লেখে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্ম। ট্রাফিক পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মধ্যে এসব ভুয়া সাংবাদিকের নম্বরবিহীন গাড়িসহ আটক করলেও পড়ে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নামসর্বস্ব পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের ভুয়া সাংবাদিকেরা নিজেদের নাম পর্যন্ত লিখতে পারে না। তারা নানা অপকর্ম নির্বিঘে চালিয়ে যাওয়ার জন্য পত্রিকা ও পোর্টালের পরিচয়পত্র গলায় ও কোমরে ঝুলিয়ে চুষে বেড়াচ্ছে।
এবিষয় বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক (এসি) মাসুদ রানা জানান, নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। গাড়ির সামনে পুলিশ স্টিকার লিখে প্রশাসনের কোন সদস্য গাড়ি চালাতে পারবে না। কারণ একজন সদস্যর জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর বদনাম হবে সেটা কোন দিনই হতে দেয়া যাবে না। সড়কে সড়কে গাড়ির কাগজপত্র চেক করার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কেউ পুলিশ স্টিকার যুক্ত গাড়ি দেখে সাথে সাথে আমাদের জানালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।