খান রুবেল : পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই যাত্রী সংকটে ছিলো বরিশাল-ঢাকাগামী বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। তবে ঈদ এলেই হাসি ফোটে লঞ্চ মালিক এবং শ্রমিকদের মুখে। কেননা বছরজুড়ে যাত্রী সংকট থাকলেও ঈদে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায় লঞ্চগুলোতে।
এবার কোরবানির ঈদেও সেই চিত্র ফুটে উঠেছে বরিশাল নদী বন্দরে। প্রিয়জনদের সাথে ঈদ উদ্যাপন শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলমুখি যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে ঢাকাগামী লঞ্চে। যাত্রী চাপ সামাল দিতে রোববার রাতে বরিশাল নৌবন্দর থেকে ১০টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এদিকে, ‘ লঞ্চের থেকে কয়েকগুণ বেশি ভিড় দেখা গেছে সড়ক পথে বাসগুলোতে। এর ফলে সময়সূচি ছাড়াই বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে একের পর এক বাস। নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ছাড়াও নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডসহ জেলার বিভিন্ন বাসস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে বরিশাল ত্যাগ করেছে তিন শতাধিক বাস। এসব যানে আগামী কয়েক দিনের টিকিট অগ্রীম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরেছেন জনসাধারণ।
এই সুযোগে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে লঞ্চ ও বাস মালিকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘পবিত্র ঈদ উল আযহার দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে কয়েক হাজার মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাত্রা করছেন। বাস এবং লঞ্চে সমান তালেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সড়ক পথেই যাত্রীর চাপ বেশি দেখা গেছে।
ঢাকাগামী বাসযাত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শারমীন বলেন, ‘সোমবার থেকে অফিস করতে হবে। তাই আজ (রোববার) ঢাকায় যাচ্ছি। কিন্তু কোন কাউন্টারেই বাসের টিকিট নেই। সব আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। বহু কষ্টে একজনের মাধ্যমে এক হাজার টাকা দিয়ে একটি টিকিট কিনেছি।
অপরদিকে, পদ্মা সেতু চালুর পড়ে যাত্রী সংকটে পড়েছে বরিশাল-ঢাকা রুটের বিলাশবহুল লঞ্চগুলো। যাত্রী সংকটের অজুহাতে সাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ ৩টি লঞ্চ চলাচল করে আসছিল। তবে ঈদের কারণে পুরানো রূপে ফিরেছে বরিশাল নদী বন্দর। ঈদ শেষে গত শনিবার থেকেই নদী বন্দরে যাত্রীদের ভীড় যেন উপচে পড়ছে। এ কারণে পূর্বের মতই কেবিনের টিকিট অনেকটা সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। তবে কাউন্সিলর না পেলেও হাত বাড়ালেই দালালদের কাছ থেকে বাড়তি দামে মিলছে কেবিনের টিকিট।
এমন অভিযোগ করেছেন ঢাকার উত্তরার স্টেশনারী মালামাল ব্যবসায়ী শহিদুল। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে গ্রামে ঈদ উদ্যাপন করে ঢাকায় ফিরছি। কিন্তু লঞ্চে যে পরিস্থিতি তাতে একটি কেবিন পেতে দম বেড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও ন্যায্য দামে কেবিনের টিকিট পাইনি। কাউন্টারে যাওয়া মাত্রই কেবিন খালি নেই বলে স্রেফ জানিয়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেক চেষ্টার পরে দালালের কাছ থেকে একটি কেবিনের টিকেট কিনেছি দ্বিগুণ দামে অর্থাৎ ২ হাজার টাকায়।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, ‘বরিশাল নদী বন্দর থেকে সরাসরি ৮টি বিলাস বহুল লঞ্চ ছেড়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। এছাড়া দুইটি ভায়া লঞ্চ যাত্রী নিয়ে বন্দর ছেড়েছে। যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাইকিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, ‘ঈদ শেষে কর্মস্থলগামী যাত্রীদের নিয়ে তিন শতাধিক বাস বরিশাল ত্যাগ করেছে। শনিবার থেকেই সড়ক পথে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে রোববার ভিড় ছিলো তুলনামুলক বেশি।