এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জেলার সংবাদ নারী ও শিশু প্রশাসন বরিশাল

মিন্নির গোপন জবানবন্দি প্রকাশ, এবার সুর পাল্টালেন পুলিশ সুপার

অনলাইন ডেস্ক :

বরগুনায় রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান সাক্ষী ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছিলেন, মিন্নি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত। আদালতে মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার আগেই তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে খুনের পরিকল্পনায় মিন্নির জড়িত থাকার কথা পুলিশ সুপার বলেছিলেন।

কিন্তু আদালতে দেওয়া মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশের পর পুলিশ সুপার তার সুর পাল্টে ফেলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার আগে তিনি মিডিয়াকে তার (মিন্নি) সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। বলেছেন, তদন্তে ঘটনার সঙ্গে মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।

আদালতে মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক গত সোমবার সংবাদ প্রকাশ করে। সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার জন্য ওই দিন পুলিশ সুপারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন। পুলিশ সুপারের কাছে সাংবাদিকরা মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সম্পর্কে জানতে চান।

তিনি তখন সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তাধীন মামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রকাশের সুযোগ নেই। যদি প্রকাশ পায় তাহলে মামলার তদন্তে সমস্যার সৃষ্টি হবে। তখন সাংবাদিকরা জানতে চান, একটি দৈনিক মিন্নির জবানবন্দি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তারা কিভাবে তথ্য পেল? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কপি পুলিশের পাশাপাশি আদালতে রক্ষিত থাকে। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা ওই জবানবন্দির কপি কাউকে সরবরাহ করেননি। এমনকি ওই পত্রিকাটি কোথা থেকে জবানবন্দির কপি পেয়েছে তাও তিনি জানেন না।

মিন্নিকে রিমান্ডে নেওয়ার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার যা বলেছিলেন

মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় গত ১৭ জুলাই। এর পরদিন মামলার অন্যতম আসামি রিশান ফরাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন পুলিশ সুপার তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। শুরুতেই পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘এই মামলা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং দু-একটি মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে। আমি আজকে আপনাদের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে যাচ্ছি। যাতে করে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি না থাকে।’

খুনের সঙ্গে জড়িত বলে মিন্নি কি নিজে স্বীকার করেছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘করেছে।’ কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘মিন্নি স্বীকার করেছে বলেই আমরা এই বিষয়গুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে যৌক্তিকতা তুলে ধরে রিমান্ডের আবেদন করেছি। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’ মিন্নি কিভাবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত—জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘মিন্নি শুরু থেকেই, যারা হত্যাকারী ছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। সে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অংশ। এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পূর্বেও সে এ হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে পরিকল্পনার জন্য যা যা দরকার, মিটিং করেছে হত্যাকারীদের সাথে।’

এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিভাগীয় জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশাল পিপি) লস্কর নুরুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মামলার জন্য সবচেয়ে বড় উপাদান। এটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। যদি আগেভাগেই তা প্রকাশ পায়, তাহলে তা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত কিংবা ভিন্ন খাতে মামলাটি প্রবাহিত করার আশঙ্কা থাকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বাইরে এর কপি যাওয়া আইনসিদ্ধ নয়।’

এদিকে এ ব্যাপারে মিন্নির পরিবার প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, যারা প্রকাশ্যে রিফাতকে কোপাল, তারাও জবানবন্দি দিয়েছে। সেটি সংবাদমাধ্যমে না এসে কেন ঘুরেফিরে তাদের মেয়ের (মিন্নি) জবানবন্দি প্রকাশ হচ্ছে? কারাই বা এই জবানবন্দি সংবাদমাধ্যমকে সরবরাহ করছে? শুধু তা-ই নয়, নয়নের বাসা থেকে মিন্নির ব্যবহৃত জিনিসপত্র উদ্ধার নিয়ে তার পরিবার প্রশ্ন তুলেছে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর একটি অনলাইন পোর্টালে দেখেছি, মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধের জের ধরে রিফাত খুন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোবাইল ফোন নিয়ে রিফাত ও মিন্নির মধ্যে ঘটনার দুই দিন আগে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমরা জানতাম। যেটি আমরা জানি না সেটি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড? গত সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকে মিন্নির স্বীকারোক্তি নিয়ে সংবাদ ছেপেছে। তারাও বলেছে, মোবাইল ফোন নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। অবাক হলাম এই ভেবে, যারা রিফাতকে কুপিয়েছে, তারা আদালতে কী বলেছে তা জানতে পেলাম না।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রভাবশালী চক্রটি নির্যাতন করে মিন্নির কাছ থেকে আদায় করা জবানবন্দি প্রকাশ্যে এনেছে। যাতে তারা প্রমাণ করতে পারে যে মিন্নির জন্যই রিফাত খুন হয়েছে। তাতে মামলা দুর্বল হবে। প্রভাবশালীদের ক্যাডাররা খুনের দায় থেকে বেঁচে যাবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official