নিউজ ডেস্ক :
আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আমার পুত্রবধূ নয়। আপনারা বার বার কেন লেখেন, রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি। এ লেখায় আমি ভীষণ কষ্ট পাই। একটা মেয়ের জন্য দুটি ছেলের জীবন চলে গেছে। অনেকগুলো পরিবার হত্যায় জড়িত হয়েছে। আপনারা কোনোদিন লিখবেন না। গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি রোববার বিকালে এ আরজি জানান রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, দুলাল শরীফ মানসিকভাবে অসুস্থ। তার কথায় আপনারা কান দেবেন না।
সোমবার (২৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবির বলেন, কোরবানির ঈদের আগেই এ মামলার চার্জশিট আদালতে দিতে পারব। আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এখনও এজাহারভুক্ত যে চার আসামি পলাতক তাদের গ্রেফতার করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দুলাল শরীফ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক হাতে নিয়ে বলেন, আমি বার বার বলেছি। তারপরও আমি যখন দেখি আপনারা লেখেন- মিন্নি আমার পুত্রবধূ। তখন কষ্টে আমার বুকটা ফাইটা যায়। তিনি বলেন, আমি পুত্রশোকে কাতর। ওই মিন্নির কারণে আমার একমাত্র ছেলে রিফাতকে নয়ন বন্ড গ্রুপ নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমি যদি জানতাম মিন্নি নয়ন বন্ডের (সাব্বির আহমেদ নয়ন) স্ত্রী, তাহলে আমি কিশোরের (মিন্নির বাবা) মতো সুদখোরের মেয়ের সঙ্গে পাতানো বিয়েতে রাজি হতাম না।
নয়ন ও মিন্নির বিয়ের কাবিননামা দেখিয়ে দুলাল শরীফ বলেন, দেখুন এই হল তাদের বিয়ে। রেজিস্ট্রি নম্বর ১৪৫/২০১৮। বরগুনা পৌরসভার ৪-৫-৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। আমার ছেলেকে খুনের পরই এ কাবিননামা জনসম্মুখে চলে আসে। কই মিন্নির বাবা তো প্রতিবাদ করেননি। আমি ওই কাজী আনিসুর রহমান ভূঁইয়ার কাছে গিয়ে কাবিনের সত্যতা জেনে এসেছি। আজ পর্যন্ত মিন্নির বাবা মিন্নি ও নয়ন বন্ডের তালাকনামা দেখাতে পারেনি। আপনারাই বলেন, মিন্নি কী করে আমার পুত্রবধূ হয়।
দুলাল শরীফ আরও বলেন, মিন্নি-নয়ন ১৫ অক্টোবর ২০১৮ বিয়ে করে। সেই বিয়ে বলবৎ থাকাকালে কিশোর তা গোপন করে রিফাত শরীফের সঙ্গে ২৬ এপ্রিল ২০১৯ আবার বিয়ে দেয়। আমি বরগুনা জেলার নামি-দামি মাওলানাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, একটি নারীর দুটো বিয়ে হতে পারে না। নারীর বিয়ে বলবৎ থাকাকালে অন্য কাউকে বিয়ে করলে সেই বিয়ে ফাসিক হয়।
মাওলানা আলতাফ হোসেন বলেন, ফাসিক শব্দের অর্থ বাতিল। একজন পুরুষের চার স্ত্রী থাকতে পারে। কিন্তু এক নারীর একই সঙ্গে একাধিক স্বামী থাকা শরিয়তে নেই।
দুলাল শরীফ চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। আমি বাড়িতে যেতে পারি না। আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। রিফাতের কথা মনে করে সে বারবার জ্ঞান হারায়। দিনে দু-তিনবার ছেলের কবরের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে। আমার ঘরে রান্না হয় না। একমাত্র মেয়ে মৌ তার ভাইয়ের শোকে পাথর হয়ে গেছে। আমার পক্ষে কেউ নেই। আমি কী করে কাকে নিয়ে বেঁচে থাকব। আমার একমাত্র অবলম্বন আজ নেই। আমি আমার মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না। অথচ আপনাদের মত মিডিয়ার লোক মিন্নির মতো একজন খুনির জন্য মায়াকান্না করছেন।
তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন পত্রিকা দেখে লজ্জা পাই। মনে হচ্ছে খুন হয়েছে মিন্নি। আমার ছেলের জন্য কারও দরদ নেই। সব দরদ মিন্নির জন্য। তিনি আরও বলেন, ওই মিন্নির জন্য আমার ছেলে খুন হয়েছে। মিন্নি খুনি।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, দুলাল শরীফের মাথা ঠিক নেই। মিন্নি রিফাত শরীফের স্ত্রী না হলে ওই দিন (২৬ জুন) আমি কেন আমার জামাইকে নিয়ে বরিশাল গেলাম। আমি জামাইয়ের জন্য অনেক টাকা ব্যয় করেছি। সারা রাত সজাগ ছিলাম। আমার জামাই না হলে কেন আমি এত কষ্ট করতে যাব।
কিশোরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কাবিননামা নিয়ে মিন্নিকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছেন কি না। জবাবে কিশোর বলেন, আমার মেয়ে মিন্নি বারবার বলেছে, নয়ন আমাকে জোর করে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। কাজী আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বলেছেন- মিন্নি ও নয়ন রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছে। সেই বিয়ের তালাক না দিয়ে আবার কেন বিয়ে দিলেন? জবাবে কিশোর বলেন, এটা কোনো পাগলেও করে না। তিনি বলেন, দুলাল শরীফ ভুয়া কাবিননামা বানাইছে। এটা হতে পারে না। আমরা তো মুসলমান। আমরা তো সমাজে বসবাস করি। তিনি বলেন, দুলাল শরীফ হয়তো কারও পরামর্শে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিতেছেন।