রিমান্ডে একের পর এক – বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী’ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।
এ সময়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার (১৭ জুলাই) মিন্নির রিমান্ড মঞ্জুরের পর পু’লিশের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছে মিন্নি। ইতোমধ্যেই মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও মিন্নি যুক্ত ছিলেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জে’লা পু’লিশের এক সদস্য বলেন, ‘মূলত রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল না। তাকে মারধর করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্ঘ’টনাবশত নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।’
এছাড়াও বরগুনা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন বুধবার রিফাত শরীফ হ’ত্যাকা’ণ্ড সংগঠিত হয়। ঘটনার দু’দিন আগে সোমবার হেলাল নামে এক ছেলের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় রিফাত শরীফ। হেলাল রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সেই মোবাইল ফোন উ’দ্ধারের জন্য নয়ন বন্ড মিন্নির দারস্থ হয়।
পরে রিফাত শরীফের কাছ থেকে ফোন উ’দ্ধার করে মিন্নি। কিন্তু ওই ফোন উ’দ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মা’রধরের শিকার হন মিন্নি। পরে হ’ত্যাকা’ণ্ডের আগের দিন মঙ্গলবার নয়নের সঙ্গে দেখা করে মিন্নি সেই মোবাইল নয়নের হাতে তুলে দেন।
এ সময় মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফের হাতে যে মা’রধরের শিকার হয়েছেন তার প্রতিশোধ নিতে নয়নকে রিফাত শরীফকে মা’রধর করতে বলেন। তবে মা’রধরের সময় নয়ন যাতে উপস্থিত না থাকেন, সেটাও মিন্নি নয়নকে বলে দেন। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় বরগুনা কলেজ মাঠে মিটিং করে রিফাত শরীফকে মা’রধরের প্রস্তুতি গ্রহণ করে বন্ড বাহিনী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জে’লা পু’লিশের অ’পর এক সদস্য জানান, ‘হা’মলার আগ মুহূর্তে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নি কলেজ থেকে বের হলেও কলেজের সামনে রিফাতকে মা’রধরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো প্রস্তুতি দেখতে না পেয়ে সময় ক্ষেপণের জন্য রিফাত শরীফকে নিয়ে আবার কলেজে প্রবেশ করেন।
এর কিছুক্ষণ পরই বন্ড বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য একত্রিত হয়ে রিফাত শরীফকে আ’টক করে মা’রধর করতে করতে কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে পূর্ব দিকে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাতকে মা’রধর করা হচ্ছে দেখেই মিন্নি তখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন।
পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে নয়ন বন্ড রিফাত শরীফকে মা’রধর শুরু করলে মিন্নি তখনই এগিয়ে আসে। মূলত মিন্নি রিফাত শরীফকে বাঁ’চাতে নয়, রিফাত শরীফকে মা’রধরের অ’ভিযোগ থেকে নয়ন বন্ডকে বাঁ’চাতেই বারবার নয়ন বন্ডকে প্রতিহত করেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন মিন্নি।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনার পু’লিশ লাইনে নিয়ে যায় পু’লিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও পু’লিশের কৌশলী এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আ’টকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হ’ত্যাকা’ণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই মিন্নিকে গ্রে’ফতার করে পু’লিশ।
পরবর্তীতে বুধবার (১৭ জুলাই) মিন্নিকে আ’দালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পু’লিশ। সেখানেও আ’দালতের করা প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি মিন্নি। ফলে আ’দালত মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।