বরিশালে প্রতিদিন সন্ধ্যার সাথে সাথেই উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যায় মশার উৎপাত। তবুও মশক নিধনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের। ফলে মশা নিধনে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছে নগরবাসী।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাহিদা বেগম অভিযোগ করেন, তার বাসার সড়কে গত একমাসেও কেউ মশার ওষুধ স্প্রে করতে আসেনি। মাঝে মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার লোক আসে। তাদের টাকা না দিলে কাজ করে না। তাঁরা বাসার আশেপাশের এলাকা পরিষ্কারের জন্য টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে চলে যায়। অথচ এই কাজের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা পলাশ হোসেন বলেন, নতুনবাজার হলো মশার কারখানা। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে মশা ভনভন শব্দে যেভাবে ঘিরে ধরে, মনে হয় উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, শুধু রাতে নয়, দিনেও মশায় কামড়ায়। কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। মশার যন্ত্রণা বন্ধ করতে সিটি করপোরেশনের আন্তরিক পদক্ষেপ দরকার।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের অক্সফোর্ড মিশন রোডের বাসিন্দা ইউসুফ শিকদার বলেন, আগে দেখতাম সন্ধ্যা হলে মশার উৎপাত শুরু হয়। এখন দিন-রাত সমান তালে মশার যন্ত্রণা। তবে সন্ধ্যার পর তা চরমে পৌঁছে। তখন কয়েল বা স্প্রে ছাড়া ঘরে থাকা যায় না। মশক নিধনের কোনো কার্যক্রম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সাবেক সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, নগরীর সবখানেই মশার উৎপাত। মশা নির্মূলে জোড়ালো ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।
সাগরদী বিড়ি ফ্যাক্টরি এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক মনির গাজী বলেন, তার এলাকায় মাঝে মধ্যে স্প্রে করতে লোক যায়। কিন্তু স্প্রে করে আসার পর মশা আবার বেড়ে যায়। কী দিয়ে স্প্রে করে তা তো আমরা সাধারণ মানুষ জানি না। তিনি বলেন, যেসব জায়গায় মানুষের চলাচল সেখানে স্প্রে করে। অপরিচ্ছন্ন জায়গা বা মশার উৎসস্থলে স্প্রে করে না। এতে করে মশা কোনভাবেই কমচ্ছে না।
খান সড়ক এলাকার গৃহবধূ নাসিমা আক্তারেরও একই অভিযোগ। তার বাসার পেছন থেকে সাগরদী খালের একটি অংশ রয়েছে। ওই খালের দুই পাড় ভরাট হয়ে সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ময়লা আটকে থাকে। ওই ময়লায় জন্ম নিচ্ছে মশা।
পরিবেশ রক্ষা ও সমাজকর্মী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকার ডোবা, নালা, ড্রেন, খাল, মজা পুকুর থেকে শুরু করে বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ফগার মেশিন অথবা হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে ওষুধ ছিটানো হলে ওই সব স্থানে থাকা মশার লার্ভা ধ্বংস হবে।
তবে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিমের দাবি, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ২২৫টি মহল্লায় ১১টি ফগার মেশিন ও ৮০টি হ্যান্ড স্প্রে নিয়ে তাদের ১০০ জন কর্মচারী কাজ করছেন।
সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মনজুরুল ইমাম বলেন, এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই ট্রাভেল পেশেন্ট। আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায়। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। সেখান থেকে অন্যরা সংক্রমিত হয়েছেন।
প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, নগরীর খাল, ড্রেন, জলাশয়, ডোবা, নালা, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কাজ চলমান রয়েছে।