কাজান এরেনাকে বিশ্বকাপের ফেবারিটরা ‘অভিশপ্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারে এবার। একের পর এক দর্শক নন্দিত এবং জায়ান্ট ফুটবল দলগুলোর বিদায় করার জন্য বিশ্বকাপের শুরু থেকে পণ করে নিয়েছে রাশিয়ার অন্যতম এই ভেন্যুটি। না হয়, এখানে এসেই কেন একের পর এক জায়ান্টরা হোঁচট খাবে?
প্রথমে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, এরপর বিশ্বকাপে সবচেয়ে দর্শক নন্দিত এবং বিশ্ব সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা এবং সর্বশেষ নেইমারের ব্রাজিলকে বিদায় করলো এই কাজান এরেনা।
রাশিয়া বিশ্বকাপ ‘অঘটনে’র এটা শুরু থেকেই। বড় দলগুলো যেভাবে একের পর এক হোঁচট খেতে শুরু করেছিল, তাতে এই বিশ্বকাপের ভাগ্যে কী লেখা, সেটা কেউ বলতে পারছিল না। গ্রুপ পর্বের শেষ দিকে এসে কোনো না কোনোভাবে ফেবারিটরা উঠে আসছিল। যে কারণে, প্রথম ম্যাচ হারলেও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির আশা ছিল দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে তারা।
কিন্তু কাজান এরেনায় সব উল্টে গেলো। জার্মানি গোল বের করা তো দুরে থাক, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে উল্টো দুটো গোল খেয়ে গেলো। ১৯৩৮ সালে সর্বশেষ প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল জার্মানি। ৮০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে দক্ষিণ কোরিয়ার মত দলের কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো জার্মানদের। অথচ, এই কোরিয়ার সঙ্গে ২০ ম্যাচ খেললে, ২০টিতেই জিতবে জার্মানি।
‘বলি’ দেয়ার জন্য কাজান এরেনার অপেক্ষা যেন আরও বেড়ে গেলো। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচটিই কাজান এরেনায়। মুখোমুখি আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। দুটিই ফেবারিট দল। নিশ্চিতভাবেই একটি দলকে বিদায় নিতে হবে। দুটিকে তো আর বিদায় করা যায় না। যে কারণে সবচেয়ে ফেবারিট আর সমর্থকপুষ্ট দল আর্জেন্টিনাকে বেছে নিল কাজান। হারিয়ে দিলো ৪-৩ গোলের ব্যবধানে।
কাজান এরেনার আশে-পাশে প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছিল বিখ্যাত ফুটবলারদের। সেখানে সবচেয়ে বেশি শোভা পাচ্ছিল জার্মানি আর আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের ছবি। মেসি, ক্রুস, মুলারদের। সঙ্গে ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরও।
রোনালদোর পর্তুগালের খেলা কাজান এরেনায় না থাকলেও, সেই ম্যুরালই যেন অভিশপ্ত হয়ে উঠলো। দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় করে দিলো রোনালদোকে। বিদায় নিলো পর্তুগাল। মেসির সঙ্গে বিদায় নিলেন রোনালদোও।
বিশ্বসেরা তারকাদের মধ্যে মেসি-রোনালদো ব্যর্থ। বাকি ছিলেন নেইমার। তিনি ব্রাজিলকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। জিতবেন শিরোপা। ব্রাজিলকে উপহার দেবেন হেক্সা। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য, কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমারদের খেলা পড়লো অভিশপ্ত কাজানেই। যে ভেন্যুটি ফেবারিটের বিদায় ঘটাতেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
ধারা অক্ষুণ্ন রাখলো কাজান এরেনা। ফেবারিটকে টিকতে দিলো না। বেলজিয়ামের কাছে ব্রাজিলকে হারিয়ে দিলো ২-১ গোলের ব্যবধানে। ব্রাজিল এতগুলো গোলের সুযোগ পেলো। তার অর্ধেক হলো, কমকরে ৫টা গোল হয়। শুরুতেই বল বারে লেগে ফিরে আসা, পওলিনহো ফাঁকা পোস্ট পেয়েও শট করতে না পারা, কৌতিনহো, ফিরমিনো, হেসুসরা ফাঁকা পেয়েও সঠিকভাবে শট নিতে না পারা, এগুলো সবই দুর্ভাগ্যের ফসল। হয়তো বা অভিশপ্ত কজান এরেনারও কোনো কারসাজি!
শেষ পর্যন্ত জার্মানি, আর্জেন্টিনার মত ট্র্যাজেডির শিকার হয়েই হেক্সা মিশনের সমাপ্তি টেনে দিতে হলো তিতের ব্রাজিলকে। নেইমারকেও পথ ধরতে হলো মেসি-মুলার-আগুয়েরোদের মত। অভিশপ্ত কাজান এরেনায় এবারের বিশ্বকাপের আর কোনো ম্যাচ নেই। না হয়, এরপর কোন জায়ান্টকে বধ করতো, সেটাই ছিল দেখার।