গত ৩ জুলাই ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজিতে ৭৫ টাকা কমিয়ে ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করে ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নেন ব্যবসায়ীরা।
এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই বরিশালে আসেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় এলপি গ্যাসের বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন।
এসময় ব্যবসায়ীরা তাদের নানা সমস্যার কথা বিইআরসির চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন। তবে কোনো যুক্তিতেই গ্যাস বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না বলে নির্দেশ দেন নূরুল আমিন। অথচ বাজারে আগের বেশি দাম ছাড়া গ্যাস মিলছে না বাজারে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হয় ১ হাজার ৮০ টাকা দরে। কোম্পানি ও পরিবেশকেরা না কমালে বাজাওে কিছুতেই দাম কমানো সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশ করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, বিইআরসির চেয়ারম্যান ঢাকায় গিয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। মাঠ পর্যায়ের খুচরা ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক দাবির ব্যখ্যা না দিয়ে সরকারি দামে গ্যাস বিক্রির নির্দেশ দিয়ে চলে গেছেন। এতে গ্যাসের দাম কমবে না।
নগরীর পলিটেকনিক মোড়ে নিলা স্টোরের মালিক মিলন জমাদ্দার বলেন, কোম্পানির কাছ থেকেই বাড়তি দামে কিনে সরকার নির্ধারিত দামে সিলিন্ডার বিক্রির সুযোগ নেই।
একই অভিযোগ করেন মুন্না ষ্টোরের মালিক বেল্লাল হোসেন। কোম্পানির কাছ থেকে যে দামে গ্যাস কেনা হয়, তাঁর চেয়ে ৫০ টাকা বাড়তি বিক্রি করা হয়। যদি কোম্পানি কমিয়ে নেয়, সেক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে দাম কমে আসবে।
তবে গ্যাসের বাড়তি দাম নেয়া গ্যাসের পরিবেশক ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলে দাবি করেছেন ভোক্তারা।
খোরশেদ আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯৯ টাকা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ১হাজার ১৩০ টাকা।
তিনি বলেন, বাড়তি দাম নিলেও ব্যবসায়ীরা কোনো রসিদ দিচ্ছে না। এসব তদারকি করারও কেউ নেই।
একই অভিযোগ করে আরমান হোসেন ক্রেতা বলেন, সম্প্রতি পত্রিকায় দেখলাম বরিশালে বিইআরসি চেয়ারম্যান সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কোন নির্দেশে বাজারে প্রভাব পড়েনি। তাহলে সরকারের এ দাম নির্ধারণে লাভ কী?
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জেলার সভাপতি হিরন কুমার দাস বলেন, আগেও যখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখনও বাড়তি দামে ভোক্তারা গ্যাসের সিলিন্ডার কিনেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন
বিইআরসি দাম নির্ধারণ করে দায় সেরেছে।
এ দামে ভোক্তারা কিনতে পারছে কি না এবং বাজারে দামের বিষয়টি কে তদারক করবে, তা নিয়ে বিইআরসির স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী দাস বলেন, মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে কোন লাভ হচ্ছে না। কোম্পানির দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে খুচরা পর্যায়ে দাম কমে আসবে।